ছড়া

নির্বাচিত ছড়া- হোস্নেয়ারা বকুল

এমনও তোমায়
মনে পড়ে যায়,
একা ফেলে গেলে তুমি
কোনও এক বরষায়।
সিক্ত নয়ন নিয়ে
শুধু ছিলাম চেয়ে,
মানলোনা বাধা চোখ
জল পড়লো গাল বেয়ে।
হাতে ছিল বৃষ্টিস্নাত
প্রিয় কদম ফুল,
না নিয়েই গেলে চলে
বুঝে আমাকে ভুল।
ভেজা ফুল, ভেজা চোখ
দুঃখে ভেজা মন,
তুমি আর আমি ছিলাম
দুজনার দুজন।
কতটা সময় কেটে গেল
কতটা বছর,
তোমার স্মৃতি এখন শুধুই
ধুলি ভরা, ধুসর।
আবার আসে আষাঢ় মাস
ঝরঝর বৃষ্টি,
আগের সেই নেই আমি
হয়েছি নতুন সৃষ্টি।
এখনও ভিজি বৃষ্টির জলে
হাতে কদম ফুল,
তোমাকে ভেবে ভাঙ্গেনা আর
আমার হৃদয়ের কূল।

তোমরা যাকে ধর্ষিতা বলো আসলে ধর্ষিতা কে?
ভদ্রবেশে পুরুষ ঘোরে তাদের জানো নে।
বেড়ার ঘর বা অট্টালিকায় মেয়ে বড়ো হয়
সৃষ্টির পার্থকে সে কোথাও নিরাপদ নয়।
লেখাপড়া নয়তো কাজে ঘরের বের হয়
হায়েনা আর শকুনের চোখ ওৎ পেতে সদা রয়।
অসহায়ত্বের সুযোগ পেলেই মুখোশ খুলে যায়
মুখোশধারী ভদ্রলোক সব নোংরা কথা কয়।
তারাই আবার সমাজ সেবায় হর্তা, কর্তা বনে
জন দরদী, মানব দরদী নিজেকে ভাবে মনে।
তাদের দেওয়া ভালোবাসায় নষ্ট হয় নারী
কখনও হয় জীবন দিতে, ছাড়তে হয় বাড়ি।
ধর্ষিতা নামক ঘৃণিত এক নাম হয়ে যায় তার
যার কারণে ধর্ষিতা সে, তার নাই দায়ভার।
একবারও কি ভেবে দেখেছো, বলছো কাকে ধর্ষিতা
মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছো সৃষ্টি করেছেন বিধাতা।
নিজকে করোনা কলুষিত আর সম্মান কর নারী
মা-বোন, স্ত্রী-কন্যা সৃষ্টি বিধাতারই।
সম্মান দাও সম্মান নাও পাপ মুক্ত হবে জীবন
নর নারী মিলে তৈরি হবে সুন্দর এ ভূবণ।

বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোলায় দোলে আমার মন।
কিভাবে মন মেনে নেয় তুমিই আপন জন?
ধরতে গেলে দাওনা ধরা, খেলো কানামাছি
তোমায় নিয়ে এক আকাশ সব, ভাবি মিছেমিছি।
গোলকধাঁধায় গোল মেলে সব, খেলায় পারদর্শী
তোমার টোপ না বুঝে তাই গিলে ফেলি বরশী।
ছটফট করি প্রাণ যায় যায়, না পারি আমি ছুটতে
শাখের করাত তুমি আমার পারিনি তা বুঝতে।

ফিলিস্তিন দেশের নাম মুসলমানের বাস,
এক আল্লাহতে বিশ্বাসী নেই অবিশ্বাস।
ইহুদি গোত্রের ইসরায়েল অমুসলিমে ভরা,
হানাহানি, ধ্বংস, অন্যায় ব্যভিচারে সেরা।
কায়েম করতে চায় তাদের শাসন ব্যবস্থা,
ধংসযজ্ঞ চালায় ইসরাইল, করে হেনস্তা।
অত্যাচারের ক্ষত বসায় ফিলিস্তিনের বুকে
বাদ যায়না নারী শিশু, শিকার হয় ক্রোধে।
খোদার নামে ফিলিস্তিন তাদের রুখে দাঁড়ায়
বিশ্ব মুসলিম এক হয়ে মনোবল বাড়ায়।
পিছু হটতে বাধ্য হয় ইহুদির দল
মুসলিম জাতি বুঝিয়ে দেয় ঈমানের বল।

হিম হিম শীতল পরশ বরফ গলা নদী
ছুয়ে দেখার আকুলতা পূর্ণ হতো যদি।
জানালার ওপাশে তুমি হয়ে কুয়াশা
থেকেই গেলে অধরা সব ধোয়াশা।
হিম শীতল হিমেল হাওয়া থরথর কাঁপুনি
সুর্যের দেখা নেই আলো টুকুও নিবুনি।
আশা নিয়ে চেয়ে থাকা রৌদ্রের উত্তাপ
কমাতে পারে বৃদ্ধের মুখের যত যপতপ।
হাতাশায় কাটে দিন রবি তার ওঠেনা
হাড় কাঁপানো শীতের দিন পার হতে চায়না।
মলিনতায় মলিন মুখ, শরীরে ধরে যত কাঁপন
তার কষ্ট কেউ বোঝেনা মুখে বলাও তো বারণ।
ভাগ্য অতি ভালো হলে জোটে যদি কম্বল
মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে এটুকুই তার সম্বল।
নাম ডাক কিনে নেয়, নেতা অতি বড় হয়
রাজনীতি, ভাষনেও বড় বড় কথা কয়।
গরীব, দুঃখী, অনাহারি অল্পতে হয় তুষ্ট
তাদের তুষ্ট করতে পেরে নেতা থাকে সন্তুষ্ট।

মাঠ জুড়ে সোনার ফসল কৃষকের মুখে হাসি
ভরবে গোলা নতুন ধানে সবপ্ন রাশি রাশি।
ঋন শুধবে, দেনা মিটাবে কিনবে বউয়ের সোনার নোলক
নতুন কাপড় কিনবে সবার বইবে মনে খুশির ঝলক।
ঢেঁকির শব্দে তালে তালে কৃষাণী কুটবে চালের গুড়ো
নবান্নের পিঠা পায়েশ খাবে বাড়ির ছেলে বুড়ো।
হরেক রকম ফুল ফোটে সুগন্ধে সারারাত
শিউলী, কামিনী, অশোক, ছাতিম আরো ফোটে গন্ধরাজ।
ঘাসের ডগায় শিশির বিন্দু মুক্ত করে ঝলমল
নতুন পাতার আগাম বানী পুরোনো পাতা হয় লাল।
বিকেল বেলা সোনার রংয়ে পশ্চিমে অস্ত যায় রবি
সুন্দর ভাবে ফুটে ওঠে বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।
আগের রাতে লাগে গরম ভোরের বেলায় লাগে শীত
প্রকৃতি শুধু গেয়ে যায় হেমন্ত ঋতুর আগমনী গীত।

কত রকম মুখোশ আছে
কত রকম ভন্ড,
তাদের না চিনলেই
দিতে হয় দন্ড।
মুখে মধু কথায় যাদু
টেনে নেয় বুকে,
অর্ন্তজ্বালায় জ্বলে মরে
থাকতে দেখে সুখে।
নানা রকম ফন্দি আঁটে
নানা রকম প্যাচ
গ্যারাকলে ফেলতে কাঁচি
চালায় ক্যাচ ক্যাচ।
আপনের চেয়েও আপন হয়
জানের চেয়েও জান,
যাদু টোনা করেও তাই
মারতে পারে বাণ।
এমন অনেক মুখোশধারী
এদের চেনা দায়,
দুধকলা দিয়ে পুষলেও
কালসাপ-ই রয়।

ভেবে ছিলাম তুমিই আপন
আসলে তা-না,
আপন সাজার নিখুঁত অভিনয়
তোমার ছিল জানা।
অনেক বেশি চাওয়ার ছিলে
তীব্র আকর্ষণ,
বিজ্ঞানের ভাষায় তাই
হল মধ্যাকর্ষণ।
পৃথিবী নামক গ্রহে হল
তোমার আমার বাস,
মঙ্গলেও চেয়েছিলাম
গড়তে নিবাস।
ঘূর্ণায়মান গ্রহ হয়ে
ঘুরি চতুর্দিক,
তোমার আলোয় আলোকিত
আমার সবদিক।
মিটিমিটি তারা হয়ে
লক্ষ মাইল দূরে,
হাজার জোনাক ছড়াও তুমি
আমার কুড়েঁ ঘরে।
আলো হয়ে ছুটে যাও
অন্য কোন টানে,
মিছেই ছুটি আলেয়ার পিছে
যার নাই কোন মানে।

বাবা মানে হাজার কথা
হাজার বায়না ধরা
বুকের মধ্যে লুকিয়ে পড়া
পিঠে ঘোড়ায় চড়া।
বাবা মানে যত আবদার
শত অভিযোগ
যত্ন করে বুঝিয়ে দেওয়া
অংক যোগ-বিয়োগ।
বাবা মানে হাজার কষ্ট
বুঝতে না পারা
আনন্দেতে ভাসিয়ে দেওয়া
সুখের ঝর্ণাধারা।
বাবা মানে জীবনের এক
অতি পরম পাওয়া
আগলে রাখে সারা জীবন
কষ্টকে করে ধাওয়া।
বাবা মানে কাঁধে চড়ে
আকাশ ধরতে চাওয়া
বিশাল এক বটবৃক্ষের
শীতল পরশ পাওয়া।
আমার কাছে সবার সেরা
বাবা আমার বাবা
বাবার মত পৃথিবীতে
আর আছে কে বা?

এলোমেলো জট পাকানো
কতকিছু মনে,
কোনোটা হাসায়, কোনোটা কাঁদায়
সুখ স্মৃতি ক্ষনে।
কি পেয়েছি, কি পেলামনা
কি পাওয়ার ছিল,
কোনটা নিলো, কোনটা দিলো
কি রয়ে গেল।
হাসি খুশি, চঞ্চলতা
উচ্ছ্বাস ভরা বুক,
ক্ষনেই হাসি, ক্ষনেই কাদি
ক্ষনেই লাগে সুখ।
শৈশব, কৈশোর, যৌবন আর
মাঝ বয়সে এসে,
কোনকিছুই ঠিক মেলেনা
যোগ বিয়োগের শেষে ।
চাওয়া পাওয়ার হিসেবগুলো
নষ্ট করে মাথা,
সুখ দুঃখের দুলুনিতে
পাই যে শুধু ব্যথা।
কি চেয়েছি, কি পেয়েছি
কি হয়েছি আজ,
ভাবলে পাগল হবো তাই
ভাবাই দিলাম বাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *