মিলু শামস এর কবিতা
১.গল্পটি মেঘা”ছন্ন থাকে
দার্জিলিংয়ের আকাশের মতো
গল্পটি মেঘা”ছন্ন থাকে–
ন্যারেটিভগুলো ছিটকে পড়ে
গোলার্ধের ভেতরে ও বাইরে।
চৈতালী সন্ধ্যায় ডুবে গেলে
পাড়ভাঙ্গা নদী
দল বেঁধে ওড়ে শব্দের শালিক;
পাহাড়ের খাঁজে ইউক্যালিপটাস
রডোডেনড্রন মাথা ঠোকে
পাষাণ পঙ্ধসঢ়;ক্তির পায়।
মোৎসার্টের পিয়ানোর সোনাটা
খেলে গেলে
ভেজা মধ্যরাতে
প্রার্থনার মতো প্রেম শুধু জেগে থাকে
কাহিনীর হৃৎপিণ্ড ও শরীরে।
গল্পটি মেঘা”ছন্ন থাকে–
পেরিয়ে যেতে যেতে
জীবনের ব্যথাতুর জলাশয়
বনভূমি আর সমুদয় ঊষর প্রান্তর।
২.নিরুপায় বৃত্ত
এ এক প্রবল নেশার ঘোর জানি
বিষাদ বিপন্ন–
হুইস্কির গ্লাসে দীর্ঘ চুমুকের মতো
কিছুতেই ফেরা যায় না
ছাড়া যায় না পিছুটান;
নিরুপায় এ চক্রের পিঠে
উদ্ধভ্রান্ত যাত্রাশেষে অপেক্ষায় নেই
কোনো সমতল ভ‚মি অথবা
সবুজ টিলার পাশ ঘেঁষে চলে যাওয়া
মায়াময় আঁকাবাঁকা পথ
নিশ্চিত জানি–
দীর্ঘ শীতরাত শেষে
অপেক্ষায় নেই উষ্ণ কুটির
আলোকিত ফায়ার প্লেস।
তবু দুর্দান্ত নেশার ঘোরে
প্রহরগুলো ছাপিয়ে যাওয়া বুঁদ হয়ে
অপরূপ কষ্টের সুধায় নীল হওয়া,
যেন বেঠোফেনের মূর্ছনা–
বিমূর্ত বিভায় কেঁপে উঠি
ভেসে যাই আমরা
ভেসে যাক আমাদের রাজ্যপাট।
৩.কবির সাক্ষাৎকার
কালবোশেখি মেঘ থেকে অবিরাম ঝরে পড়া
রক্ত বৃষ্টি দেখে
পদ্যের ভাব আসে তার–
ধানমÐির ক্যাফেতে
আরিয়ানা গ্রান্ডের গান আর
কাপুচিনোর ধোঁয়া ওঠা মগে
বিহŸল হাত অক্ষর বিন্যাস করে
আইফোন ছুঁয়ে;
রক্তের ফোঁটায় টোল খাওয়া লেকের জল
স্মৃতি উপচে টেনে আনে
কবেকার প্রেয়সীর মুখ।
প্রেমের কবিতা লেখার দুর্দান্ত আবহে
টপাটপ লেখেন
গুটিকয় মূল্যবান প্রেমপদ্য।
‘এই উড়োঝড়, রক্তস্নাত লেক
প্রেম ছাড়া অন্য কী ভাব আনে
আপনার মনে?’
সাংবাদিকের প্রশ্ন
দেবশিশুর পবিত্র হাসিতে
উদ্ভাসিত করে তাকে–
‘প্রেমই আরাধ্য কবির, নারীর শরীর
যৌনতা সঙ্গম ইত্যাদি…
রক্ত বৃষ্টির কেমিক্যাল রিয়্যাকশন
বলা যায়, রিফ্রেশমেন্টও।’
‘তাহলে ঝড়া”ছন্ন বৃষ্টিময়
এই আবহ নির্মাণের কেমিস্টগণই
নব্য কবি?’
‘বলতে পারেন, গবেষণাগার
নিয়ন্ত্রণ তারাই করেন
সুতরাং এমন সমীকরণ
টানা যায়।’
সাংবাদিকের প্রশ্নবান থেকে মুখ ফেরান
এবার তিনি
তন্ময় ভাব এনে চেহারায়
লিখে যান–
রক্তবৃষ্টির কেমিক্যাল রিয়্যাকশন
সঙ্গম ও যৌনতা মিশ্রিত
প্রেমপদ্য নিরবধি।
৪.কুয়াশার চিত্রপট
তোমার মনে পড়ে অনিমিখ?
একদিন আমরা দাঁড়িয়েছিলাম
রাধাচ‚ড়া রঙ্গন আর মাধবীলতায় ঘেরা
জলপুষ্পর ধারে;
একথা সে কথার পর
পরস্পর ঠোঁটে রাখলে ঠোঁট
কোত্থেকে এক রূপকথার পরী
খিল খিল হেসে
নাচিয়ে দিয়ে গেল বনভূমি।
গাছগুলো এ ওর গায়ে ঢলে পড়ছিল
প্রভাতকালীন উচ্ছ্বাসে;
পাহাড়ী বাতাস খান খান হয়ে
ছড়িয়ে পড়ল প্রাঙ্গণে আর
কুয়াশার ধোঁয়া ওড়া সন্ধ্যার মতো
কী এক বিষণ্ন ব্যাকুলতায় রাধাচূড়া রঙ্গন
মাধবীলতারা সুগন্ধ ছড়ালো এমন যে
আমরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করি
দূরের দিগন্তে পাতি কান
তারপর হৃদয়ে হৃদয় স্পর্শ করে
বিহŸল হই, কী আশ্চর্য
সুগন্ধীর উৎস তো এই!
সেই প্রথম আমরা জেনেছি
ভালবাসার সংজ্ঞা ও সমীকরণ
তোমার মনে পড়ে অনিমিখ?
