রোমানুর রোমান- নির্বাচিত ছড়া
তরমুজ
কিনি গোলগাল,
কেটে দেখি ভেতরটা
টসটসে লাল!
খেতে খেতে গালে মুখে
করি কি যে হাল।
রস পড়ে গাল বেয়ে,
বিড়ালটা থাকে চেয়ে,
তার দিকে ঢিল মারি
তরমুজ খাল।
কিনি ফের কাল!
বাবা দেখে হাতে নিয়ে
বেশ ভালো শাল,
বড়োসড়ো- সবুজ ও
দেহ কাঁচাছাল।
আপু খায় চেটেপুটে,
কেড়ে নেই লুটেপুটে,
পুচকেটা! সেও বলে
নাল নাল নাল।
শিয়াল কেন মামা
শিয়াল মামা হুক্কা হুয়া
ডাকে রাতের মাঠে,
খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে তাই
মন বসে না পাঠে।
ভাবতে থাকি পড়তে বসে
শিয়াল কেন মামা?
রোজ পাখিরা ডালে বসে
করে সা রে গা মা!
মোরগ কেন কক্কু রুক্কু
রাত পোহালেই ডাকে!
চতুর শিয়াল মুরগি খেতে
আড়ি পেতে থাকে।
তাই তো শিয়াল মামা হলে
মোরগ হবে কী?
কী ডাকবে ঠাট্টা করে
প্রশ্ন রেখেছি।
ডাইনোসর
ইয়া বড়ো ডাইনোসরে
পাহাড় বনে থাকে,
পথচারী ভয়ে কাঁপে
ডাইনোসরের ডাকে।
পা ফেললে আস্ত নড়ে
উচুউচু পাহাড়,
বড়ো বড়ো প্রাণী ছাড়া
হয় না তাদের আহার!
আহার করে মানুষ পেলেও
এক নিমিষেই ফিনিস,
ভাবতে পারো ডাইনোসরে
কী ভয়ানক জিনিস!
ভাবলে করে গা ছমছম
দেখলে জানি কী হতো!
ভাগ্যিস তারা অতীতকালেই
হয়ে গেছে নিহত।
বিলুপ্ত হয় অতীতকালেই
এই পৃথিবীর বুক থেকে,
তাই তো আমরা বেঁচে গেছি
ডাইনোসরের মুখ থেকে!
ইচ্ছে ডানা
ইচ্ছে পাখি মেলেছে ডানা
মনের জোরে এসে,
পাখির এখন উড়তে মানা
নীল পরীদের দেশে।
ইচ্ছে ডানা তা মানে না
দেখবে ঘুরে পরী,
হয়নি দেখার সময়টা তাই
এখন কি যে করি!
পড়ে যাবে পাখি যদি
ছোট্ট ডানায় ওড়ে,
ভীষণরকম ব্যথা সে তো
পাবে বাহুডোরে।
ইচ্ছে পাখির প্রশ্ন মনে
ছোট্ট হলাম কবে?
সময় এলে সব আশা তো
পূর্ণ সবি হবে।
মায়ের ভালোবাসা
আম গাছেতে আম ধরেছে
জাম গাছেতে জাম,
তুই যে আমার সোনা মানিক
লক্ষ কোটি দাম।
দাম দিয়ে তো যায় না কেনা
নাড়ী ছেড়া ধন,
মায়ার বাঁধন নাড়ীর টানে
ভালোবাসার ক্ষণ।
তাই তো সোনা বাসবো আমি
ভালো ততক্ষণ,
থাকবে তুমি হৃদয় কোলে
বাঁচবো যতক্ষণ।
আলুক্ষেতের ইঁদুর
আমার বাবার আলুক্ষেতে
ইঁদুর করে গর্ত,
সিঁদুর গায়ে না মেখে সে
আলু খাবে শর্ত।
কিন্তু বাবা টললো না তার
ক্ষেতে থাকার শর্ততে
কারণ ইঁদুর সুযোগ পেলে
বাচ্চা দিবে গর্ততে।
বাচ্চাসহ তখন তারা
আলু খাবে বার গুণ,
বাবা তো না অশিক্ষিত
জানে সেসব আড়গুণ।
তাই তো বাবা ইঁদুর তাড়ায়
ঠাণ্ডা মাথায় মিট করে,
খুব সহজে কাজ না হলে
লেজ ঝুলিয়ে ফিট করে।
ঋতুর শোভা
গ্রীষ্মকালে কাঁঠাল পাকে
বর্ষাকালে কাদা,
লাঠির ভরে হাঁটতে গেলেও
পিছলে পড়ে দাদা।
কদম ফোটে বর্ষাকালে
শরৎকালে কাশ,
তাইনা দেখে খুকুমনি
খুশি বারমাস।
হেমন্তে মৌ ডালিম গাছে
শীতে কাঁপে হাড়,
কাঁথা গায়ে জড়িয়ে রেখে
দেখি গোপালভাঁড়।
বসন্তে যাই শিমুল তলে
কুহু কুহু ডাকে,
এমনি করে সারাবছর
ঋতুর শোভা থাকে।
অলস সকাল আমার
ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা শীতের সকাল
উঠতে চায় না মন,
লেপ গুজিয়ে শুয়ে থাকি
ইচ্ছে যতক্ষণ।
মায়ে ডাকে বাবায় ডাকে
উঠরে বাবা উঠ,
পড়ার সময় পার হয়ে যায়
ইসকুলেতে ছুট।
কার কথাটা কেবা শোনে
অলস দেহ তাই,
এপাশ ঘুরে ঘোমটা মেরে
ঘুমের ভানে যাই।
যখন আবার বিরক্ত হই
চোখটা মেলে দেখি,
অবাক করে ঘড়ির কাঁটা
অনেক বেলা এ কি!
কুমির
কুমির দেখতে ঈষৎ রঙের
অর্ধ-জলে বাস করে!
ইয়া বড়ো দাঁত দিয়ে সে
মাছের সর্বনাশ করে।
মাছ নাকি খায় মিষ্টি জলের
কী ধারালো দাঁতগুলো!
শীতল দেশে থাকে তবু
শক্ত ভীষণ কাঁধগুলো।
চারটি পা’ই হাসের মতো
হাঁটে দেহ ভর করে,
কুমির অর্ধ-জলচর তাই
জলকে আপন পর করে।
যুগান্তরে কত প্রাণী
হারালো এ দেশ থেকে!
টিকে আছে তবু তারা
শীতল পরিবেশ থেকে।
বন্ধু রোবট
খেলবে রোবট আমার সাথে ইচিং বিচিং খেলা,
ফুলপরীদের গল্প করে কাটবে বিকেলবেলা।
আমার সাথে করবে ক্লাস সহপাঠী হয়ে,
বখাটেরা তাকে দেখে থাকবে ভয়ে ভয়ে।
বইয়ের ভারি ব্যাগটা রোবট করবে বহন কাঁধে,
অচিনপুরে পথ দেখাবে- পড়বো না আর খাদে।
বিপদ এলে সাহায্য সে করবে বুঝে ঠিকই,
কোথায় কিসে ভালো মন্দ দেখবে প্রতিদিকই।
খাবার প্লেটে তুলে দেবে- করবে বাড়ির কাজও,
এমন একটা রোবট আমার হয় না কেন আজও!
এতো এতো ঝুট ঝামেলা ভাল্লাগে না ছাই!
আমার একটা বন্ধু রোবট সঙ্গে থাকা চাই।