অণুগল্প।। সুহৃদ।। ফরিদা রানু
তাকিয়া সমুদ্র রঙের একটি মগ নিয়ে আয়েশ করে কফি খাচ্ছে। বাহ্যিক দিক থেকে আয়েশ মনে হলেও ভেতরের দীর্ঘশ্বাস এবং তোলপাড় করা দুঃখ মূলত স্বাভাবিক চুমুকগুলোকে ব্যাহত করছে। কফির স্বাদ অনুভব করতে দিচ্ছে না তাকে লাল লাল কৃষ্ণচূড়া। সাত বছর আগে ঠিক এমনি করেই গাছ ছেঁয়েছিল রক্তবর্ণের কৃষ্ণচূড়ায়। সবুজ পাতার চেয়ে লাল ফুলের আধিক্য হাওয়ায় যেন আগুন লেগেছিল মনে।
জীবনে প্রথম কোন বন্ধুর সাথে সিএনজিতে উঠা। হঠাৎ নামা বৃষ্টির ফোটায় ঘোলাটে হয়ে যায় স্বচ্ছ কাঁচের স্যাশে। চোখগুলো তার ভিজে ওঠে। ভিজে যায় কপোল আর মেখে যায় কাঁজল। শাহরিয়ার খুব কাঁজল পছন্দ করতো। প্রথম যেদিন ডাচে পাশাপাশি এক বেঞ্চে বসলো সেদিন অনেকটা অভিমান করেই বলে ফেললো-আপনি কেমন মেয়ে?
একটা টিপতো অন্তত পড়তে পারতেন!
মিনমিন করে উত্তরে বললাম -আমি আসলে এরকমই!রস কষ হীন। সেখান দেহের পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চির পূর্ণ যুবক একটি বারের জন্য তার হাত ধরতে চায় নি। হলুদ ওড়নার আঁচল ভরে দিল থোকা থোকা কদম ফুলে।
শ্রাবণ এলে তাকিয়ার মন আকু-পাকু করে। সেবার অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝড়ছিল। সাথে আপেল কুল মাপের বরফ খণ্ড। ঘণ্টাখানেক বৃষ্টিতে ভিজতে দিয়েছিল। প্রতিটা আবেগ বা কথার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সে।’ life is one so live it up’.”It is test innings, you may have sixes or fours but be sure of that you have to play-“
“আঁচলে চন্দ্র ঢেকে সে হয় খুশি পিদিম জ্বেলে”, “ভোরের আলোয় দেখেছি তোমাকে বধুয়ার বেসে এসেছে” বা “জিজ্ঞেস করি দেবে কি পাড়ি হোক যত ঝড় বন্যা” এসব গান তার কণ্ঠে শুনতে শুনতে এক সময় প্রণয়ের ঘনঘটা বাজে।
“শুধু ভালো ড্রাইভ করলে চলবে না পেছন থেকে যেন কেউ ধাক্কা না মারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।”
কখনো মন খারাপ থাকতে দিতোনা। এত মাথা কাজ করে কি করে অবাক হয়ে ভাবতো তাকিয়া। খুব ভাল বন্ধু হয়ে গেল। কোনটা কিভাবে পড়লে ভালো হবে, কোন ক্ষেত্রে কি সিদ্ধান্ত নিতে হবে,পাওয়ার পয়েন্ট তৈরি -সবকিছুই তার কাছ থেকে নতুন করে শিখে নিচ্ছিল! কোনদিন ফোন দিতে দেরি করলে তাকিয়া অস্থির হয়ে যেতে। ধীরে ধীরে আস্থা বাড়তে থাকে। ভরসা করতে শিখে।
সুঠৌল লোমশ হাতটি ছবি তোলার ছলে প্রথম যখন বাহু ঘেঁষে দাঁড়ালো তখন কেঁপেছিল ভীরু মন।
প্রিয় ফুল গুলোর নাম জানতে চাইলে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল -কি হবে জেনে? উত্তরে টোল ফেলে বলেছিল সে -বারে ঘর সাজাতে হবে না বুঝি, যাকে বলে বাসর।
লজ্জায় লাল তাকিয়া সেদিন আর তার দিকে তাকাতে পারে নি। সেদিন স্টাফ কোয়ার্টার নামিয়ে দিয়ে ফিরছিল নরসিংদী। ডেমরা ব্রিজে দশ চাকার ট্রাকের সাথে সংঘর্ষে এসিল্যান্ড নিহত- ব্রেকিং নিউজ।
বসে পড়ল তাকিয়া। ওর পৃথিবীটা ওই দিনই থেমে গেছে।এখনও ওর গন্ধ, ওর নির্দেশনা ওর স্বপ্ন তাকিয়াকে বিভোর করে রাখে। মনে মনে কথা বলে, পাশাপাশি হাঁটে ছাঁয়া হয়ে।
বিয়ে করলে হয়তো জীবনসঙ্গী পাবে কিন্ত এমন ভাল বন্ধু কোনদিনও পাবে না।
হু হু করে কাঁদতে থাকে তাকিয়া।