শিল্প-সংস্কৃতি

আজ আশি দশকের শক্তিমান কবি আনোয়ার কামাল এর ৫৭ তম জন্মদিন

কবি আনোয়ার কামাল আশির দশক থেকে নিরলসভাবে কবিতা নিয়ে কাজ করে চলেছেন। প্রগতিশীল চিন্তা চেতনার কবি প্রগতি লেখকসংঘের কেন্দ্রিয় কমিটির সেমিনার ও অনুষ্ঠান সম্পাদক। তাঁর কবিতায় প্রেম, দ্রোহ, মাটি আর মানুষের এক ধরনের ঘ্রাণ পাওয়া যায়। তিনি শ্রেণি বৈষম্যের বিরুদ্ধে তাঁর কবিতায় তুলে ধরেন মানব মুক্তির জয়গান। সেই সাথে তাঁর কবিতায় প্রাণের স্ফূরণ রয়েছে, আর শ্রেণিবাদের বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা। কবি আনোয়ার কামাল-এর কবিতায় মাটিবর্তী মানুষের জীবনের সরল আখ্যান নানামাত্রিক বোধের মিশ্রণে মূর্ত হয়ে উঠে।
২০২০ সালের বই মেলায় তাঁর দুটো গ্রন্থ বেরুচ্ছে। ‘কিছু মায়াবী ক্ষত’ কবিতাগ্রন্থ ও ‘জীবনানন্দ দাশ ও অন্যান্য’ প্রবন্ধগ্রন্থ।

আনোয়ার কামাল এর জন্ম ২ জানুয়ারি ১৯৬৩ পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলায়। বাবা : মো. আলতাফ হোসেন, মাতা : সনিয়া খাতুন। বাবার চাকরির সুবাদে কবির দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে। ছাত্রজীবনের সিংহভাগ সময় কেটেছে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলায়।
ছাত্রজীবন থেকেই সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সাথে যুক্ত। কবিতা, ছোট গল্প, ফিচার, প্রবন্ধ, কলাম, সাহিত্য আলোচনা লিখেন দেশ বিদেশের অনলাইন পোর্টাল, বিভিন্ন ব্লগ, লিটলম্যাগ এবং জাতীয় দৈনিক ও সাপ্তাহিক সংবাদপত্রে। তবে তাকে সাহিত্য অঙ্গনে সবচে’ বেশি আগ্রহ সৃষ্টি করে কবিতা। গল্প লেখাতেও তিনি সমান আগ্রহী।

প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: ‘নৈঃশব্দ্যের রাত্রিদিন’, ‘সোনালি নির্জনতা’, ‘বিমূর্ত মগ্নতা’, ‘কুড়িয়ে পাওয়া পঙ্ক্তি’, ‘সুদূরিকা ও আমার মনপাখি’, ‘ফসিলে জমানো চিহ্ন’ ‘কিছু মায়াবী ক্ষত’।
প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ: ‘রোদেলা দুপুর’, ‘সেই রাতে কালো বিড়ালটি এসেছিল’।
প্রকাশিত প্রবন্ধগ্রন্থ: ‘জাদুবাস্তবতা ও অন্যান্য’, ‘কবি ও কবিতা নিয়ে কিছু কথা’, ‘লালন শাহ ও অন্যান্য’, ‘জীবনানন্দ দাশ ও অন্যান্য’।
শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ: ‘ভূতের বাড়ি দেখতে গিয়ে’।

সম্পাদনা : ‘শত প্রেমের কবিতা’, ‘বৈশাখে রচিত পঙ্ক্তি’, ‘ভালোবাসার ১০০ রঙ’, ‘এই সময়ের গল্প’, ‘বৈশাখে রুদ্রশাখে’, ‘মঞ্জরি’।
সম্পাদনা করেছেন সাহিত্য পত্রিকা ‘নোঙর’। বর্তমানে সম্পাদনা করছেন সাহিত্য বিষয়ক ছোটকাগজ ‘এবং মানুষ’। এই বহুমাত্রিক লেখক রাজধানী ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ব্যক্তি জীবনে তাঁর স্ত্রী গৃহিণী। তাঁদের দুই কন্যা রয়েছে।

সম্মাননা: স্বরূপ সাহিত্য সম্মাননা (২০১৫), বিন্দুবিসর্গ পদক (২০১৯)।

তাঁর কবিতার প্লটে ঘুরে আসা যাক,

কবিতা ১
যে অংক এখনও মেলেনি

গভীর নিমগ্নতায় ছেলেটি জটিল অংক মেলানোয় ব্যস্ত
রাতের খাবার শেষ হয়ে যাবে— ক্যান্টিন বন্ধ হয় হয়
তবুও ছেলেটি অংকের নেশায় মদমত্ত—
পাশে মোবাইল চার্জার উত্তাপ নিতে থাকে
ছেলেটি অংক মেলানোর নেশায় ব্যস্ত
টেবিলের পাশে পথের পাঁচালী
রবীন্দ্রনাথ জেগে আছে শিয়রে
তবুও ছেলেটি চটজলদি অংকের জট খুলতে চায়—
সমীকরণে গভীর নিমগ্নতায় ডুবে থাকে।

তারপর— ডাক পড়ে বিচারের এজলাসে
অতঃপর ইতিহাস হয়…”

কবিতা ২
হংসমিথুন

আমি তোমার স্তনে মুখ ডুবিয়ে শ্বাস নেব
তারপর তোমার ঠোঁটে এঁকে দেব আজন্ম দাগ
এঁকে দেব ভালোবাসার রূপালি বাসর।

যতদিন বেঁচে থাকবো এই সবুজ অরণ্যে
ভালোবাসার বীজ বুনে দেব তোমার জরায়ুতে
কামোত্তেজনায় লেপ্টে থাকব দুজনে গভীর আবেগে

তুমি স্বচ্ছ জলে সাঁতরে জলকেলি খেলবে
আমরা হংসমিথুন হয়ে গা ভাসাবো–
গহীন সবুজ ঘেরা লেকের নীল জলে।”

কবিতা ৩
এখনও শুনতে পাই

তার সাথে পথেই দেখা হয়েছিল
হয়তো কোনো জনাকীর্ণ রাজপথে—
এখন সে কথা আর মনে পড়ে না
শুধু মনে পড়ে লোকটি মন্ত্রের মতো
কিছু বাক্য উচ্চারণ করে দ্রুত চলে যায়

আমি আজও লোকটিকে খুঁজে ফিরি
আজও তার জাদুমন্ত্র কানে বাজে…”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *