কবিতা

গুচ্ছ কবিতা।। শিবলী মোকতাদির

বাটুল

দুরন্ত বাটুলের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে লোকটি
একা, আরোপিত অঞ্চলে।
হাস্য-হাহাকার সবকিছু স্তব্ধ ক’রে দিয়ে;
বৃষ্টি হচ্ছে খুব, এলেঙ্গার পরিবেশ পরিচিতিতে।
দূরে নানান সব ডাকনামের মধ্যে মিশে আছে শিশু ও শালিক
আছে ছাগল-সংহিতা, গরু ও গর্ভবতীর তৎপরতা।
ভিজে যাচ্ছে দুইপাশে বিপরীত মেরুর বাস ও ট্রেনের পথচলা

মাঝে বেত, হিজল ও চন্দনের ঝোপের আড়ালে;
কেমন ঝাপসা-অচেনা-অস্পষ্ট স্ত্রীলোকের মতো
ঘটনাচক্রে দণ্ডায়মান এক যোগাযোগ টাওয়ার, যেন বিষবৃক্ষ
সারাগায়ে লেপটে থাকা বাহারি লতাগুল্মের সমাহার
বেশ প্রাচীন আর অতীতের উপযুক্ত বলে মনে হয়।

তুমি যাচ্ছ ট্রেনে, আর আমি বাসে
বহুক্ষণের সমান্তরাল আলাপে হঠাৎই ছেদ পড়লে,
উভয় প্রান্তের সকল যাত্রী ও যাত্রার ঘনঘটা নেমে আসে।
ফিসফিস ক’রে তারা ব্যাধি ও বাঘের ব্যাখ্যা ভুলে;
নির্দলীয় লোকটিকে ভর্ৎসনা করতে করতে
কেউবা ভদ্রাভদ্র উপমার অজুহাতে
কাকপুষ্ট বলে অযথাই রঞ্জিত ক’রে
প্রতিদিন নিজস্ব যাত্রার ভবিষ্যতের দিকে চলে যায়।

কেবল আমর-ই শৈশব, চোরাস্মৃতির আবরণ ভেঙে
ছুটে যেতে চায় হায় রে বাটুল! ভঙ্গি ও ভঙ্গিকারকের কাছে, নীলিমায়…

রুক্ষ

মরুভূমির বালুর ওপরে তপ্ত সৈন্যদল এসেছে প্রচুর
তাদের বিচিত্র গার্ড ও গর্জনে
অহেতুক ভ্রমণ ঋতুতে কাহিনি-কথন পুড়ে যায়
দূরে চিত্রে চিত্রে প্রভুর মৃত্যুতে অশ্ব নিরুপায়।

তবু তৃষ্ণা ও ক্লান্তির আবরণ ভেঙে খনন চলছে অকারণে
পাথুরে খাদের চারপাশে, চলছে সন্ধান।

দূরে, কৃষি খামারের কর্মী ও কোলাহল নিভে যায় ধীরে ধীরে
যথা পড়ন্ত প্রহরে…
চলে গোপনীয়তা, চলে আগত বিদ্যার আনাগোনা,
শুধু রাতকানা রাত্রীর বাতাসে জেগে থাকে,
এলোমেলো ক্যাকটাসে ঝুলন্ত নীল জামা।
মুদ্রা নিক্ষেপে হেরেছি যতবার

যে-মুদ্রা নিক্ষেপে সমাধান সংক্ষেপে আমাকে হারাতে এসে
বাঁধনে দিয়েছ জ্বালা প্রাপ্তিতে এইবেলা অধীনে নিয়েছ হেসে
আমাকে তোমার সাথে বোধের বাড়ানো জাতে করো কী নিবিড় ঘৃণা
রচনার কৌশলে অবসাদে ভরা-দলে আমি বাঁচি তুমিহীনা।

অথচ নির্ধারক পথে ঘুরে প্রতারক নাটকে দিয়েছ আলো
জাদুর প্রবাহ যেন ক্ষণে তাকে চম্কানো মন বলে, এত কালো?
শাসিত নায়ক তার বিগত জটিলতার কঠিন ক্ষমতা আঁকা
বোঝা দায়, মুশকিল চোখ তার অনাবিল ভাবের অভাবে বাঁকা।

এমন মুদ্রা আমি জড় ও জগতগামী করেছি অন্বেষণ
ফল-বিনা তার কাছে উঁচু-নিচু চোরাগাছে বিচারে বিফলে মন
তুমি জয়ী ভাবো এই ভাবে বাঁকা সকলেই শুরু হোক নির্ভয়ে
যেন, প্রকাশ করিতে না-পারি ইঙ্গিতে এ-খেলার পরাজয়ে।

প্রত্যাবর্তন

থম্কে যাওয়া প্রেমের কাহিনি ধরে
বিচিত্র ব্যাখ্যায় ফের এসে দাঁড়িয়েছ
অশ্লীল-গ্রন্থের নায়িকার মতো, সামাজিক সমাচারে।

বিগত বিনয় আর উদাসীন প্রলোভনে
নিকটে উপায় দু’হাতে আঁকড়ে ধরে নিয়মিত লতায়-পাতায়
ছুটে আসো এই বিপন্ন শ্রেণির ধরাতলে।
যেন ঝপ করে নেমে পড়া অচেনা সন্ধ্যায়
বহুদিন পর ফেরত বালিকা তুমি,
শুধু বিবিধ বাঁকের প্রান্তে এসে
কাচুমাচু মুখ করে ভাবো;
কোন পথে সরল কাহিনি নিবেদিত

যেন মাধ্যমিকে ফেল করা বিষণ্ন, লজ্জিত ছাত্রী এক
এই ভেবে অঙ্কুরিত ভয়ে, দ্বিধায়
ধীরে ধীরে দিগন্তে স্পষ্ট হতে থাকো।

আমাদের ধান

যে-ধাতুর সন্ধানে ক্ষমতাবান
পরিণত সুরে ভাসা বিগত গান
বিনীত বচনে তাকে করেছ দান
অজান্তে প্রতিদিন রুপালি ধান।

ধরো ঋতু বারো মাস বর্ষা হোক
ঘটনায় সাধারণ শ্রেণির লোক
গড়ে তোলো তার শত বৃন্দশোক
করো ভুল তবু ধান গণিতে যোগ।

ফুটে থাকা মহাকাল নিদ্রাগত
যদি লিপি আঁকাবাঁকা বেদনাহত
গোত্রে তোমার নাম সীমানা যত
রচিব ধানের রূপ নীরবে তত।

One thought on “গুচ্ছ কবিতা।। শিবলী মোকতাদির

  • মানিক বৈরাগী

    অসাধারণ কবি

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *