কবিতা

রুদ্র সুশান্ত।। গুচ্ছ কবিতা

জীবননামা

সুঁতোর গহ্বরে বাঁধা আমাদের জীবন,
বৌ রোজ নিয়ম করে ফুল গাছে জল দেয়, শিমের চারাগুলো বেড়ে উঠছে লকলকে, শ্যাওলা দেয়ালে চুমো দিয়ে সুগন্ধি ছড়ায় অর্কিড পরিবার।
সূর্য প্রাতঃকালে করে সম্ভাষণ।

আমাদের মন-মগজ, শুদ্ধ চৈতন্যভাব, বাল্মীকিরস, কাব্যিক সহযোগিতা, জনপদ সব দিয়ে একটা সংসার গড়েছি।
নৌকার মাঝি ঢেউ তুলে পাঁজর থেকে পাঁজরে ঘুরে, মানচিত্রে থাকেনা কোন মেরু,থাকেনা কর্কটক্রান্তিরেখা।
অথচ এখানেই ঘুরে ঘুরে আমরা জীবন পার করে দিয়েছি।

সমর্পণ

তোমাকে ভালোবাসার দায় মাথায় বিঁধে জন্মাবো আবার,
একবার-বহুবার, ঘুরে ঘুরে আসি তোমাতে জন্ম নেবার।
পৃথিবী দেখেছে পার্থিব শরীর আমি দেখেছি সুদীর্ঘ প্রার্থনা,
নিজেতে মিশে তোমাকে খুঁজি পেলে জন্মাবো আর না।
হোক তবে আশা-নিরাশার অন্তিম প্রদীপ মোহ-জ্বালা,
তোমার পায়ে নতজানু হয়ে সাজাবো স্বর্গের মালা।

আমরা উলঙ্গ লাশ

এক উলঙ্গ বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে শ্মশানকোণে–
কেউ নেই, নেই কোন আত্মচিৎকার, বিমর্ষ কোন বেদনা নেই। 
মন্দিরে নেই আলোকবাতি, প্রদীপের উজ্জ্বল শিখা নেই, একটি অবলা পশু ঝলঝল করা চোখে আকাশপটে দৃষ্টিরত।

শ্মশানভূমি শ্মশ্রুহীন,  ভিখারী বা মহারাজ,  শিব কিংবা রাষ্ট্রনেতা শ্মশানঘাটে শ্মশানকালীর ত্রিলোচনে সবার-ই একই দৃশ্যায়ন।  অগ্নিকোণের ঠাঁই দাঁড়ানো কুঠিটা নড়বড়ে ভেঙ্গে গেছে, শিরশির বাতাস বইছে হালকা।

বৃদ্ধের বাঁ হাতে আগুন ডান হাতে জল
রক্তাক্ত চক্ষু, জিজ্ঞাসু অবিরল।
কেউ খবর রাখেনি, আরেকটি লাশ আসবে, নিয়ম ভেঙে অনিয়মে পুড়ে যাবে অঙ্গার। শেষ আত্মচিৎকারের আত্নহুতি হবে উলঙ্গ বৃদ্ধে বাঁ হাতের আগুণে। 

আমরা সবাই লাশ, ব্যবধান শুধু- কোন লাশ কথা বলে কোনটা বলেনা।
আমাদের লাশের অন্তিমযাত্রায় বৃদ্ধের জলে রবে ছলনা।
তুমি পুড়ায়ে দিও অন্তরভূমি, 
আপাদমস্তক শ্মশানে চুমি।
ভুলে যাবো তবে বৃদ্ধের ইতিহাস
এটাই  একজীবনের প্রথম সর্বনাশ। 

তবে কি আমিও প্রেমিকা হতে চলেছি

বেহিসেবি জোছনার প্রলেপে হয়তো তোমার চোখের রঙ আঁকা, আজো রোজ রোজ ভুলভাল চিত্রে ফুটিয়ে তুলতে চাই- একটি মুখ।

আমার দেখা হয়নি সে মুখ, বুলি বিনিময় হয়নি পক্ষান্তরে, তবুও বুকের ভেতর দুমড়েমুচড়ে ক্যান শুধু সে মুখখানির প্রতিলিপি ভাসে? তবে কি আমিও প্রেমিকা হতে চলেছি? 

আমার বিনোদ সখা- প্রান্তরে প্রান্তের ঠোঁট ছুঁয়ে নোনাজলের সংকল্পিত হিজল বনে আমাকে দেখা দিও নির্জনে, তোর প্রকোষ্ঠে মিশে একাকার হয়ে রবো জন্মজন্মান্তরে।

আমার আকুলতা, ব্যগ্রতার  ভাবনা সর্বক্ষণ উৎকণ্ঠিত তোমার একান্ত সঙ্গ পাবার অভিপ্রায়ে। শো শো বাতাস আমাকে কতোটা ব্যাকুল করছে প্রেমিকার রুপ প্রকাশিত না হলে আমি বুঝতেই পারতাম না। 

তবে কি আমিও প্রেমিকা হতে চলেছি?  
ধন্যবাদ! আমাকে নারীরত্নের যৌবন রুপ দেয়ার জন্য- হে নরোত্তম সখা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *