শুভ জন্মদিন কবি ফকির ইলিয়াস
ফকির ইলিয়াস এর কবিতা
বৃক্ষেরা ফিরবে,মানুষ ফিরবে না
সমতল ভূমির প্রতি মানুষের দখলবৃত্তি
বেড়ে গেলেই বৃক্ষেরা বিপদগ্রস্ত হয়।
পাখিরা নিতে থাকে অন্য প্রদেশে উড়ে যাওয়ার
প্রস্তুতি। যারা পালকবিহীন-
তারা গোণতে থাকে মৃত্যুর প্রহর।
মানুষের যত ঈর্ষা সুউচ্চ পাহাড়ের প্রতি !
আহা! আরেকটু উচ্চতায় পৌঁছা গেল না ;
বলে তারা বদল করে প্রতিযোগিতার হাট ।
লোভীদের হুংকার দেখে হেসে ওঠে
আদিম বাজার সভ্যতা !
কেটে নেয়া বৃক্ষের শিকড় থেকে একসময়
যে প্রশাখা গজায়,
তা দেখে মানুষের ঈর্ষা দ্বিগুণ হয়।
যে মানুষ কোনোদিনই লোকালয়ে
ফিরতে পারবে না-
তার জন্যে বৃক্ষেরা বিছিয়ে দেয়
করুণার চাদর। শীত আসে। ঝরে কুয়াশা-
বল্কলের সেই চাদর গায়ে দিয়েই মানুষ
সংকোচে কাটায় বাকীটা জীবন !
মেঘমাজার
মাথা দুলিয়ে আরাধনা করছে সমুদ্র,
ক্ষুদ্র থেকে অতিক্ষুদ্র
যে পরমাণু ডুবে থাকে মানব-আয়ুতে
অথবা যে বিরহ জেগে থাকে ক্ষেতে ও ক্ষতে
মেঘের জিকিরে কেঁপে উঠছে রাতের মাজার
একটি পাখির ঠোঁটে উড়ে চলছে জগতের ভার।
উত্তোলনের প্রকার জানে-; যার বহনে সাহসী
যারা পথকে পোষ মানায়, হয়ে গ্রহবাসী
বাসপ্রথা সকলের নিয়তি তো নয়
কেউ কাঁদে, কেউ হেসে হেসে খুঁজে পরিচয় ।
মূলত মানুষ তার ব্যর্থতার সমান
বৃষ্টিকেই আমি ভেবেছি আমার চোখ। আর আকাশকে
কর্ণ ভাবতে ভাবতেই কেটেছে আমার অর্ধেক জীবন।
বাকী জীবন যখন বৃক্ষকে দিতে চেয়েছি-
তারা তা গ্রহণ করেনি। বরং বলেছে তোমার এই ব্যর্থতা
অন্য কাউকে দিয়ে দাও। অন্য কোনো গ্রহে বসতি গড়ো।
কোনো বসতিই আমার হয়নি। কোনো ছাদই থাকেনি
আমার মাথার উপর। পাখিরা আমার মাথার ওপর দিয়ে
উড়ে যেতে যেতে বলেছে-
মূলত মানুষ তার ব্যর্থতার সমান।
আর বিরহ হচ্ছে একটি সরল পরিধান। যা- গা দিয়েই
মানুষ আকাশ পেরিয়ে যায়। সমুদ্র পেরিয়ে যায় ।
পাশে এই বৃক্ষনক্ষত্র
কয়েকটি বেলাকে ভাগ করে নিতে নিতে
আমরা পঞ্চম ভ্রমণের গল্প বলা
শুরু করি। একটি নদী শেষ করেছে,তার
যৌথজীবন। একটি অর্ধমৃত নক্ষত্র;
পরাজিত গুহার বুকে
নিয়েছে আশ্রয়। একটি ডানাভাঙা পাখি
ঠিক সেখানেই বসিয়েছে পাহারা
যে পৃথিবী বহুকাল-
পাহারাবিহীন পড়ে আছে, সেও
প্রকাশ করছে তার বিষাদ! পাতায় পাতায়
লেগে আছে ভগ্ন চাঁদের অশ্রু।
কান্না, জীবনের এক অলিখিত
শাসনতন্ত্রের নাম। যারা কেঁদে কেঁদে
পাঁজরে ‘প্রিয় ফিলিস্তিন’- শব্দটি
লিখে রাখে, তারা জানে এই প্রেম
শিরায় শিরায় ঢেউ জাগায়।
যে প্লাবনের কাছে হার মানে,
অনেক বন্য দানব। অনেক অসত্য,
বার বার পদানত হয়।
মানুষের পাশে যখন আর
দাঁড়ায় না মানুষ-
জানি, বৃক্ষগুলো নক্ষত্র হয়েই
অপশক্তির বুকে বিদ্ধ করে ক্রুশ।
আরও কিছু আগুন বহন করার আগে
তোমাকে আরও কিছু আগুন বহন করতে হতে পারে।
আরও কিছু বর্ষার ফুল, বুকে নিয়ে পাড়ি দিতে হতে
পারে গঙ্গার অববাহিকা।আরও কিছু উজানকে সাথে
নিয়ে সাজাতে হতে পারে একটি পার্বণের দুপুর।
অথবা এর কিছুই না করে,হয়তো বাজাতে হতে পারে
একটি পুরনো সেতারে ভৈরবী রাগ।একটি পাখির সাথে
সমসূরে গান করতে করতে যে মেঘ দক্ষিণে যায়-
তাকে বলতে হতে পারে; উত্তরে ফিরো হে সুজন!
তোমাকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকতে হতে পারে তার দিকে,
যে কিশোরীটি প্রতিটি সপ্তাহান্তে অর্ধ-পোড়া মোমবাতিগুলো
কুড়োতে শ্মশানঘাটে ছুটে আসে।অথবা অন্বেষণ করে
নদীতে হারিয়ে যাওয়া প্রিয় জনকের মুখ।