নির্বাচিত ছড়া- শাকিব হুসাইন
ভাত খেয়ে নাও ভাত
এই যে শোনো ছোট্টুগুলো
আমি হলাম ভূত
গায়ে আমার মাংসও নেই
হাড় তবু মজবুত।
হাঁড়ির সমান মাথা আমার
মাথার সমান ব্রেন
মেধার খেলায় আমি যেন
চলন্ত এক ট্রেন।
চিকনচাকন পা যে আমার
কুলোর মতো কান
শেওড়াগাছে ঝুলে ঝুলে
রোজ ধরি তাই গান।
কিন্তু আমি দুষ্টু ভীষণ
এই তো পরিচয়
তোমরা যারা ভাত খাও না
দেখাই তাদের ভয়।
ভাত না খেলে যাব ছুটে
নামবে যখন রাত
তাই বলি কী জলদি করে
ভাত খেয়ে নাও ভাত!
এই ছড়াটা বাবাদের
বাবাদের ঘুম নেই ঢুলুঢুলু চোখ
রাত শেষ তবু তিনি না ঘুমানো লোক।
বাবাদের হাত চলে সারাদিনভর
হাতুড়ির আঘাতেও নাই তাঁর ডর।
বাবাদের পা তো চলে রোদ বর্ষায়
রাতদিন শত মন থাকে ভরসায়।
সকালের খাবারে সে খায় চা ও রুটি
ভাগ্যের সাথে রোজ করে ছোটাছুটি।
পেরেশানি রোজ রোজ চেপে ধরে টুটি।
প্রতিদিন কাজ কাজ নাই তার ছুটি
বাবাদের শখ নাই, নাই আহ্লাদ
পরিবার বাঁচাতে যে সবকিছু বাদ।
এভারেস্ট ক্ষয় হোক, কেন সংশয়?
গাও আজ প্রাণখুলে বাবাদের জয়!
এই চিঠিটা মাকে দিও
ও পাখি তুই উড়ে উড়ে
আকাশবুকে ঘুরে ঘুরে
মেঘের দেশে
হেসে হেসে
মেঘ পরিদের কাছে…
এই চিঠিটা
মাকে দিও
ওইখানে মা আছে।
বেশকিছু দিন ধরে মা যে
মনে হয় খুব বিজি কাজে
ঘুমিয়ে গেলে
স্বপ্ন এলে
হাত রাখে না ভালে…
মিষ্টি চুমু
আঁকছে না আর
ছোট্ট দুটি গালে।
বলে দিও ও পাখি ভাই
তোমার খুকি আর সুখী নাই
তোমার আশায়
বুকটা ভাসায়
যাবে কবে বলো?
নয় পাখি ভাই
আমায় নিয়ে
মেঘের দেশে চলো….
ফরেন দেশের প্লানিং
ওমা সে কী! সেদিন দেখি
একই ঘরে ঘণ্টা ধরে
ইঁদুর এবং বিল্লি—
একই সাথে সারারাতে
দু’জন বসে হিসেব কষে
কেমনে যাবে দিল্লি।
বিল্লি শেষে বলল হেসে
মামার কাছে ডলার আছে
হই শরণাপন্ন—
সালাম দিয়ে ডলার নিয়ে
মামার নামে ডানে–বামে
গাইব ধন্য ধন্য।
নাই টেনশন যাই চল বন
মামার কাছে ডিমান্ড আছে
করবে পূরণ সত্যি—
প্লেনে উড়ে আকাশ ঘুরে
যাবো শেষে ফরেন দেশে
মিথ্যে নয় একরত্তি।
আমি যখন ফড়িং হ
এই যে শোনো, ঘাসের বুড়ি
রোজ পর তো শিশির চুড়ি
মনটা দিয়ে শোনো—
আমি যখন ফড়িং হব
তোমার বুকে শুয়ে রবো
বলবে না তো কোনও।
শিশির চুড়ি পরবে যখন
ডাক দিও প্লিজ আমায় তখন
ভাঙব তোমার চুড়ি—
ঘুম থেকে তো জেগে ভোরে
বলবে রেগে— দুষ্টু ওরে
কই গেলি তুই উড়ি?
পালিয়ে গিয়ে খেলব খেলা
খেলার শেষে নামবে বেলা
ডাকবে তুমি খুব—
তিড়িং করে আসব উড়ে
তোমার পাশে ঘুরে ঘুরে
মজায় দেব ডুব।
বলবে তুমি— ফড়িংবাবু
তোকে নিয়ে ভয়ে কাবু
ভীষণ ভয় যে পেলাম—
বলব আমি খেলার শেষে
হাওয়ার ভেলায় ভেসে ভেসে
এই তো ফিরে এলাম।
ইশকুলটা ছুটি
ঢঙ ঢঙ ঢঙ ঘন্টা বেজে
ইশকুল হলো
ছুটি…
ডিগবাজিটা
দেই যে ঘাসে
খুশির লুটোপুটি।
সবুজ মাঠে ফড়িং বেশে
তিড়িংবিড়িং
লাফাই—
প্রজাপতির
পাখায় চড়ে
ফুলে-ফুলে
ঝাঁপাই।
ঘুড়ি হয়ে নীল আকাশে
ইচ্ছে মতো
উড়ি…
পাখির মতো
ছন্নছাড়া
দেশ বিদেশে
ঘুরি…
আজকে আমার ছুটি
আজকে
আমার ছুটি রে ভাই
আজকে
আমার ছুটি…
পাখির মতো উড়ব আমি
খুশির
লুটোপুটি।
লাটাই
ঘুড়ি সঙ্গে নিয়ে
ছুটব
মাঠে মাঠে—
দুপুর হলেই হাঁসের সাথে
ছুটব
দিঘির ঘাটে।
শিশির-
ভেজা দূর্বাঘাসে
মৌরি
ফুলের বনে—
মনের কথা বলব বসে
ফুল-
পাখিদের সনে।
রাতাই
নদী পাড়ি দিয়ে
যাব
অনেক দূরে…
গান গেয়ে তো যাব আমি
পাখির
সুরে সুরে।
পড়া তোমায় দিলাম ছুটি
ইশকুল নেই পড়া তোমায়
যাও দিলাম আজ
ছুটি
রঙের সাথে আজ সারাদিন
গড়ব আমি
জুটি।
আজকে আমি আঁকব বসে
আমার বাবা-
মাকে
অনেক কিছু আঁকব আমি
বলতে পারো
কাকে?
আঁকব আকাশ চাঁদ তারা আর
আঁকব গাছের
সারি
দূর আকাশে ভেসে চলা
আঁকব মেঘের
বাড়ি।
আঁকব আমি রূপকথার ওই
নীল পরিদের
ডানা
আঁকব নদী-ঝরনা-পাহাড়
নেইকো আমার
মানা।
চশমাটা কী জাদুর!
যখন–তখন চশমা পরি
চশমাটা যে দাদু্র
এই রে আবার ঝাপসা দেখি
চশমাটা কী জাদুর!
দাদু আবার ঠিকই দেখে
ওয়ার্ড বড় বড়—
আমি কেন ঘোলা দেখি
কেউ আন্দাজ করো?
এই চশমা ছাড়া দাদুর
একটু চলে না যে
কী রহস্য লুকিয়ে আছে
এই চশমার মাঝে?
আমি কেন ঝাপসা দেখি
ঘোলা কেন তবে?
চশমা পরে ওয়ার্ড বড়
দেখব আমি কবে?
এই রে আবার ডাকল বুঝি
যাচ্ছি আমি দাদু
ঠিকই খুঁজে বের করব
এই চশমার জাদু!
পটকা মামার জুতা চুরি
পটকা মামার জুতা জোড়া
ভীষণ প্রিয় তার
এমন জুতা আটপাড়াতে
নেই তো কোথাও আর।
জুতা জোড়া আগলে রাখে
যত্ন করে খুব—
জুতা পরে ঘুমায় মামা
স্বপ্নেতে দেয় ডুব।
একরাতে এক কাণ্ড ঘটে
ঢুকলো ঘরে চোর
দামি জিনিস নিয়ে গেল
না হতে যে ভোর।
দামির মাঝে ছিল মামার
জুতা জোড়াটাই—
স্বপ্ন ভাঙলে দেখে মামা
পায়ে জুতা নাই।
দিনের পরে দিন চলে যায়
রাতের পরে রাত
জুতার শোকে পটকা মামা
খায় না এখন ভাত।
চোরের বাসায় হাসিখুশির
ধুম পড়েছে ধুম!
এইদিকে যে পটকা মামার
হারিয়ে গেছে ঘুম।