তিন রঙের তিনটি পাথর-২ লাল পাথরের লাল ছানা।। মালেক মাহমুদ

বৃষ্টিভেজা দিন চলে গেল। সারাদিনে সূর্যের মুখ দেখতে পেলনা কাশেম। রাত হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে। পাখির নিরবতা বলে দেয় রাত চলমান। রাতে হালকা শীতে ভালো ঘুম হলো কাশেমের। ফুরফুরা মেজাজ নিয়ে উঠোনে দাঁড়াল। চোখ মেলে তাকায় বাহিরের দিকে। দেখে প্রকৃতি তার রঙ পাল্টিয়েছে।
গতপসু যখন চৈত্রের শেষ লগনে ধুলোবালি খেলা করছে। উড়ছে ধুলিকণা। রোদের তাপদাহে পুড়ে যাচ্ছিল গা। রাত যেন আর শেষ হয় না। দুটি চোখ এক করাই ছিল কঠিন। সকালও সেই তাপদাহ নিয়ে খেলা করছিল। কিন্তু আজ সকালের লাল সূর্য আনন্দের বার্তা বয়ে নিয়ে এসেছে। চোখ শান্তি খুঁজে পেয়েছে। কাশেম তাকিয়ে দেখে গাছের পাতাগুলো হাসি দিয়েছে। হাঁস লাল ডিম দিয়েছে। ডিমটি ঠিক লাল পাথরের মতো দেখতে। ডিম হাতে নিয়ে কাশেমের মা, আপন মনে দেখছে। এরকম ডিম সে এর আগে কখনো দেখেনি। হাঁস তৈ তৈ করতে করতে পুকুরের জলের দিকে যেতে লাগল। কতদিন পুকুরের জলে যায়নি হাঁস।কীকরে যাবে? পুকুরে তো জল ছিল না। কালকের বৃষ্টিতে হাসি ফোটেছে হাঁসের। নতুন জলে ঝলমলে হাসি। জলও যে হাসতে পারে তা বুঝতে পারে কাশেম। কাশেমের মা বলতে থাকে, কাশেম দেখ দেখ হাঁসের ডিম লাল হয়েছে।
কী বলো মা! কই দেখি দেখি।
ঘর থেকে বেরিয়ে বাহিরে আসে। কাশেমের হাতে দেয় ডিম। কাশেম হাতে লাল ডিম নিয়ে বলে, তাই তো ঠিক লাল পাথরের মত।
সে আবার কি পাথর?
তোমাকে বলা হয়নি মা। গতকাল আমি কাকের কাছ থেকে তিনটি পাথর পেয়েছি। পাথর তিনটি তিন রঙের। তার ভেতরে একটি পাথর লাল। এই বলে চটকরে ঘরে চলে যায় কাশেম। হাতে করে নিয়ে আসে লাল রঙের পাথরটি। মা, লাল পাথর দেখে অবাক। তাকিয়ে থাকে পাথরের দিকে। মনের ভেতর নানা ধরণের প্রশ্ন উদয় হয়। নিজে নিজেই ভাবে, তারপর কাশেমকে বলে, যা এই ডিমটি লাল পাথরের সঙ্গে সযতনে রেখে দে। মায়ের কথা মত ডিম ও পাথর নিয়ে ঘরে যায় কাশেম। একটি বাঁশের ঝুড়িতে লাল ডিম ও লাল পাথর এক সঙ্গে রেখে দেয়।
পরেরদিন আর একটি লাল ডিম পাড়ে। কাশেমের মা সেই লাল ডিমটিও কাশেমের কাছে দেয়। কাশেম যথারীতি এককি জায়গায় রেখে দেয়। এভাবে সাতদিন সাতটি লাল ডিম পাড়ে। সাতদিন পরে হাঁস আর ডিম পাড়েনি, এই খবর নিয়ে এলো কাশেমের মা। কাশেম ঘরে গেল। বাঁশের ঝুড়িটিতে হাত দেবার আগেই চ্যাঁও চ্যাঁও শব্দ ভেসে এলো। কৌতূহলী মন ঝটপট খুলে দিল ঝুড়িটির মুখ, দেখতে পেল লালা ডিম থেকে লাল হাঁসের ছানা ফুটেছে। ছানাটি হাতে নিয়ে বাইরে আসে কাশেম। মা লাল ছানাটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মাটিতে রাখতেই হাঁস ছুটে আসে ছানাটির কাছে। হাঁসের আনন্দ কে দেখে। ছানাও মাকে পেয়ে অানন্দিত। হাঁস ধীরেধীরে জলের দিকে যেতে থাকে লাল ছানাটিও পিছে পিছে ছুটতে থাকে। প্রতিদিন একটি একটি করে ছানা ফুটে। কাশেম হাঁসের কাছে নামিয়ে দেয় ছানাদের দল বড় হতে থাকে। সাতদিনের আটটি ছানা। অদ্ভুত বেপার। পাথর থেকেও ফুটেছে হাঁসের ছানা। এটা কী অলৌকিক ঘটনা নাকি বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশ।
তাপ বিহিন সাতদিনে ডিম থেকে ছানা!
লাল পাথর থেকে ছানা!
হাঁসের ছানা কখনো লাল হয়নি এগুলো লাল!
সারাগ্রামে খবর ছড়িয়ে পড়ে লাল হাঁসের ছানার।
একটি লাল পাথরের লাল হাঁসের ছানা।
গ্রামের মানুষ কৌতূহলী হয়ে ওঠে। প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যায় কাশেমকে।
এই পাথর ঘরে রাখতেই যেমন বৃষ্টি হয়েছিল। তেমন জলে শীতল হয়েছিল মাটি। রাতে বেশ ভালো ঘুম হয়েছিল আমার। সবার পরে যে ছানাটি ফুটেছে সেই ছানাকে পাথরের ছানা মনে করছে কাশেম। এই ছানাটি সবার চাইতেও বড়। অল্প কয়েকদিনে গায়গতরে বেশ বড় হয়ে গেল। সাতদিন পরে ডিম দিতে শুরু করলো। ডিমের রঙও লাল। কিন্তু এই লাল ডিম থেকে ছানা ফুটাবে কীকরে?
কাশেম ভাবতে থাকে। তারপর সেই বাঁশের ঝুড়ির ভেতর কাপড় দিয়ে ঢ়েকে রাখে। সাতদিনে সাতটি লাল ডিম। সাতদিন পর থেকে লাল ডিম থেকে ছানা ফুটতে লাগলো। এভাবেই বেড়ে গেল লাল হাঁসের চাষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *