কবিতা

দীর্ঘ কবিতা- মজিদ মাহমুদ

কবিরাই বলতে পারে বর্তমান ভবি
দেখবা আমার নাম লেখা থাকবে সোনার অক্ষরে
‘বেশ তো আমিও ফুল দিয়ে যাব তোমার কবরে’
মিমিও আজ মস্ত বড় মেম
প্রতি বছর বইমেলায় আসে
আমারে দেখে মিচিমিচি হাসে
সেও এখন কবি-
পাবলিশাররা হুমড়ি খেয়ে পড়ে
টেলিভিশনে লাইভ সাক্ষাৎকার দেয়
আর আমি থাকি তার অপেক্ষায়।
তোমাদের নিশ্চয় মনে আছে প্রেমিক রফিকের কথা
কবি হতে চেয়েছিল যদিও অযথা
তার বাপ ও ভাই চালাতেন ফাল- নৌকার হাল
রাগ হলে কসে দিতেন গোটা দুই গাল
কিন্তু সে সব কথা আর বলে কি লাভ
সেও ফেব্রুয়ারির চৌদ্দ তারিখ এলে বলত- আই লাভ
তোমাদেরও একদিন তার মতো কৃষ্ণচূড়ার ডালে
রঙ লাগাবে দুই গালে
তার মতো তোমার ভালোবাসাও আজ অন্য বুকে ঘুমায়
তুমি মিমিকে দেখিও ক্ষমায়
ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর কপটতম মাস
কেউ কারো করে না বিশ্বাস
কবিদের গাল ভরা বুলি
মাথায় পরে আছে অন্যের খুলি
এক কবির প্রথম হইছে বাহির এক কবিতার বহি
তার কথা কহি- ফুরাইয়া গেছে তার কয়েক এডিশন
এসব কথা বলি বলে আমারে দিছে সিডিশন
ফেব্রুয়ারি ইলেকশন যদিও পৃথিবীর সেরা
দিনটা তবু মেঘে ছিল ঘেরা
তবু আগের চেয়ে সেরা ছিল মানতে হবে মশাই
আমরাই তো উঠাই আর বসায়
কেবল শো ডাউন কেবল নো ডাউন
কবিতার জন্য একা একা ঘুরি সারা টাউন
তবু লোকে আমায় ডাকে গ্রে-হাউন
কারো নেই সাথে ভাতে
তবু ওরা বলে- আমি ছাই দিছি বাড়া ভাতে
অ্যাজমা ও ধুলো-কাদায়
বাইরে যেতে নিষেধ করেছে ডাক্তার দাদায়
যদিও এই বসন্তে যাচ্ছে উড়ে ফুলের রেণু
ষাঁড়ের মায়ায় পুচ্ছ তুলে ছুটছে ধেনু

এলার্জির আছে ভয় তাই শীত বর্ষায় একই মেনু
বাংলা একাডেমি এবার হইছে মেহেরবান
কবিরা এসে দুএক কথা বলে যান
যাদের বয়স হইছে তারা দুএক খান পদক চান
কেবল করেন না লীগ করেন না পার্টি
তার জন্য তার জীবনটাই মাটি
কেবল কবিতা লেখেন খাঁটি
ধরতে চান সরকার বাড়ির লেবেনচুষের লাঠি
কোন জগতে ভাই করলে বাস
গলায় পড়লে নিজের ফাঁস
শিশুরা বাবাদের জিগান- বাবা বাবা
ছোটদের ‘ডেমী’ বড়দের ‘ডেমি’র চেয়ে দীর্ঘকার ক্যান
অহেতুক পোলাটা করে প্যানপ্যান
তিরিশে রফা হয়- কেউ এক লাখে
জোয়াল ফেলে দেয় বুড়ো গাই পাঁকে
শেষমেষ খায় গাধা ঘোলা করে জল
কিছুটা বিছালি পেয়ে পায়ে পায় বল
যার যা খুশি করে এই ফেব্রুয়ারি মাসে
এক ঘাটে জল খায় বাঘে গরু আর হাঁসে
‘এখন আমি কি করব কি করব আমি’
ঘরে নিচ্ছে না আমার সোয়ামি
পাক মিলিটারি নাকি আমায় নিয়েছিল টানি
আমি এখনো টানি সেই ঘানি
যদিও তারা দিয়েছে ফিরে বর্তমানে অভিনন্দন
তবু শুনতে পাচ্ছে না আমার কন্দন
ওরা যুদ্ধ করে করুক
শূন্যরেখায় মরুক
তবু ছাড়বে না সূচ্যগ্র মেদিনি
মদ নি মোদি নি ইম রানের রান নি
চৌরাশিয়ার বাঁশিনি মেহেদির গাননি
এখন আমি কি করব কি করব আমি!
অলীক শহর
বসন্ত বৃষ্টিতে আছে ছেয়ে
পানি ও কাদা প্রেমিক প্রেমিকারা উঠছে নেয়ে
খোচা খোচা দাড়ি নিয়ে মৌলবী সাহেব যাচ্ছে মসজিদে
আমারে ডাকলেন- এই ব্যাটা শোন
বোরখা ছাড়া ইশকুলে যায় ওটা তোর বোন
চুদানির পোয়া পার্থক্য জানে না হ্যান্ডশেক আর মোসাফাহা
এলোমেলো ডিভানের পরে দেখি- মোজা শেমিজ বক্ষবন্ধনি
আর দূরে শুনি চিৎকার শিৎকার মাইকের ধ্বনি

আমি তো গত বছর বলেছিলাম তোমাদের
এ শহর ভরে গেছে পাপে
একই হাটে যায় পোলা আর বাপে
তবু অক্ষত রয়ে গেল চকবাজার মসজিদ
নগর পুড়িলে দেবালয়ের গীত
মানুষ পুড়ে যাবে মানুষ মরে যাবে এই তো নিয়তি
থামবে না জগতের গতি
কেবল শহর থেমে আছে অসম্ভব জ্যামে
গাড়িতে আটকা আছে মিয়া আর ম্যামে
ঘন ঘন ভেঁপু বাজায় পুলিশের গাড়ি
অ্যাম্বুলেন্সের চালক ভাবে রাস্তাটা তারি
আমি এখন কি করি কি করি
এই দঙ্গলে আমার পাশে কে হাঁটে
অভিজিৎ না হুমায়ূন আজাদ
তাদের কিভাবে দেব বাদ
অন্ধকার মানুষের ভিড়ে সোরাবর্দি উদ্যানের গাছগুলো
আমায় করে আহ্বান
কান পেতে এখানে শোন মানুষের গান
আমাদের শরীর থেকে তোমাদের কাগজের চালান
তারচেয়ে ভালো আমার মতো ধ্যানী হয়ে যান
যে মেয়েটা খুলেছিল এখানে ব্লাউজের বোতাম
তার সাথে ছিল কামুক প্রেমিক জানতাম
তবু কে আর কাকে রেখেছে মনে
সবাই এখন পরপারের দিন গোনে
একটা মেয়ে বাসে ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে
হাতে আয়না নিয়ে ক্লিপ লাগাচ্ছে চুলে
তারপর আইলানা মার্জিয়া ভ্রুপ্লাক
এক চোখের ভেতর যদি আটটা থাকে- তাহলে
পাশের যাত্রী ভাবছে হায় আল্লাহ এসব করতে হয়
মেয়ে মানুষ হলে
আমি অপেক্ষায় থাকি কখন আসবে ডাক
কখন ঘোষণা হবে আমার নাম
পক্ব চুলের গল্প লিখিয়ের মতো
বালিকারা নেবে অটোগ্রাফ
ভক্তরা বলবে- ভেবেছিলাম এবার পাবেন পুরস্কার
মনে মনে বলে- তুমি কোন বালেশ্বর
এভাবেই আমাদের জীবনে ফেব্রুয়ারি আসে
ঘাস গজানোর আগেই পচন ধরে অশ্বের মাঁসে
এভাবেই আমরা কপট মন্ত্রে জাগি
সত্য গোপনের জন্য লিখি মিথ্যার অনুরাগী

নতুন ভাষার জন্য তবু থামে না লড়াই
জেগে ওঠে নতুন জব্বার
সনাতন গুরু ভাষাধারীরা-
আমরা তখন ভাগি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *