গদ্য।। বেশ্যালয়ের বনলতা।। জাকির তালুকদার
বেশ্যালয়ের বনলতা?
যদিও তার পতিতাগমণের কথা শোনা গেছে। তবে তা দিল্লীর রামযশ কলেজে অস্থায়ী চাকুরির সময়। হয়তো গিয়েছেন নিতান্তই দেহজ কামতৃষ্ণা মেটানোর জন্য। অথবা হয়তো না-দেখা এক বিশাল নারীগোষ্ঠীর গোপন অথচ প্রকাশ্য জীবন চোখে দেখতে, হয়তো ছুঁয়ে দেখতেও। এতকিছু ভাবার অবকাশ আকবর আলী খানের ছিল না। পণ্ডিত এবং বুদ্ধিজীবী হলেও শেষ পর্যন্ত আমলাই তো ছিলেন তিনি। রাষ্ট্রের রাজস্ব আয়ের একটি খাত বেশ্যাদের দেহব্যবসা। তাই হয়তো নাটোরে চাকুরিসূত্রে এসে পতিতালয়ের দিকে দৃষ্টি পড়েছিল তার। বলেছেন নাটোরের পতিতালয়টি ছিল বিশাল। কিন্তু বলেননি কী রকম গঠন ছিল সেই পতিতালয়ের। দালান ছিল কি? মনে হয় না। খড়ের চালা, দড়মার বেড়া আর বাঁশের খুঁটির ঘরের চাইতে উন্নত কিছুই ছিল বলে মনে হয় না। পরিবেশ যথারীতি অস্বাস্থ্যকর। সেখানে রোমান্টিক বাসিন্দা থাকার আশা করা কি যায়? বনলতা সেনের মতো? তারপর ধরুন কলকাতা-নাটোরে আসা-যাওয়ার খরচের কথা। দার্জিলিঙ মেইল ট্রেনের তৃতীয় শ্রেণীর কামরায় ১১ টাকা ভাড়া দিয়ে এসে নাটোরের বেশ্যাপল্লীতে যাওয়ার সঙ্গতি কি ছিল জীবনানন্দের? তখন নাটোরে হোটেল-সরাইখানা থাকার কথা নয়। তাহলে উঠতেন কোথায়? খেতেন কোথায়? সবমিলিয়ে যদি তিনদিন ধরা হয় প্রতি ট্রিপ, সেই খরচের টাকার সংস্থান জীবনানন্দের ছিল? ছিল না। বাড়ির বাজার করার জন্য স্ত্রী লাবণ্য দাশকে পাড়ার থিয়েটারে ৫ টাকা সম্মানী নিয়ে অভিনয় করতে হতো। তাহলে নাটোর ট্রিপের খরচ জীবনানন্দকে কি ভূতে জোগান দিত? মোটা বুদ্ধির বুদ্ধিজীবীরা এবং কবিতা না-পড়া লেখাপড়া জানা মানুষরা কবিতা নিয়ে না ভেবে কবিতায় উচ্চারিত নাম নিয়ে বেশি মেতে ওঠেন। বনলতা সেন সেই অনন্ত হাইপ। অথচ বুঝলে জানতেন যে ‘বনলতা সেন’ কোনো প্রেমের কবিতা নয়। মানবজাতির অন্তহীন বিবর্তনের পথচলার কবিতা। কোনো ব্যক্তিমানুষ হাজার বছর ধরে পথ চলতে পারে না। পথ চলছে মানবজাতি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম। বনলতা সেন কোনো ব্যক্তিমানবী নয়। কোনো জায়গায় হয়তো কোনো জনগোষ্ঠীর কয়েক বছর বা কয়েক শত বছর স্থিত হয়ে নিজেদের তৈরি শান্তির নীড়ের নাম। জীবনানন্দ স্মরণের সাথে সাথে সেই লক্ষ লক্ষ গবেষক এবং একটিমাত্র কবিতার পাঠকদের চিন্তার অগ্রগতি কামনাও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকুক। শুভ কাব্যপাঠ।
