বিশেষ সংখ্যা

কাব্যশীলন বর্ষাসংখ্যা- বর্ষাগম ছড়া-কবিতা

বৃষ্টি দুপুর
মালেক মাহমুদ

বৃষ্টি দুপুর ঘুমঘুম ঘুম
বৃষ্টি পড়ে ঝুম ঝুম ঝুম
আকাশ ফাঁটা ঝিলিক ঝিম
গর্জে পড়ে বরফ ডিম।
খইয়ের মত ফুটতে থাকে
বৃষ্টি পড়ে ফাঁকে ফাঁকে
বৃষ্টি পড়ে ফোঁটায় ফোঁটায়
বৃষ্টি পড়ে পানের বোটায়।
বৃষ্টি পড়ে ভিজচ্ছে ঘুড়ি
বৃষ্টি পড়ে গুড়িগুড়ি
বৃষ্টি পড়ে ঝুমুর তালে
বৃষ্টি পড়ে ঘুমের তালে
থামছে ঘুড়ির ওড়াউড়ি
দেখছে চেয়ে বুড়া-বুড়ি।
মুসুলধারে বৃষ্টি পড়ে
বৃষ্টি পড়ে বৃষ্টি পড়ে
বৃষ্টি পানি মিষ্টি জানি
বৃষ্টি পানি ধরছে রানি।
বৃষ্টি পড়ে জলের ওপর
আষাঢ় শ্রবণ বৃষ্টি দুপুর।

বৃষ্টির বাদ্য
মোস্তাফিজুল হক

ঝরঝর রিমঝিম বৃষ্টির বাদ্য,
টুপটুপ ঝুপঝুপ জল নদে নাদ্য।
স্বাপ্নিক সত্তায় সুর দ্যায় বৃষ্টি,
সুর, লয়, তাল ঢের চিত্তের কৃষ্টি।

কেউ খায় দিনভর উত্তম খাদ্য,
অর্থের টান যার নেই তার সাধ্য।
কেউ খায় হটডগ মিট ফ্রাই পাস্তা,
কেউ খায় লঙ্কায় পান‌্তার নাশতা।

ছন্দের ঝোঁক যার তন্ময় ছন্দে,
গৈরিক ছন্দের একশেষ দ্বন্দ্বে।
তাক তাক ধিন ধিন সা রে গা,
কেউ গায় ধা-ধা-নি-পা, গা-রে-গা….

ঝোপঝাড় বাঁশবন শ্যামা রং মিষ্টি,
বৃষ্টিতে ভেজা মাঠ রঙে আঁকা সৃষ্টি।
অতিশয় বৃষ্টিতে প্লাবনের শঙ্কা,
নদী তীরে ভাঙনের বেজে ওঠে ডঙ্কা।

বৃষ্টি
মঈন মুরসালিন

রুমঝুম রুমঝুম রুম
বৃষ্টির রিনিঝিন
মনে যেনো বাজে বীন
দুই চোখে নেমে আসে ঘুম
রুমঝুম রুমঝুম রুম।

টুপটাপ টুপটাপ টুপ
বৃষ্টিটা থেমে গেলে
রঙধনু পাখা মেলে
দেখা যায় সুন্দর প্রকৃতির রূপ
টুপটাপ টুপটাপ টুপ।

বর্ষাকালে বধূ নাইওর
এনাম আনন্দ

বর্ষাকালে বধূ নাইওর যায় রে বাপের বাড়ি
ছৈয়া নায়ের বাদাম উড়ে পরনে লাল শাড়ি।
আর কতদূর বাপের বাড়ি মায়ের মুখটা ভাসে
সই-সখীদের দেখা পাবে সেই খুশিতে হাসে।
হাজার হাজার কথা জমা এই নাইওরির মনে
আনন্দ ও হইচই করবে ভাই-বোনেদের সনে।
হাওর-বাঁওড়, নদী-নালা ভরা অথৈ জলে
রূপের বাংলা পরিপূর্ণ নানান রকম ফলে।
আম-কাঁঠালের ম-ম গন্ধে চারদিক মুখরিত
ঘনবর্ষার দাওয়াত পেয়ে বেয়াই-বিয়েন প্রীত।
মাটির সোঁদা গন্ধ-সুভাস ভীষণ ভালো লাগে
গুড়ুম গুড়ুম মেঘ ডাকিলে সূর্যি মামা ভাগে।
আউশের খেত ডুবে গিয়ে থৈ থৈ করে পানি
আজ সে-তো নয় নববধূ অচিন দেশের রানি।
অই দেখা যায় বাপের বাড়ি সইছে না আর দেরি
এই নাইওরির নয়ন দুইটি খুশিতে আজমেরী।

আমি আর মেঘ
সোহেল আহসান

বালক মেঘে পালক ছড়ায় মাঠের দখিন কোণে
নীল আকাশের নীল ডানাতে রঙধনু রঙ বুনে-
আমার কেবল লোভ জাগে ও আমার কেবল শখ
ড়িমেঘের ঘুড়ির লাটাই আমার হাতেই দিলাম জুড়ি’
নদীর সিঁথান মাড়িয়ে এলাম তটের কাছেই ঠিক-
উপুড় করা রোদের আলো বালিতে চিক চিক;
আমিও বালক মেঘও বালক, মেঘের আছে ডানা
মেঘের মতোন উড়তে পারি? আরে না না তা না।

জানলা খোলা হাওয়ার নাচন বাজায় সারেগামা
কাজল দিঘির শেওলা পোনা যেন দিঘির জামা’
জামার উপর টাপুরটুপুর; বৃষ্টি দুপুর তা- ধিন
রোদ নেভানো মেঘের ছায়ায় আমি কেমন স্বাধীন
আল পেরোনো খাল পেরোনো দস্যি আমার নাম
সবখানে যাই- সবখানে পাই, মেঘের চিঠির খাম
বৃষ্টি জলে মাখা চিঠি বৃষ্টি জলে আঁকা’
মেঘ না কি চিল? চিল না হলে কোথায় পেল পাখা
গুচ্ছ কাশের মতো সাদা তাদের বাহু দু’ খান
নিজের ডানার নিচেই তাদের শুঁড়ওলা মুখ লুকান।

মেঘের সাঁকো পার হয়ে যায় টুকরো মেঘের ঢল
পানসে মেঘের ছাতার নিচে বুনো হাঁসের দল-
মেলছে পাখা। খেলছে তারা, আকাশ খেলার মাঠ
চেনা আকাশ, আমলকি বন, সরু নদীর ঘাট’
দইওয়ালা যায় হাঁক ডাকে আয় মেঘ মাখন ও দই
কে কে খাবি? হাওয়ায় ভেসে উড়কি মেঘের কই;
আমিই আমার সঙ্গে আছি আমার আছে টান
আমার আছে মেঘের জাজিম, হাওয়ার আছে গান।

বরষার বরিষণে, স্মৃতির মাহেন্দ্রক্ষণে,
ভীড় করে স্মৃতিরা আধো ঘুম, জাগরণে।
ঘুম ভাঙ্গে না সকালে ঝুমবৃষ্টির ঝুমুর তালে,
ঘুমের নেশায় মাতাল মন স্বপ্নঘোরে দোলে।
মা বলতেন,খেয়ে ঘুমাস চোখ খুলে দেখ না চেয়ে,
খু্দের ভাপায় উড়ছে ধোঁয়া, ওঠরে বাছা নে খেয়ে।
শুঁটকির ভর্তা, কালোজিরা আরো আছে ডিম ভূনা,
আলুর ভর্তা সাথে হলে, খুঁদের ভাপায় স্বাদ মন্দ না।
আরো আছে ডালের বড়া, তেলে ভাঁজা লংকা,
সাথে থাকছে মিষ্টি আঁচার ঝালের নেই শঙ্কা।
ঘুম থেকে ওঠেই খেতাম গরমগরম খুঁদের ভাপা,
জোরসে বৃষ্টি নামছে তাতে আকাশ বেটা বেজায় খ্যাপা।
ঝড়োমেঘে এমনি কত, ঘুমতাম আরো ভর দুপুরে,
নাইয়া চুলোয় রাধতো মা উল্ল্যা পরা রান্না ঘরে ,
মশুর ডালের চচ্চড়ি, কাঁঠাল বিচির ভর্তা সাথে,
ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতে ঢেলে দিতেন মা, ঘি তাতে।
দিন ফুরোয় না তবু তাতে ভেঙ্গে যেত ভাতঘুম,
উসখুস এপাশ-ওপাস, লুডু খেলায় চলত ধুম।
ঘুটি চালায় চলত চুরি তাতে করতাম খুনসুটি,
শীমের বিচি,ছোলা ভাজা,মা বিলাতেন মুঠিমুঠি।
মা গো মা, পাই নি এখন নানা পদের খাওয়ার স্বাদ,
বর্ষা কিংবা শরতে নয় মা,তোমার স্মরণে থাকি উম্মাদ।

বাদল দিনে
সারমিন চৌধুরী

সকাল থেকে বৃষ্টি ঝরে
ডুবেছে খাল, বিল,
ঝুপঝুপাঝুপ শব্দ টিনে
মারছে যেন ঢিল।

টইটম্বুর হাওর বাঁওড়
থইথই করে জলে,
মাছের নাচন দেখে খোকন
মাকে গিয়ে বলে।

ঢেউয়ে করে ছলাৎ ছলাৎ
বাদল দিনে ওই,
শুনব না আজ কোনো মানা
ধরব পুঁটি, কই।

পাড়ার সকল ছেলেপেলে
করছে যে হইচই,
মাছ ধরার ধুম লেগেছে
কেমনে ঘরে রই।

আষাঢ়-শ্রাবণ
আবদুল লতিফ

ঝরে ঝরঝর, ভিজে বাড়িঘর
ভিজে গাছের পাতা
বর্ষার জল, ঢেউ ছলছল
নাচে নায়ের মাথা।

ডোবে পথঘাট, ফসলের মাঠ
ডোবে নদীচর
জেলে ধরে মাছ, মনে উচ্ছ্বাস
থাকে দিনভর।

শাপলার ফুল, পদ্ম বকুল
কতো কতো ফোটে
ডেউয়া ড্রাগন, কাউ লটকন
শত ফল জোটে।

মেঘ সূর্যের, লুকোচুরি ঢেড়
চলে এক খেলা
আষাঢ়-শ্রাবণ, উচাটন মন
কেটে যায় বেলা।

সৃষ্টি ও পান্না
এস.এম বিল্লাল

টিপ টিপ টিপ টিপ রিনিঝিনি বৃষ্টি
আষাঢ়ের মেঘ ছুঁয়ে খুশি হয় সৃ‌ষ্টি,
দিনভর ঝরঝর আকাশের কান্না
ভিজে হয় জড়সড় আদরের পান্না।

বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে দু’বোনের সর্দি
ডাক্তার লিখে দেন ওষুধের ফর্দি
দাদুরির ডাক শুনে পড়াশোনা বন্ধ
আচমকা বিজলিতে লাগে দ্বিধা দ্বন্দ্ব

ভয় পেয়ে দুইবোন উঠে মা’র কোলে
শ্রাবণের মেঘমালা চলে হেলে দোলে,
আষাঢ় – শ্রাবণ এলে হয় মেঘ – বৃষ্টি
রিমঝিম ধারাজলে কোলাহল সৃ‌ষ্টি।

আমার বর্ষা
কবির সুমন

আমার বর্ষা একফোঁটা নয় অগণিত জলের ধারা
কৃষক কাদাময় নাঙল চাষ নতুন ধানের চারা।
অঝরে বর্ষা ভীষণ সবুজ চারদিকে জলরাশি
শ্রাবনের কদম ফুল মুগ্ধ চিত্তে ভালোবাসি।
বাতাসে সিগ্ধতা মায়ময় মৃত্তিকার গন্ধে
মন ছুটে বেড়ায় সাবলীল সানন্দে।
অলংকার রূপে জলে টুইটুম্বুর চারপাশে
মন মনন একত্রে বর্ষার জলে ভাসে।

বৃষ্টি এলে
সুপদ বিশ্বাস

বৃষ্টি এলে ছেলে মেয়ের দিনভর হয় নাওয়া,
খালেবিলে কাটবে সময় তাদের এমন চাওয়া।
কলার ভেলা বাওয়া-
সারাদিনই খেলার ছলে
ডুব দিয়ে যায় নতুন জলে
হাসিখেলায় দিন কেটে যায়
সেটাই বড়ো পাওয়া।
লাঙলমুঠে চাষির মুখে গুনগুন গান গাওয়া,
বুড়ো-বুড়ির হৃদয় কোণে স্মৃতি করে ধাওয়া।
আঁকড়ে বসে দাওয়া-
ধনীর মুখে হাসির রেখা
সুখ তাদেরই ভাগ্যে লেখা
ভোজন রসের স্বাদে মেতে
দেয় রুটিতে তাওয়া।
গুড়িগুড়ি বৃষ্টি ঝরে আকাশ মেঘে ছাওয়া,
তারই মাঝে ধীরে ধীরে বইছে ঝিরি হাওয়া।
কষ্ট মাঠে যাওয়া-
অনাহারীর কাটে দুখে
নেই যে কথা তাদের মুখে
কর্ম বিহীন আধপেটা ভাত
হয় না তাদের খাওয়া।

টলমল
শাহ আলম বিল্লাল

ঝিরিঝিরি বৃষ্টি
ছন্দিত সুর
খাল বিল তৈ তৈ
টাপুর টুপুর।

কালো মেঘ আকাশে
গুড়ুম গুড়ুম
ঘনঘন বিজলী
দুরুম দুরুম।

টলমল টলমল জলে
অতি বৃষ্টি হলে।

বর্ষা দুপুর
শেখ নাজিফাহ ইসলাম

বর্ষার দুপুরে বৃষ্টির মাঝেও এক চিলতে রোদ হাসে,
তুমি কি জানো তোমার কান্নামাখা মন কী ভালোবাসে?
বর্ষার দিনেও পাখি বাসা ভেঙে অচেনা নীড়ে ফিরে,
ঝড়ে তার আধো ভাঙা ডানাটা ঝাপটান দিতে।

বর্ষার ভালোবাসা যে বড়ই অদ্ভুত,
আকাশ থেকে মাটি সবকিছুই যে মেঘে করে বুদবুদ।

গতিবিহীন খরস্রোতাও যে তার সুর খুজে পায়,
এই বৃষ্টি তার মাঝে যেন নব উদ্যম ছড়ায়।
এই উদ্যমতা রঙিন করে আমার মন,
তাই যেন আমি হেসে যাই সর্বক্ষণ।

আষাঢ়
কোমল দাস

তিনদিন অবিরাম টিপটিপ বৃষ্টি
বলো দিদা মানা যায় এই অনাসৃষ্টি?
গতকাল বৃষ্টিতে ভিজি আমি যেই
বাবা রেগে বললেন এই খোকা এই।

এমনটা কখখনো করবে না ফের
বৃষ্টিতে হ’য়ো না গো ঘর থেকে বের।
বলো দিদা শুধু যদি ঘরে বসে থাকি
এ বয়সে এমনটা ভালো লাগে নাকি?

ঘরে থেকে কী উপায়ে ইসকুল পাবো?
ইসকুলে না গেলে তো পড়া ভুলে যাবো।
বন্দি এ দশা দিদা মানার তো নয়
বলছো কী আষাঢ়টা এরকমই হয়!

বর্ষায় নব জল
আব্দুস সাত্তার সুমন

বৃষ্টি হলেই পানি জমে
রিম ঝিমা ঝিম নুপুর,
আলতো পানির উল্লাসেতে
মগ্ন সকাল দুপুর।

বাড়ির ছাদে অল্প পানি
পায়ের পাতা ভিজে,
কচি ঘাসে নরম ছোঁয়ায়
শান্তি আহা কি যে।

ধানের ক্ষেতে চুপচুপা চুপ
দস্যিপনার ছলে,
খেলাধুলায় মেতে উঠি
টলমলে ওই জলে।

খালে বিলে নব পানি
লাল সবুজের রহে,
আষাঢ় মাসে হঠাৎ বৃষ্টি
বর্ষা ধারা বহে…

শ্রাবণ ধারা
আসাদুজ্জান খান মুকুল

শ্রাবণ মাসের বৃষ্টির ধারা
হৃদয় করে পাগলপারা
রয় না দুখের লেশ,
সারাটা দিন ঝরে বৃষ্টি
কাড়ে এতে সবার দৃষ্টি
দেখতে লাগে বেশ!

মেঘ উড়ে যায় অচিন দেশে
উথাল হাওয়ায় ভেসে ভেসে
নাই যে মানা তার,
উড়তে চায় মন মেঘের সাথে
বাধা বিহীন দিনেরাতে
বন্ধি সয় না আর!

কদম-কেয়ার মধুর ঘ্রাণে
বাজায় বাঁশি সবার প্রাণে,
আনে সুখের তান!
গাঁয়ের চাষি মাঠের মাঝে
কাজ করে যায় সকাল-সাঁঝে
গায় হরষে গান।

বৃষ্টির ছন্দে মনটা নাচে
খোকাখুকি মা’কে যাচে
পেতে সুখের রেশ!
বর্ষা ঋতুর এমন রঙে
ময়ূর নাচে নানান ঢঙে
দেখতে লাগে বেশ!

বর্ষা এলে
ইলিয়াছ হোসেন

বর্ষা এলে আকাশ জুড়ে
ভাসে মেঘের ভেলা,
মেঘের থেকে মুষলধারায়
বৃষ্টি ঝরে মেলা।

ঘন বৃষ্টিতে তাপদাহ
যায় যে দূর হয়ে,
দেহ মনকে প্রশান্তি দেয়
শীতল বাতাস বয়ে।

কদম কেয়া জুঁই কামিনী
সুবাস ছড়ায় খুব,
পানকৌড়ি হাঁস অপার সুখে
খাল বিলে দেয় ডুব।

বৃষ্টির ফোঁটায় সবুজ পাতা
আনমনে যে নাচে,
বৃষ্টির জলে নানান মাছে
হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।

টাপুরটুপুর বৃষ্টির ধ্বনি
শুনতে ভালো লাগে,
বৃষ্টির জলে গোসল করতে
বড্ড ইচ্ছা জাগে।

আষাঢ়ী ঢল
শেখ মোমতাজুল করিম শিপলু

আষাঢ় মাসে হাওর বিলে
আসে নতুন মাছ,
কৃষক তখন জেলে সাজে
করে যখন আঁচ।

তীব্র গতির স্রোতে মৎস্য
আহরণে বেশ,
আষাঢ় শ্রাবণ বর্ষা জলে
থৈথৈ করে দেশ।

ফসলের মাঠ হয় তখনি
গো চারণের ভূম,
সাপ বিচ্ছু ব্যাঙ যায় বেড়ে যায়
নাই নয়নে ঘুম।

আকাশ জুড়ে ছোটাছুটি
মেঘ যে জমে রয়,
মেঘে মেঘে ঘর্ষণ করে
বিজলীর সৃষ্টি হয়।

সাঁতার কাটে নতুন জলে
ঝাঁপ দেয় শিশুর দল,
উল্লাসে মন বৃক্ষে চড়ে
পারে পাকা ফল।

বৃষ্টি এলে
মোহাম্মদ সারোয়ার হোসেন

বৃষ্টি এলে আকাশ থেকে
নামে শুভ্র শিল
এক ছাতাতে দুজন মিলে
মনে বেজায় মিল।

বৃষ্টি এলে ফোটে কত
রঙিন কদম, কেয়া
নদীর ঘাটে বাঁধা থাকে
ছোট্ট সুন্দর খেয়া।

বৃষ্টি এলে যায়যে ভিজে
মাঠ, ঘাট,প্রান্তর
বৃষ্টি এলে কিষাণ বধূর
সুখে ভাসে অন্তর।

বৃষ্টি এলে গানযে ধরে
কুনো ব্যাঙের ঐ দল
শিশুরা দল বেঁধে বলে
বৃষ্টিতে ভিজি চল।

বর্ষা বাদল
সুজন দাশ

বাজায় মাদল বর্ষা বাদল
আষাঢ় শ্রাবণ এই দু’মাসে,
ঢাকে আকাশ কালো মেঘে
এই কাঁদে তো এই যে হাসে!

কান্না কী তার অঝোর ধারা?
চলতে থাকে থেমে থেমে,
ঝম ঝমিয়ে সে সুর বাজে
যখন ধরায় আসে নেমে।

বৃক্ষলতার পাতায় পাতায়
হয় শিহরণ খুশির বানে,
বুলায় পরশ শীতলতার
প্রাণের মাঝে সতেজ আনে।

দাবানলের দুঃখ ঘুচে
পালায় খরা দূরের দেশে,
ফোটে কদম জুঁই মালতি
টগর বেলি মুগ্ধ হেসে!

লাল কদম
আবুল বাশার শেখ

কোন এক বাদলা দিনের দুপুর বেলা
সবুজ শ্যাওলায় পা পিছলে যেদিন
বুকের সাথে বুক মিশিয়ে অধরা আলিঙ্গনে
অপরাধীর কাঁঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলে, সেদিন
চোখের ভাষা বুঝতে চেয়েও পারিনি।
বুকের বামপাশে অদৃশ্য ব্যথা সারা রাত
মনোভূমি বিস্তৃত করে করেছে জ্বালাতন,
ঘুমহীন ক্লান্তি দু’চোখে থাকলেও বুঝেনি কেউ
ভোরের ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে উদলা গায়ে
হেটেছি অনেক পথ ভাবনায় আকড়ে তোমাকে।
হঠাৎ মনে পড়লো পিছলে যাওয়ার সময়
তোমার হাতে দু’টো লাল কদম ছিল
কল্পলোকে যার প্রেমে উদ্মাদ ছিলাম,
অথচ ঠিক সময়ে সঠিক কথাটি বলতে পারিনি
পরে অনেক গিয়েছি ঐপথে পাইনি তাকে।
এখনো বর্ষা এলেই লাল কদম খুঁজে ফিরি
খুঁজি অধরা আলিঙ্গনের অপ্সরীকে।

বৃষ্টিঝরা দিনে
জহিরুল হক বিদ্যুৎ

মেঘ গুরগুর ডাকে দেয়া আকাশ কালো করে,
ঠান্ডা হাওয়ার ডানায় চড়ে নামে বৃষ্টি জোরে।
তাধিন তাধিন সোনাব্যাঙে নাচছে খালে বিলে,
ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ভাঙা সুরে ডাকছে সবাই মিলে।
শিশু-কিশোর জল ও কাদায় করছে লুটোপুটি,
কেউবা খালে বড়শি পেতে ধরছে ট্যাংরা পুঁটি।
কেউবা বিলে ভেলায় চড়ে তোলে শাপলা ফুল,
ভিজছে গাঁয়ের চপল মেয়ে কানে বেলির দুল।
কানাবগি এক পা তুলেই আছে মাছের ধ্যানে,
মাঝি মাল্লায় বইঠা চালায় ভাটিয়ালির গানে।
বৃষ্টি পেয়ে উঠলো সেজে প্রকৃতির রূপ বাহার,
ভিজছে ডালে পক্ষীছানা খায়নি কিছু আহার।
নদীর তীরে হিজল গাছে লতায় লতায় ফুলে,
এমন রূপের মোহন মায়ায় মন যে ওঠে দুলে।
পুকুর নদী খাল ও বিলে মাছ লাফিয়ে খেলে,
বিল ও ঝিলে হাঁসের ছানা ভাসছে ডানা মেলে।
রাখাল ছেলে ভিজছে মাঠে সাথে ছাগল গরু,
ভয় পেয়ে কেউ ঠাটার শব্দে কাঁপছে দুরুদুরু।
জুঁই, মালতি, কাঁঠালচাঁপা ফুটছে কতো বেলি,
বকুল ফুলের গন্ধে হারায় মানুষ এবং অলি।
কদম ফুলের পাপড়ি মেলে বর্ষা উঠলো হেসে,
নদী-নালা পায় ফিরে প্রাণ রূপসী বাংলাদেশে।

তুমি এসো বৃষ্টি সেজে
কাজী নাজরিন

হঠাৎ করে না জানিয়ে
মন বাগানের ঝাউ বনে
টাপুরটুপুর ছন্দ সুরে
ভিজিয়ে দেবে ক্ষণে ক্ষণে।
রাত দুপুরে ঝিরিঝিরি
শীতল পরশ গায়ে মেখে
মনের সাথে আলিঙ্গনে
কথা হবে চোখে চোখে।
হাত দু’খানা উজাড় করে
আগলে নেবে বুকে তবে।

ঝড়বৃষ্টি
মো.আশতাব হোসেন

টিনের চালা টনটনাটন
বৃষ্টি পড়ে ঝনঝনাঝন,
হাঁস ছানারা টসটসাটস
জলে ডুবে ফসফসাফস।

ব্যাঙে ডাকে ঘ্যাংগর ঘ্যাংগর
বানর নাচে ন্যাংগর ব্যাংগর,
পালের নৌকা ফরফরাফর
চলছে জোরছে তরতরাতর।

বদর মাঝি টানছে বৈঠা
সুর উঠেছে ঘরৎঘরৎ,
জীর্ণ দেহের হাঁড়গুলি তার
শব্দ করছে মরৎমরৎ।

বেলা যাচ্ছে সরসরাসর
মাঝির বাড়ি উজানের চর,
ঘরটি তার শনের চালা
বাঁধন হলো ঢিলেঢালা।

পানি পড়ে টুপটুপাটুপ
ভিজে হয় সব চুপচুপাচুপ,
ঘরের বধু কিরণ ভানু
তুফানবৃষ্টিতে ভয় পায় খুব।

বৃষ্টি এলে
আর. মজিব

বৃষ্টি এলে ডুবার পাড়ে
ব্যাঙের নাচন ভীষণ বাড়ে
দেখতে অনেক মজা।
ছোট্ট ছেলে হেলেদুলে
বল নিয়ে সে মাঠে চলে
মনটা অনেক তাজা।

কাঁদা মাখা পুরো গায়ে
ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি পড়ে
শুনবে নাতো কথা,
সোনার ছেলে দৌড়ে খেলে
বাবা তখন ভাবে বসে
পায়ে লাগবে ব্যথা।

আকাশের মন খারাপ
সেলিনা আখতার

মেঘ জমেছে আধার কালো
মেঘলা দিনে কাটেনা ভালো।
সুর্য্যিমামা যায় ঢেকে,
গগনে ঘর্ষণ মেঘে মেঘে।
বৃষ্টি পড়ে টিনের চালায়
পুকুর পাড়ে ব্যাঙ লাফায়।
আকাশের আজ মন খারাপ
কাদবে বুঝি এখনি!
ঝরবে বারি অঝোর ধারায়।
শ্রাবণের ধারা অফুরান ঝরায়।
আষাঢ় মাসে অশ্রুবর্ষণ
কাদায় কাদায় লাগে ঘর্ষণ।
ব্যাঙের মাথায় ছাতা,
কে ধরেছে বোকা!
তাই না দেখে খোকা
হেসেই লুটোপুটি।

এলো বর্ষা
শ্যামল বণিক অঞ্জন

মেঘের ডানায় চড়ে এলো ফের বর্ষা
কালো মেঘে ঢাকা আকাশ হয় না তো ফর্সা!
অবিরাম সারাক্ষণ ঝরে যায় বৃষ্টি
চারিদিকে জলাবদ্ধতার হয় সৃষ্টি।

জনজীবন জুড়ে আসে দুর্ভোগ কষ্ট
বন্যার জলে ভেসে হয় সবই নষ্ট।
কদম আর কেয়া ফুটে ছড়ায় সুঘ্রাণ
বর্ষায় ধরনীটা পায় তবু প্রাণ!

আষাঢ় এলো
ফারজানা ইয়াসমিন

আষাঢ় এলো ধূসর মেঘ নিয়ে,
বিষন্ন ভগ্নহৃদয় উদাসী প্রহরে।
অভিমানী মেয়ের মতো কাঁদে,
নীল আকাশ বৃষ্টির জলে ভাসিয়ে।
নরম কাদায় মাখামাখি পথঘাট,
কাক ভেজা দুপুরে নববধূ যায় নদীর ঘাট।
রঙিন মাছ কাটছে সাঁতার দীঘির জলে,
বৃষ্টির জলে পুকুর ভরে নদীতে যাচ্ছে ছুটে।
নদীর স্রোতে পাল তুলে মাঝি গাইছে ভাটিয়ালি গান,
আষাঢ় মাসে বাদল দিনে মাঝির করে আনচান প্রাণ।
রোদেলা বিকাল হঠাৎ করেই কেঁদে ভাসায় বুক,
সন্ধ্যা তারা বৃষ্টি থামায় ধরে আকাশের চিবুক।
সারারাত ভর বৃষ্টি নামায় ভাসায় ধানের ক্ষেত,
চারপাশ জলে থৈথৈ ব্যাঙের গানে মুখরিত আষাঢ় সমেত।

আষাঢ়ী জোৎস্নায়
শাহীনুল ইসলাম

আষাঢ়ী জোৎস্নায় ফুলে ওঠে প্রেম, যে প্রেম ধোয়ে গ্যাছে আষাঢ়ী বৃষ্টিস্রোতে
আ’উজ্জীবিত মনকে উড্ডয়ন করি ঝমঝম দেহ জাঙলায়
তুমি গন্ডির ভেতর দৃশ্য — অদৃশ্যে আফসোস
পোয়াতি ধানে যেমন জাপটে ধরে কীটপতঙ্গ — ঘাসফড়িং
আমিও এম্নি এম্নি জাপটে ধরি হয়ে জলজোঁক
দ্যাখার মন্ত্র ঘষতে ঘষতে আদ্যাখায় স্বাদ বঞ্চিত চোখ
চলো মেঘাচ্ছন্ন চোখে দুজন — দুজনে উড়ালিয়া হই দীর্ঘক্ষণ
আসো আবোলতাবোল প্রেম করি, চুমুক লাগাই ঠোঁটে
ছুঁতে ছুঁতে ছুঁয়ে দেই ফুল ফসলের অরন্যহাড় …
চলো প্রেমে পড়ি —
আবার হাঁটি নিষিদ্ধ ভূমি জলজঙ্গল, হালেহালে লাঙল
ফালে ফুল ঘষে পৃথিবী কাতরাইয়া তোলি নিষিদ্ধজল

নৈসর্গিক বর্ষাকাল
বাশার আনাম

বর্ষা মানে মেঘলা আকাশ
অবারিত মাঠ
বর্ষা মানে পল্লী-গায়ের
ডুবন্ত পথঘাট।
বর্ষা মানে কেয়া কদম
রং-বেরঙের ফুল
বর্ষা মানে অথৈ জলে
ভরা নদীর কূল।
বর্ষা মানে নীল আকাশের
গুড়ুম গুড়ুম ডাক
বর্ষা মানে বাদল ধারায়
ঢাক-কুড়াকুড় ঢাক্।

বর্ষা দিনে
এ আর রিফাত

টাপুর টুপুর বৃষ্টি নামে
ছোট সোনার গাঁয়ে,
টাপুর টুপুর বৃষ্টি নামে
মতির ছোট্ট নায়ে।
টাপুর টুপুর বৃষ্টি নামে
ছোট্ট পাখির বাসায়,
টাপুর টুপুর বৃষ্টি দিয়ে
গ্রাম ও নদী ভাসায়।
টাপুর টুপুর বৃষ্টির দিনে
ফোঁটে কদম ফুল,
ফুলের গন্ধে মন আনন্দে
সবাই তো মশগুল।

বর্ষা কাহন
আবু হানিফ জাকারিয়া

অঝোর ধারায় ঝরছে বিষ্টি
কারো লাগে দারুণ মিষ্টি।
দালান-কোঠায় থাকে যারা
কি উপভোগ করে তারা!
টিনের চালে রিনিঝিনি

এই বর্ষাকে সবাই চিনি।
ঘরের ভিতর পানি থই থই
আমরা বানভাসি যাব কই?
উজান থেকে আসছে পানি
তবু কারো কানাকানি।
বাঁধ ভেঙ্গে জল ঢুকছে ঘরে
বেঁচে আছি কেমন করে?

ডুবেছে মাঠ, ডুবেছে হাট
ডুবেছে সবার ঘরের খাট।
ঘুমায় সবাই টিনের চালে
কি দুর্গতি বর্ষাকালে।
কোটি টাকার বাঁধ ভেঙ্গে যায়
লাখো মানুষ কর্ম হারায়।
ফি বছর বাঁধ ভাঙলে পরে
ঠিকাদারের পকেট ভরে।

এভাবে যুগ পেরিয়ে যায়
বানভাসিরা বিত্ত হারায়।
ভাগ্যে তাদের কিইবা জোটে
নেতার মুখে তো খই ফোটে।

এক বর্ষায় কপোতাক্ষ
তূয়া নুর

কে আছে এতো জল নদীর নেবে বলো শুষে?
বর্ষার ঢলে কপোতাক্ষ একবার উঠেছিলো ফুঁসে।
ঘাট ডুবেছে বইছে নদী কানায় কানায় পানি,
আজ হয়েছে নদী দেখো ভীষণ অভিমানী।
ভয় জাগানো শব্দ করে —যেন বোবা মেয়ে,
কোথা থেকে এতো পানি আসছে বলো ধেয়ে!
আজকে নদীর রূপ খুলেছে প্রাণের ভেতর সুখ,
আয়না পাবে কোথায় বলো, দেখবে নিজের মুখ।
নদী হলো বন্য যে আজ সে কী নিয়ম মানে!
সে যে মাতে নিজের লেখা নিজের সুরের গানে।
জলের তোড়ে ভাসছে সবই, সবাই সুবোধ বাধ্য,
মুখ ফিরিয়ে চলে যাবার নেইতো আমার সাধ্য।
জলে ছিলো ঘূর্ণি ভীষণ নিচ্ছে যেন টেনে,
ভেসেছিলাম তার সাথে যে নিশ্চিত মৃত্যু জেনে।

কদম পাপড়ি
মির্জা মোহাম্মদ আলী

বর্ষার ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টির
ফাঁকে ফাঁকে ফুটল কদম,
এত সুন্দর পরিবেশ আজ
স্বয়ং দেশ করেছে সংযম।
আমি দেখি তথা অবিরাম
হরিৎ বর্ণের গাছের পত্রে,
মেঘের অশ্রু ফোটাল ফুল
মৃদুল দোলা বিটপী তত্রে।
বায়ুর তোড়ে কদম পাপড়ি
ধাক্কা লেগে আছড়ে পড়ে,
তাঁরই খাতির উত্তাল মনটা
কেন জানি ধড়ফড় করে।
কতো সুন্দর সাধের স্বদেশ
পুষ্পে সাজে বুকের বাঁধন,
প্রাণে আটকে নিলাম তাঁরে
করে হাজার বছর সাধন।

বৃষ্টি খালা
নূর-ই-ইলাহী

আষাঢ় এলে মোদের গাঁয়ের কদম ফুলের হাসি পায়,
আমার খালা টিনের চালে টুপটুপিয়ে নেচে যায়।
আমার মায়ের আপন বোন বৃষ্টি খালা মনি,
বোনের বাসায় নিয়ে এলো ঝুমঝুমিয়ে পানি।
পানি তো নয় যেন তাহা মায়ের চোখের জল,
বোনকে কাছে পেয়ে মায়ের চোখ করে ছলছল।
সেই সে ছোট্ট বোনটি আমার, এতদিন পরে এলি!
আমার ছেলে -আমি -তুমি একসাথে আয় খেলি।
আমার মায়ের এমন কথায় বৃষ্টি খালা -সহ,
আমরা সবাই অঝোর ধারায় ভিজিয়ে নিলাম দেহ।
আমায় নিয়ে খালা মায়ের মধুর টানাটানি,
খেলবো সবাই আষাঢ় শ্রাবণ বৃষ্টি খালামনি।

তোমাকে হারানোর আগে
ইসতিয়াক আহমেদ হৃদয়


গুমোট আকাশ, নীরব নিস্তব্ধ সন্ধ্যা
কি ভারি দিনক্ষন, গ্রীষ্মের ধূলো-ময়লা, মাটি।
উঠানে কৃষকের ধারালো কাস্তে,
প্রেমের পাগলা নদীকে ডাকছে পাগলী মেয়ে—
ঘরে এসো ভাত খাও।
যে যার মতো ঘরে ফিরলো , কারো কাঁধে সংসার
কারো কাঁধে বেণী চুলের শান্ত নির্জনতা।
অন্ধকারের গায়ে মৃত জোনাকির মতো ডাকলো দূরের বালুতীর।
কেউ শুনলো না কিছুই— সে আমি যতই বলি রেখে দিতে স্মৃতির দহন!
গুমোট আকাশ কি নীরব নিস্তব্ধতা বোঝে না?
সে কি বোঝে না কি চাই?
কাকে ডাকি!

বৃষ্টি পেয়ে
শরীফ সাথী

আসলো ছুটে হঠাৎ কলরব পিছু,
মেঘও মালা বৃষ্টি ঝড়ও সব কিছু।
সবুজ বনে আপন মনের সুখটুকু,
বৃষ্টি ভেজায় কমল মাটির বুকটুকু।
যে যায় বলো সেথায় চলো দৃষ্টি চেয়ে,
বৃক্ষরাজি সতেজ হলো বৃষ্টি পেয়ে।

বৃষ্টি হচ্ছে
ফেরদৌস জামান খোকন

অধিক গরম শেষে যখন
আকাশ জুড়ে মেঘের ডাক,
বৃষ্টি হবে বলে দেখি
গাইছে পাখি নাচছে কাক।
বনের মাঝে শিয়াল মামা
বলছে ডেকে আয় রে আয়,
বৃষ্টির জলে ভিজবো আজই
শান্তি পাব সবার গায়।
মেঘের ডাকে পুকুর জলে
মাছের দলে দিচ্ছে পাক,
বৃষ্টি হবে তাই না মাছে
কিনার আসে ঝাঁকে ঝাঁক।
অনেক দিনের পরে যখন
ধরার মাঝে বৃষ্টি হয়,
প্রাণী গুলো এই মুহুর্তে
সুরে সুরে কথা কয়।
অধিক গরম অধিক বৃষ্টি
কিছুই নাহি আমরা চাই,
প্রভুর কৃপা পেলে জানি
ধরার সবাই শান্তি পাই।

আষাঢ় এলোরে
গোলাপ মাহমুদ সৌরভ

আষাঢ় এলোরে বর্ষা নিয়ে
দিনে করে বান,
গুড়ুম গুড়ুম আকাশ ডাকে
ব্যাঙে করে গান।
দিনভর ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ে
সূর্য মামা কোথায়?
শিয়াল পণ্ডিতের বিয়ে হবে
মেঘের বাড়ি যেথায়!
মেঘের ডাকে মাছে নাচে
ডাঙায় উঠে আসে,
কচু পাতায় কোলাব্যাঙ
গ্যাঙর গ্যাঙর হাসে।

সত্যি করে বলো তো কোনও দিন বাদুড়
ঝোলা হয়ে এসেছ আমার কাছে?
নাকি বাদুড়ের ভাইরাস নিয়ে ঢুকে
পড়েছ আমার ভেতরে?
কোনও দিন কাউকে কি বলোনি
পান থেকে চুন খসলেই…
রঙচটা দেওয়াল
আসলে সীতার মত অগ্নিপরীক্ষা নয়
তার থেকেই বেশি কোনোও আগুন
নিয়ে খেলতে খেলতে
পরীক্ষার রুটিন মাফিক
অগ্নিপরীক্ষা দিয়েছি যুগের পর যুগ
কেউ রাখেনি খবর
হাজার বসন্ত পেরিয়ে গেলেও
তুমি বোঝনি এখনও
রামায়ণও আপেক্ষায় থাকে
সীতার উপন্যাসের।

আমার গাঁয়ের বর্ষা
বিজন বেপারী

সারাদিন রাত আমাদের গাঁয়ে বর্ষা বাদল ঝরে,
শ্রাবণের ধারা এ অশ্রুসম মনটা উদাস করে।
অবিনাশ কাকু পেয়ারা তুলতে তবুও ছোটেন বাগে,
আযান প্রভাতে ছুটতে বাগানে চোখে নিয়ে ঘুম জাগে।
শঙ্কর রায় পেয়ারা বেঁচতে শহরে দাঁড়ায়ে থাকে,
সন্ধ্যে বেলায় বাজার সদাই সেটাই ওঠে যে পাকে।
সারা পথ ঘাট জলে ডোবা আজ গাঁয়ের প্রতিটি বাড়ি,
কাঁদছে ক্ষুধায় অবুঝ শিশুটি শূণ্য চালের হাঁড়ি।
শ্রাবণে আবার নৌকা বিলাস ভাসায় শহুরে ধনী,
হাসি আর গানে ট্রলারে ট্রলারে খাশির পোলাও কিনি।
ক্ষুধার্ত শিশু দেখছে নয়নে আরাম বিলাস কত,
দু’চোখ ভরেছে বৃষ্টির জলে হৃদয়ে হাজার ক্ষত।
কদম কেয়ার সুবাস ছড়ায় নির্জনে যায় ভেসে,
আমড়া লেবুর জলকেলি চলে এই আমাদের দেশে।
গরীব দুখীর বুকের সাহস বাঁচতে যোগায় বল,
প্রকৃতি আর নন্দ দুলাল না যেনো করেনা গো ছল।

বর্ষা এলে
বিধান চন্দ্র দেবনাথ

বর্ষা এলে নদীর ঘাটে
নৌকা সারি সারি,
মাঝি মাল্লা নৌকা নিয়ে
ছুঁটে নিজের বাড়ি।
বর্ষা এলে বৃষ্টি নামে
হাতে নিয়ে ছাতা,
কেউ কেউ আবার যাচ্ছে দেখো
মাথায় কলা পাতা।
আকাশেতে চোখ রাখিলেই
সাদা মেঘের ভেলা,
মেঘেরা সব করছে যেন
লুকোচুরি খেলা।
জমজম করে আকাশ থেকে
বৃষ্টি পড়ে ঝরে,
ছাতা মাথায় দিয়ে সবাই
ফিরে আসে ঘরে।

আকাশের মন খারাপ
সেলিনা আখতার

মেঘ জমেছে আধার কালো
মেঘলা দিনে কাটেনা ভালো।
সুর্য্যিমামা যায় ঢেকে,
গগনে ঘর্ষণ মেঘে মেঘে।
বৃষ্টি পড়ে টিনের চালায়
পুকুর পাড়ে ব্যাঙ লাফায়।
আকাশের আজ মন খারাপ
কাদবে বুঝি এখনি!
ঝরবে বারি অঝোর ধারায়।
শ্রাবণের ধারা অফুরান ঝরায়।
আষাঢ় মাসে অশ্রুবর্ষণ
কাদায় কাদায় লাগে ঘর্ষণ।
ব্যাঙের মাথায় ছাতা,
কে ধরেছে বোকা!
তাই না দেখে খোকা
হেসেই লুটোপুটি।।

বৃষ্টি তোমাকে চাই
গোলাম কবির

আহা বৃষ্টি! কী যে মিষ্টি!
তোমাকে এখন আমারও হেমন্তের
ঐ গানটা শোনাতে ইচ্ছে করছে!
জানো, কোনটা? “কতোদিন পরে
এলে একটু বসো, তোমায় অনেক
কথা বলার ছিলো যদি শোনো! “
বৃষ্টি, তুমি এমনই ঝরো আমাদের
বর্ষাকালে টিনের চালে, গাছের ডালে,
নদীর বুকে, ক্ষেতের আলে,
স্কুলের খেলার মাঠে, পার্কের বেঞ্চে!
শিরিষ গাছের পাতাগুলো দিও
ভিজিয়ে এমনি করে, ভিজিয়ে দিও
প্রেমিক প্রেমিকার মনের ভিতর
তুষের মতো জ্বলতে থাকা কষ্টগুলো,
ভিজিয়ে দিও চাষির ক্ষেতের
নতুন লাগানো ধানের চারাগুলো,
ধুয়ে দিও আমাদের যতো কষ্টগুলো
আর সারিয়ে তোল আমাদের
তুমুল এই আষাঢ মাসের বৃষ্টির দিনে!
যতো শীতল সম্পর্কগুলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *