উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। তৃতীয় পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। প্রথম পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। দ্বিতীয় পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। তৃতীয় পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। চতুর্থ পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। পঞ্চম পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। ষষ্ঠ পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। সপ্তম পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। অষ্টম পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। নবম পর্ব
- উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। দশম পর্ব
পর্ব-৩
বাদ দেয়া যাক কংকাল নিয়ে আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত। ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছাবার ঝামেলা। ঝামেলা বলতে গাড়িতে পুলিশের চেক, জেরা। যখন জানতে পারে কংকাল আমি ব্যবসা করতে নিয়ে যাচ্ছি না, যাচ্ছি পড়তে। তখন পুলিশ আমাকে একটু সমীহের চোখেই দেখে। আমাদের দেশে এখনও শিক্ষিত শ্রেণীর কিছুটা মর্যাদা অবশিষ্ট আছে। পুলিশ সমীহ করলেও প্রাপ্য ছাড়তে ভোলেনি। হাতের ফাঁকে কিছু টাকা গুঁজে দিতে হয়েছে। আর এ বিষয়টা আব্বার দেখাদেখি আমি কিছুটা শিখে নিয়েছি। থ্যাঙ্কস গড ফর করাপশন। আর টাকা এমন এক জিনিস তা যখন মুখ খোলে তখন অন্য সবাই চুপ করে থাকে।
ভ্রমণ বৃত্তান্তের মত ঢাকায় বসবাসের কিছুদিনও বোধ হয় এড়িয়ে গেলে আমার গল্পের উনিশ বিশ হবে না। টাকা পয়সার সমস্যা না থাকায় বেশ ভাল একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়ে উত্তরার দিকেই উঠেছি। আমাদের বেসরকারী মেডিকেল কলেজটা ওখানেই। অবশ্য আমি একা না। আমার মেডিকেলের আরও কয়েকজন বন্ধুর সাথেই। ডাক্তারী এমন পড়া যা একা একা পড়ে ওঠা সম্ভব নয়। সবাই মিলে ডিসকাশন করেই পড়তে হয়।
মেডিকেলে বেশ সময় চলে যাচ্ছে। প্রচুর পড়া। পড়ার চাপে আর ওসব ডাইল, গাঁজা ছাইপাশ গেলার সময় পাচ্ছি না। আর এখানে এসে আবিষ্কার করলাম আসলে আমি ড্রাগ এডিক্ট নই। হাতের কাছে পাওয়া যেত বলে গিলতাম। আর এখানে তেমন সঙ্গী সাথী পাচ্ছি না বলে ওসব খাওয়া হয়ে উঠছে না। তাতে যে আমার সময় খুব একটা খারাপ কাটছে তা নয়। বরং ভালই কাটছে। মিঃ হাইডের মধ্যেও বোধ হয় ডক্টর জেকিল সুপ্ত থাকে।
মেডিকেলে অস্বাভাবিক তেমন কোন ঘটনাও ঘটে না। প্রথম প্রথম লাশ কাটতে যেয়ে একটু খারাপ লাগতো। মেয়ে গুলো ‘ওহ শিট, ওহ শিট’ করতো আর ফর্মালিনের ঝাঝাঁলো আঁচে চোখ দিয়ে পানি ঝরতো। মাঝে মধ্যে মর্গের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় উৎকট গন্ধে বমি করে ফেলতো। অবশ্য আমাদের টিচাররা লাশ কাটার প্রথম কয়েক মাসে মাংস জাতীয় কিছু না খাওয়ার অনুরোধ করতেন। খেলে বমি টমি হতে পারে। আমাদের ব্যাচের অনেক ছেলেরাই নাকি বমি করেছে। মেডিকেলের প্রচলিত গল্পটা আমরা এসেও শুনি।
এক বন্ধু আরেক বন্ধুর সাথে বাজি ধরে যে, সে যদি মেডিকেলের মর্গের ভেতর এক রাত কাটাতে পারে তাহলে পরদিন তাকে শহরের সবচেয়ে ভাল চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে খাওয়াবে।
বাজির বন্ধু অতি উৎসাহী হয়ে সাহস দেখিয়ে বলল যে, সে শুধু রাতে থাকবে তাই নয়, মর্গের প্রতিটি সাদা চাদরে ঢেকে রাখা লাশের শক্ত ফাঁক হয়ে থাকা ঠোঁটের মধ্যে একটা করে চিনির তৈরি বাতাসা রেখে আসবে। যাতে সকালে এসে সবাই দেখে বুঝতে পারে সে সত্যিই রাতে মর্গে গিয়ে থেকেছিল। ফাঁকি দেয়নি।
কথামত বাজির দিন রাতে বাজির বন্ধু মর্গে চলে আসে।
গভীর রাতে মর্গের চাবি নিয়ে এসে মর্গের দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে বাজির বন্ধু।
বুক ঢিব ঢিব করলেও সাহসে ভর করে সে টেবিলের উপরে রাখা সাদা চাদরে ঢাকা হত কুচ্ছিত লাশগুলোর মুখে একে একে বাতাসা গুঁজে দেয়। চারটি লাশের মুখে বাতাসা গুঁজে পাঁচ নম্বরের সাদা চাদর সরিয়ে প্রায়ান্ধকার ঘরের মধ্যে শুয়ে থাকা লাশের মুখে বাতাসা পুরে দিতেই সে অবাক হয়ে দেখে লাশটি কড়মড় করে বাতাসাটা অতিদ্রুত গলাধঃকরণ করে ফেলেছে। ভয়ে দাত কপাটি লেগে যাওয়ার অবস্থা তার।
ঠিক সেই মুহুর্তে লাশটা ভূতের গলায় বলে ওঠে, ‘বাঁতাসা কিঁ আঁর একঁটা হঁবে?’
আর কিছু শুনতে পায় না বন্ধুটি। তার আগেই সে অজ্ঞান হয়ে গেছে।
বলা বাহুল্য, লাশের ভেক ধরে থাকা বাতাসা চাওয়া লাশটা ওর বাজি ধরা বন্ধু।