শিশুতোষ গল্প //ছোট্ট পাখি টুনটুনি// মালেক মাহমুদ

ছোট্ট পাখি টুনটুনি।
বলবো তোমার, গল্প বলার গুনগুলি।
টুনটুনি পাখি। দেখতে ছোটো হলে কি হবে? ভীষণ চটপটে। এ ডাল থেকে ও ডালে যেতে পারে তড়িৎ গতিতে। স্থীর হয়ে বসতে পারলেই, শুরু করে দিবে গল্প। গল্প বলায় ভীষণ পটু।
তোমাদের সাথে টুনটুনি কি কখনো গল্প করছে?
না, করেনি।
কি করে করবে? টুনটুনি তো আর একা একা গল্প বলতে পারে না। গল্প বলতে হলে, একজন শ্রোতা দরকার হয়। যখনি তুমি শ্রোতা পেয়ে যাবে, তখনি গল্প বলার মজাও পেয়ে যাবে। টুনটুনি মাঝে মাঝে আমাকে শ্রোতা হিসেবে পেয়ে যায়। তখনি টুনটুনির গল্প বলার জোসও বেড়ে যায়। আমি শুনতে থাকি তার দুখের গল্প। দুখের গল্পে দুঃখ নাই। আছে, সাবধানতার বাণী। আমি টেবিলে বসে আছি। মনযোগ সহকারে কান পেতে আছি। শুনবো টুনটুনির গল্প। আমার ছিমের মাচার পাশে ভ্যান্না গাছ। সেই গাছটির পাতায় টুনটুনির বাসা করেছে। ও পাশে সজনে গাছ। ঐ গাছে ঘুঘু পাখির বাসা। ঘুঘুপাখি ডিম থেকে ছানা ফোটাবে বলেই, বাসায় বসে ডিম তা দেয়। দিনরাত তা দিতেই থাকে। ক্ষুধা বলে একটি কথা আছে। এই ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে হবে তাকে। পাখিতো সঞ্চয় বোঝে না। কেউ খারাব এনে দিবে তেমন কেউ নাই। তাই, আহারের খোঁজে যেতে হয় বাইরে। ডিমের পাহারাদার ডিম নিজেই। টুনটুনি দেখে এলো ডিমগুলি। পরের উপকার করতে পারাই তার আনন্দ। আজ ডিমগুলি বিপদে পড়তে যাচ্ছে। টুনটুনি আগেই বুঝতে পেরেছে। কি করে বুঝতে পারলো সেই বিপদের পূর্ব সংবাদ। অভিজ্ঞতা একটি বড়ো বিষয়। অভিজ্ঞতার আলোকেই বুঝতে পারে টুনটুনি। একদিন টুনটুনি মন খারাপ করে বসে আছে। তখনও তার বাসাটি ঠিক মতো বানানো হয়নি। যেখানে সে বসে ছিল। সেখানেই একটি পাখির বাসা দেখতে পেলো। আরও দেখতে পেলো দুটি ডিম। ডিম রেখে পাখি খাবারের খোঁজে গেছে। এমন সময় একটি সাপ গাছের দিকে আসতে লাগলো। টুনটুনি দেখে। ভাবে, সাপ গাছের দিকে কেনো আসছে? টুনটুনি তখনো জানে না। সাপ কি করতে চায়? কেনো গাছে উঠছে?পিলপিল করে গাছে উঠছে। টুনটুনি দেখছে তো দেখছে। কি করবে ভেবে পায় না। সাপ উঠে যায় পাখির বাসায়। যে ডিম থেকে ছানা হবে সেই ডিমের জীবন্ত মৃত্যু ঘটে সাপের পেটে। তখন টুনটুনি বুঝতে সাপ ডিম খায়। গিলে ফেলে জীবন্ত প্রাণী। জীবনে বেঁচে থাকতে হলে কতজনের সাথে লড়াই করতে হবে। পাখি তার ডিম না পেয়ে আহাজারি করতে লাগলো। টুনটুনির মনে খুব দুঃখ হয়েছিল। এর পারে যখন তার বাসা বুনন শেষ হলো। প্রতিবেশি হিসেবে পেলো ঘুঘুকে। সে ডিম ফোটাবে, ছানা দেখার আনন্দে মেতে থাকবে। তাই, নাখেয়ে ডিমে তা দিয়ে যাচ্ছে। টুনটুনি বলছে, “এভাবে নাখেয়ে থাকলে তুমি নিজেই বাঁচবে না। কি করে ডিম ফুটিয়ে ছানা ফোটাবে?”
“জানি, কি করো ডিমতো রক্ষা করতে হবে?”
“জানি, ডিম রক্ষা করার জন্য নিজে তিলেতিলে শেষ করে দিবে?”
“কোনো উপায় নাই।”
“আছে।”
“কি উপায়?”
“আমি তোমার ডিম পাহারা দিবো।”
“তুমি এতো ছোট্ট, তুমি কী পারবে?”
“তুমি কোথায় যাবে, আমাকে বলে যাও। বিপদ সংবাদ পেলেই আমি তোমাকে জানিয়ে দিব।”
“বেশ তাই হবে।”
ঘুঘুপাখি উড়াল দিল আহারের খোঁজে। টুনটুনি ডিমের আশপাশে ঘুরাঘুরি করছে। এমন সময় দেখতে পেলো একটি সাপ। পিলপিল করে হাঁটছে। টুনটুনির মনে পড়ে গেল পূর্বের ঘটনা। যেভাবে গিলে খেয়েছে ডিম দুটো। হায়! এখন, কি করে বাঁচাবে ডিম। টুনটুনি জীবন বাজি রেখে উড়তে থাকে। আর বলতে থাকে আমি বুঝি আমার ওয়াদা রক্ষা করতে পারবো না। ঝিলের ধারেই পেয়ে গেলো ঘুঘুপাখিকে। টুনটুনিকে দেখেই। ঘুঘুপাখির পিলে চমকে ওঠে। পুরো বিবরণ শোনার সময় নাই। উড়াল দিয়ে উড়ে যায় বাসার কাছে। সাপও বাসার নিকটবর্তী। যুদ্ধে মেতে ওঠে দু’জন। সাপ হয়ে যায় পাখির কাছে পরাজিত। টুনটুনি তাকিয়ে দেখতে থাকে।
টুনটুনি সেই থেকে হালকা পাতায় বাসা বুনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *