নির্বাচিত ছড়া- ননী গোপাল চন্দ্র দাশ
আনন্দ গান
ঝিরিঝিরি শিশির পড়ে
মেঘের সিঁড়ি বেয়ে,
তমাল সুখে দিন কাটাত
আনন্দ গান গেয়ে।
ভোরের হাওয়া স্নিগ্ধ শীতল
বসি বটের মূলে,
ঢেউ খেলে যায় উথাল পাথাল
পদ্মা নদীর কূলে।
ডিঙি নিয়ে যাচ্ছে ছেলে
শাপলা তোলার ছলে,
আসবে ঘুরে সোনাই দিঘি
দক্ষিণা অঞ্চলে।
পথ ঢেকে যায় মাঠ ঢেকে যায়
ঘন কুয়াশাতে,
কিচিরমিচির পাখির ডাকে
সকাল বেলা মাতে।
ছড়া
ছড়ায় ছড়ায় গল্প বলি
ছড়ায় কাঁদি-হাসি,
মায়ের মুখের মিষ্টি ছড়া
বড্ড ভালোবাসি।
ইচ্ছে হলেই ছড়া কাটি
নাচি তা ধিন ধিন,
ছড়ায় আমি জেগে উঠি
ছড়াতে হই লীন।
অন্ত্যমিলের ঝুলি খুলি
ছন্দে গাঁথি দুল,
ছড়া যেন পাপড়ি মেলা
সদ্য ফোটা ফুল।
যাচ্ছি চলে
পূবের ফাঁকা মাঠ পেরিয়ে
যাচ্ছি অনেক দূর,
বন-বনানী পাহাড়-নদী
সাগর-সমুদ্দুর।
মিনজিরি বন যাই পেরিয়ে
চলন বিলের পথ,
এক পাশে তার রেন্ট্রি-কড়াই
এক পাশে অশ্বত্থ।
মেঘের নায়ে পাল উড়িয়ে
যাচ্ছি রাজার বেশে,
বাতাস আমায় যায় নিয়ে যায়
রংধনুদের দেশে।
ডাগর চোখে কাজল দেওয়ার শখ
এক যে ছিল বাঘ,
ডাগরডাগর চোখ দু’টো তার
বাপরে সে কী রাগ!
যাচ্ছে বাঘে চলে,
দক্ষিণা অঞ্চলে।
রাগ করেছ? কারণটা কী?
যাও না আমায় বলে?
বলল বাঘে এসে,
দুঃখের ভেলায় ভেসে।
জল খেয়ে নেয় ঢক্,
ডাগর চোখে কাজল দেওয়ার
একটুখানি শখ।
কাজল কোথায় পাই?
এই বনেতে নাই।
তাই ভেবেছি শেষে,
যাব চলে বন পেরিয়ে
শখ পূরণের দেশে।
রবি সোনা
ছোট্ট রবি কার্টুন দেখে
খিলখিলিয়ে হাসে,
মা, পিসি আর ঠাম্মি ওকে
বড্ড ভালোবাসে।
দিদুন রাতে ফোন দিয়ে নেয়
রবি সোনার খোঁজ,
চাঁদ-তারারা দুই গালে ওর
চুমু দিয়ে যায় রোজ।
ছোট্ট রবি সবার প্রিয়
সবার চোখের মণি,
গান করে ও, মিষ্টি গলা
মিষ্টি গানের ধ্বনি।
ছড়ার ডানায়
ছড়ায় ছড়ায় গল্প বলি
ছড়ার ডানায় উড়ি,
ইচ্ছে হবো, লাটাই ছাড়া
রঙ বে-রঙের ঘুড়ি।
শাপলা শালুক পদ্ম ফোটে
ছন্দ সুবাস ছড়ায়,
অন্তমিলের অন্ত খুঁজি
সৃষ্টি সুখের ধরায়।
অচিনপুরে
পাহাড় নদী যাই পেরিয়ে অচিন কোন দেশে,
দেখব ঘুরে সকাল দুপুর মেঘের ভেলায় ভেসে।
ফুল-পাখিরা গল্প করে কাটায় সারা বেলা,
‘হাট্টিমাটিম টিমের’ সাথে করব বসে খেলা।
‘কুমড়োপটাশ’ দেখে আমায় নাচবে তাধিন তানা,
হঠাৎ হেসে চমকে দেবে ‘রামগরুড়ের ছানা’।
গপ্পো বলবে, খুলবে আবার যেই ‘ঠাকুরমার ঝুলি’,
রাজা-রানি-রাজকুমারের গল্প কি আর ভুলি?
সিংহ-শেয়াল, রাক্ষস-খোক্ষস, শাঁকচুন্নিদের কথা,
শুনব বসে, নেই তো বারণ, অপার স্বাধীনতা।
গল্প হবে সকাল-দুপুর ‘গোপাল ভাঁড়ের’ সাথে,
পূর্ণিমা চাঁদ, থাকব জেগে, জ্যোৎস্না মুখর রাতে।
‘কাকাবাবু’র সঙ্গে যাব নতুন অভিযানে,
রহস্যদের জট ছাড়াব সত্য খোঁজার টানে।
এমনি করে দিন কাটাব অচিন সে এক দেশে,
পাহাড় নদী যাই পেরিয়ে মেঘের ভেলায় ভেসে।
রোবট মানুষ
তোমরা জানো, আমার সাথে
একটি ছেলে থাকে,
পড়ায় ভালো, গায় সে ভালো,
দারুণ ছবি আঁকে।
ক্যারাত জানে, আর কী জানে?
বাসতে জানে ভালো,
সে আমাদের সুখের প্রদীপ,
ঝলমলানো আলো।
শত্রু এলে রুখে দাঁড়ায়,
সে যে সবার আগে।
মারলে ঘুঁষি ঢিসুম ঢিসুম,
শত্রুরা সব ভাগে।
এক নিমেষে উড়তে পারে,
কাটতে পারে সাঁতার,
প্রয়োজনে যেতে পারে
আমেরিকা, কাতার।
তোমরা বুঝি হচ্ছো অবাক
আমার কথা শুনে?
জন্মেছে সে এই তো সেদিন,
গত বছর জুনে।
এমন ছেলে খুঁজলে পাবে?
নেই তো এমন আর,
সে যে হলো রোবট মানুষ,
দাদুর আবিষ্কার।
স্বপ্ন
ছোট্ট মনের স্বপ্নগুলো
নীল আকাশের মাঝে,
পাখি হয়ে ডানা মেলে
ওড়ে দিবা সাঁঝে।
ছোট্ট মনের স্বপ্নগুলো
ঝুমকো হয়ে ফোটে,
স্বপ্ন দেখো এমন যেন
সত্যি হয়ে ওঠে।
স্বপ্নটাকে বুকের মাঝে
যত্নে লালন করো,
সম্ভাবনায় এপিট-ওপিট
জাপটে তুমি ধরো।
সামনে যাওয়ার মন্ত্র পাবে
স্বপ্ন দেখো যদি,
স্বপ্ন যেন নদীর মতো
বইছে নিরবধি।
মাল্টিগ্রহের বাসিন্দারা
মাল্টিগ্রহের বাসিন্দাদের
মিষ্টি গলার সুর,
মিল্কিওয়ের মাল্টিগ্রহ
আলোকবর্ষ দূর।
ডাকে ওরা পাখির সুরে
সুরের মূর্ছনাতে,
ওদের গ্রহের সকল জীবের
ঐক্য গড়ে তাতে।
গাছগাছালি বলতে পারে
নিজের মনের কথা,
মাল্টিগ্রহের সবার আছে
আবাধ স্বাধীনতা।
দূষণ পীড়ন নেই সেখানে
শুদ্ধ গ্রহের বায়ু,
তাই তো সবাই সুস্থ থাকে
হাজার বছর আয়ু।