কবি ফারুক সুমনের জন্মদিনে কাব্যশীলনের শুভেচ্ছা

[কবি ও প্রাবন্ধিক ফারুক সুমন। কবিতা-গদ্যে সমান সচল। তাঁর কবিতা স্বতঃস্ফূর্ত। শব্দবুনন এবং ভাবের বিন্যাসে সহজিয়া অনুভবের অনুগামী। তাঁর কাব্যভাষায় সাঙ্গীতিক দ্যোতনা সৃজনের ভেতর দিয়ে কাব্যবোধের উদ্ভাস লক্ষ করা যায়।

প্রবন্ধ লেখায় ফারুক সুমন ব্যক্তিগত বিশ্লেষণকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। প্রবন্ধের বিষয় ও ভাষার মধ্যে একধরনের সারল্য লক্ষণীয়। প্রাঞ্জল গদ্যভাষা কোথাও কোথাও কাব্যময়তা পেয়েছে। বোধকরি কবি’র হাতের গদ্য বলেই এমনটি হয়েছে। প্রবন্ধের বিষয় ও অন্তর্নিহিত বোধকে প্রকাশ করতে গিয়ে ফারুক সুমন ভাবনার যে বিস্তার ঘটিয়েছেন, তা আদতেই আশাজাগানিয়া ব্যাপার।

জন্ম: ১ মার্চ ১৯৮৫। শাহরাস্তি, চাঁদপুর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর (প্রথম শ্রেণি) এবং উচ্চতর এম. ফিল. (২০১৪) ডিগ্রি অর্জন। পিএইচডি ফেলো। একাডেমিক কৃতিত্বের জন্য পেয়েছেন ‘নিপ্পন ফাউন্ডেশন অব জাপান’ (২০০৬) শিক্ষাবৃত্তি। ২০১৯ সালে যথাক্রমে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘সাউথ এশিয়ান লিটারেচার ফেস্টিভাল’ এবং ‘নেপাল আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন’-এ অংশগ্রহণ। সম্পাদনা করেছেন (যৌথ) লিটল ম্যাগাজিন ‘অক্ষৌহিণী’। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ‘Poem Vein Bangla’। বর্তমানে ‘বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ’ (রাইফেলস কলেজ, বিজিবি সদর, পিলখানা, ঢাকা)- এ বাংলা বিষয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন।]

প্রকাশিত গ্রন্থ:

♦কাব্যগ্রন্থ
‘অচঞ্চল জলের ভিতর নিরাকার বসে’
‘আঙুলের ডগায় সূর্যোদয়’
‘বিচঞ্চল বৃষ্টিবিহার’

♦গবেষণা/প্রবন্ধগ্রন্থ:
‘শামসুর রাহমানের কবিতা: নগর-চেতনা ও নাগরিক অনুষঙ্গ’
‘শিল্পের করতালি’
‘শামসুর রাহমানের কাব্যস্বর’

♦ভ্রমণগদ্য
‘ভ্রমণে অবাক অবগাহন’

♦সম্মাননা:
‘রউফিয়ান রিদম সাহিত্য সম্মাননা-২০১৬’ ‘উচ্ছ্বাস-প্রহর সাহিত্য সম্মাননা-২০১৯’ ‘সমতটের কাগজ লেখক সম্মাননা-২০২০’]

ফারুক সুমনের কবিতা

জলধোয়া দেহ

অচঞ্চল জলের ভাষায় ডেকেছিলে কবে?
মনে নেই আঁকাবাঁকা ঢেউ
মনে নেই ডেকেছিল কেউ।

অচঞ্চল জলের ভাষায় ডেকেছিলে কবে?
মনে নেই জলের বুদবুদ
মনে নেই জলধোয়া সুখ।

অচঞ্চল জলের ভাষায় ডেকেছিলে কবে?
মনে নেই জলজ জোয়ার
মনে নেই জলজ বিহার।

তারপর জলবাসের আশায়..
ফেনায়িত দীর্ঘ ভ্রমণ
গাঢ়তর গভীর রমণ।
তবুও আঁকাবাঁকা সাপের সাঁতার
তবুও প্লাবন….

গাঙের ঘাটে ঘাটে জলধোয়া দেহ
আমারে ডাকে না, ডাকে না কেহ।

আদর্শলিপি ও ধারাপাত

তারপর কালের কলস ভেঙে জলের হাসিমুখ
গড়িয়ে পড়ে বয়সের পৌরাণিক সিঁড়ি বেয়ে
যতই গত হয় দিন, অবনত মনের হরিণ
আদর্শলিপি তলিয়ে যায় ধারাপাতের গহ্বরে।

সেই শৈশবে বর্ণপরিচয় আর নীতিপদ্য পড়ে
মায়ের স্নেহধারা বাবার মৃদু শাসন মনে পড়ে
শৈশবে আদর্শলিপি পড়ে শিখেছি বর্ণবানান
ভেবেছি এই বই বুঝি পৃথিবীর আসল সবক।

অথচ বয়সের ব্যবধানে জীবনসায়াহ্নে এসে
বিমূর্ত ধারাপাত হাতে বার্ধক্যে দিয়েছি হেলান
পাশেই শৈশব, আদি-আসল আদর্শলিপি,হায়!
আদর্শকথা তলিয়ে যায় ধারাপাতের গহ্বরে।

আদর্শলিপি, মানবিক বাগানে প্রথম বৃক্ষরোপণ
ধারাপাত, গণনা শিখে হয়েছি হিসেবি, লোভী।

ফসল কাটা মাঠে মাঠে বিরহ-নীরব

ঈর্ষার কলহাস্যের শিকার হয়ে-
ভীষণ বিনীত দেখ ময়ূরের মুখ
ঝাঁপি থেকে উড়ে যায় অদৃশ্য পাখি
কীভাবে রুখবে তারে আদরের সাখী।

বঁধুর আঁচলে বাঁধা প্রণয়ের ফুল
পাখি রূপে উড়ে যায় যদি হয় ভুল
একবার চোখে তার ভেঙেছে পাহাড়
তারপর কোনোদিন নেয়নি আহার।

আহারে চর্যার নারী টিলাতেই বাস
আজন্ম করেছিলে দুঃখের চাষ
জলরেখা দেখে দেখে শিখেছ প্রণয়
জলবনে একা-একা শুধু অভিনয়।

রক্তবর্ণ ফুল এনে দিয়েছ কসম
প্রণয়ের নাম করে দিও না জখম
এখন হেমন্ত ঋতু রিক্ত অনুভব
ফসল কাটা মাঠে মাঠে বিরহ-নীরব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *