কবিতা

গুচ্ছ কবিতা।। স্নিগ্ধা বাউল

রূপকথা

মন কান্দে
আগেও কাঁনছে
কাঁসার বাসনের ঘটঘটানিতে কান্দে
কান্দে যেন মাগের কুয়াশা
কান্দে মন
না পাইলেই কান্দে ;
এত আসাইরা জল
খড়ের চালে ঝপঝপ পড়ুনি-

কান্দে
রান্দা বাডি শেষ কইরা চোখ কান্দে
এক লগে কান্দে সিথানের বালিশ।

আলোর বীজ

উত্তেজিত শিশ্নের মতো ধেয়ে আসছে চাঁদ
খুবলে খাবে অভুক্ত পাঁজর-
অন্ধকারের ত্রিসীমানা
আলো আসছে আলো –
জন্মের নতুন সূত্র।
সীমাহীন ইতিহাসের বিরদ্ধচারণ
আজ
পূর্ণিমার রাত জুড়ে;
মুঠো ভরতি জ্যোৎস্নার বাকবাকুম শঙ্কা ছেড়ে-
এ ধারে চলে আসো পুরুষ
আলোতে মাখো বিলাস রতি
অন্ধকারে নয়, আলোতে হোক জন্ম কথা।

রূপান্তরিত প্রজাপতি

আমার খুব খরছ করতে ইচ্ছে করে
অসভ্য যৌবনের মতো
ঘাস ফড়িং রেখে বুনো প্রজাপতি আমার পছন্দ
তিতলি তিতলি খেলা;

আমি আকাশ দেখি খালি পায়ে
ভেজা মাটি জাগায় মেঘের মায়া
বিকেলের মাঠে ফিরে যাই আমি
আশ্বিনের ঘাসের কাছে, সবুজ রঙের
পূজার জামার মতো জড়াই সমস্ত;
বললে প্রজাপতি ভালোবাসো-
রঙ মেখে মেতে উঠবে আঁচলের পর-
সেই থেকে আমি বেখরচা;
কেবল খোলস ছেড়ে চলে গেছো তুমি
মথের রাজ্যে;
বেহায়া আকাশ আমার ঢেকেছে
ছাদের সাম্রাজ্যে।

পরিযায়ী

ফিরতি পথের অর্ধেক কেবল পরিচিত
কিছু পথ আড়াল
কিছু পথে হেঁটে যায় মৃত হরিণের মায়া
এত মায়া চোখ জ্বলে যায় –
পরাজিত ব্যবধানের দুরত্বে কিছু পথ
অমাবস্যার ছায়ায় নিজের দেহ-

অতিক্রম করতে চাই নি কোন পথ
ডাহুক কিংবা ঘাসে ঢাকা ডিমের নীল বেদনিল;
হৃদয় প্রসব করে তবু তারে
দেখায় পৃথিবীর লাভা
অমায়িক মহাশূন্যের কোলাজ রিদম ।

ভেসে আসে মহামায়া পুতলের সামনে
সোনালি ফ্রেমের বিকেলগুলো
পথ জানে আগের পথে
আস্ত মানুষটি মরে গেছে রোদের অভাবে।

আগন্তুক

ঐ শহর টা দেখে নিতাম
মানচিত্রের মতো
ভূগোলের শিহরনে স্কুল বইএর পাতায়
পেন্সিলের ডগায় নিজের ঘরে
ধুপের সন্ধ্যের মায়ায়
নিজের আয়নায়, পরদা সরিয়ে
গোপন জামায়, মেখে রাখতাম নিজেরে
শহরের আদলে বড় হবার বাসনায়;

পা রেখেই ভেবেছি, তুমিও আছো
গন্ধ বা কফির ধোঁয়ায়
উচ্চ ভলউমের গানগুলোতে
নাচিয়ের টুং টাং, রেস্তোরার গোপনীয়তায়;

আচমকা কাঁপে সব
কত বড় হলে কৈশোরের ভালোবাসা খোঁজে
স্মৃতির শহরে তারে;

বাতাস বলে দেয়-
এই শহরে সবাই একা
বেঁচে থাকে পরম্পরায়
মরে যায় ঐতিহ্যে
সে বলে কেউ নাই
ভালোবাসা অপেক্ষার তীব্রতম ফসিলমাত্র।

প্রচ্ছন্ন শীতের ছবি

আজন্ম লালন করি তোমায়
এমন নীরবতায়
প্রথম স্পর্শীত পুষ্পের মতো;
সব ভাঙ্গে
আরও আয়োজনে
নিজস্ব প্রয়োজনে
কোলাহলে আর
আমার নীরবতায়;
কই তুমি-
এখানে ঘন শীত নেমে পড়ার আগে
চলে আসে বেগুনি কুয়াশা
ছুঁয়ে যায়
জং ধরা গ্রিলের বারান্দা;
শহুরে নাবিক আমি আজ
তোমায় ভেবে-
শিশির ছুঁয়ে সূর্য ডুবাই ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *