উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। নবম পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। প্রথম পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। দ্বিতীয় পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। তৃতীয় পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। চতুর্থ পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। পঞ্চম পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। ষষ্ঠ পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। সপ্তম পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। অষ্টম পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। নবম পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। দশম পর্ব
নবম পর্ব
আমি শক্ত হয়ে যাওয়া খোলা কালো পায়ে হাত দিয়ে বললাম, ‘ঠিক আছে তুই যেভাবে বলিস। এখন দে স্কালপোলটা। আর টুইজার।’
হাসান আবার হা হা করে বলে ওঠে, ‘এখনই না। তোর পোশাক আশাক ঠিক করতে হবে।’
‘মেকাপ নিতে হবে নাকি?’
‘কিছুটা তাই। তোর জন্য কালো আলখাল্লা ভাড়া করে এনেছি। আলখাল্লা পরেই কাজ করতে হবে।’
‘এই গরমে আলখাল্লা পরতে হবে? কারেন্ট নেই। ফ্যানও চলছে না।’
‘গরম দেখলি কোথায়? বাইরে ঝড়বৃষ্টি। ঠান্ডা হাওয়া। আমার টেবিলের উপর আছে আলখাল্লাটা। নে, দোস্ত পরে নে। তাড়াতাড়ি কর। আলখাল্লার সাথে দেখ মাথা সুচালো কালো টুপি আছে। ওটা মাথায় পর। আর মুখে কালো কাপড় বেঁধে নে। শুধু চোখ খোলা থাকবে।’
আমি কথা না বাড়িয়ে ও যা যা করতে বলল করলাম। সব পরে হাত কিছুটা গুটিয়ে ছুরি চিমটি নিয়ে লেগে পড়লাম লাশের চামড়া ছিলতে। সহজ কাজ নয়। প্রথম প্রথম হাত কাঁপতে লাগল। হাসান বলল, ‘এডিটিংয়ের সময় ওসব বাদ ছাদ দিতে হবে। আমি যেন আমার মত চামড়া ছেলার কাজ করে যাই।’
কালো আলখাল্লার মধ্যে ঘামের স্রোত বইয়ে আমি যন্ত্রের মত লাশের চামড়া ছিলি। যখন কষ্ট হয়ে যায় বসে জিরিয়ে নেই। পানি খাই। হাসান ক্যামেরা বন্ধ করে বারান্দায় একটু হাঁটাহাঁটি করে আসে।’
পা থেকে চামড়া ছিলে বুক পযর্ন্ত আসতে আসতে রাত তিনটে বেজে গেল। মোমবাতি সব ফুরিয়ে আসছে।
আরো ঘন্টাখানিক লাগিয়ে বুকের দিকটা আর দুই হাত শেষ করলাম। এবার লাশ উল্টে পিঠের দিকে যাব। সব শেষে মাথা।
ক্যামেরা এবং তার আলো বন্ধ রেখে হাসানও হাত লাগাল লাশের পাশ ফিরিয়ে উল্টে দিতে।
উল্টোনোর সময় অসাবধানে লাশের চাদর পুরোটা খুলে গেল। শুটিং করছি না বলে সাবধানতার প্রয়োজন বোধ করিনি।
মোমবাতির স্বল্প আলোয় মুখ থেকে কাপড় সরে যেতেই লাশের মুখটা খুব চেনা মনে হলো।
হাসানও দেখেছে মুখটা। সে কাঁপা কাঁপা গলায় আমার নাম ধরে ডাকল।
আর ঠিক সেই সময় জানালা দিয়ে আসা বাইরের দমকা বাতাসে মোমবাতি নিভে গেল।
আমার ডুবে গেলাম অন্ধকার আর ভয়ের রাজ্যে।
হাসান কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, ‘লাশের মুখটা দেখেছিস!’
ধকল সামলে উঠতে আমার সময় লাগল। একটু ধাতস্ত হয়ে বললাম, ‘হু।’ এর বেশি কথা জোগাল না মুখে।
‘কেমন যেন হামিদ ভাইয়ের মত চেহারা। মনে হয় যেন হামিদ ভাইই।’
আমি ভয়ার্ত স্বরে বললাম, ‘মোমটা জ্বালা। দেখি ব্যাপারটা কি?’
হাসান অনেকক্ষণ অন্ধকারে হাতড়াহাতড়ি করল। মোম পেল না। যেটা জ্বলে শেষ পর্যায়ে এসেছিল সেটা ছাড়া আর কোন মোম নেই। সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। টেবিলের যেখানে রেখেছিলাম সেখানটাও ফাঁকা। গলা মোম পড়ে আছে। শেষ হয়ে গিয়েছিল নাকি?
আমি ঝাঁঝালো গলায় বলতে চাইলাম বের হলো চিচি স্বর, ‘মোম না থাক লাইটারটা তো জ্বালাতে পারিস!’
‘ওটাও পাচ্ছি না। কোথায় রেখেছিলাম যেন। লাশের টেবিলে মনে হয়। লাশের বুকের তলে পড়ে গেছে।’
‘কিছু না পেলে অন্তত তোর ক্যামেরার লাইট জ্বালা। তাতেই দেখি। ভয়ের ছবি করতে এসে দেখি নিজেরাই ভয়ে হাবুডুবু খাচ্ছি। লাশের চেহারা হামিদ ভাইয়ের মত কেন?’
হাসান খাটের উপর থেকে ক্যামেরা নিয়ে অন্ধকারের সুইচ-টুইচ টিপছে। এমন সময় বাইরে ঝড়বুষ্টির সাথে বিদ্যুৎ চমকে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার ঘরের ভেতর যেন এক ঝলক দেখা গেল।
আর সেই এক ঝলক আলোয় দেখলাম ডিসেকশান টেবিল শুন্য। কেউ নেই। সাদা চাদরটা পর্যন্ত।