ঈদসংখ্যার কবিতা।। হোসনে আরা জেমী

ঝরা পাতার গান

সে কবেই ছিঁড়ে গেছে ধূসর উত্তরীয়
আসন্ন শীতে বুকের উনুনে আগুন
রাতগুলো বিবর্ণ উত্তাপহীন
জীবনের পাশাপাশি হৃদয়ের কাছাকাছি
হারিয়ে যায় পুতুল খেলাদিন
মায়ায় জড়ানো অতীত ছবি
ভিজে আসা চোখ টলমল
অনাগত সময় ছায়া-পথে হারিয়ে যায়
চড়ুইপাখির বাঁধভাঙা কিচিরমিচিরে।

শীতে উষ্ণতা খোঁজে, মমতায় জড়িয়ে রাখে ভালোবাসার মায়া ডোরে।
রাতের আধার গলে কার্নিশে মায়াবী হাওয়া বয়
কী মমতায় বেঁধে রয় রাশি-রাশি ঘুমনিশিতের শীত হাওয়া।
মায়াবী চোখে জাদুর মায়াটুকু ছড়িয়ে দিলেই

পৃথিবী ফিরে পায় প্রেমের হাওয়া
যেয়ো না অজানা পিচ্ছিল পথে
সেখানে কুসুম-কুসুম অপুষ্ট-কাঁচা প্রেম।

সমুদ্রের ফেনায়িত কল্লোলের কাছে পাবে বিশালতার গল্প
পাহাড়ের ডাক শুনে পৌচ্ছে যাবে তার উচ্চতার কাছে
সেখানে ভেসে বেড়ায় হারানো সংলাপ
প্রজাপতির কোলাহোল
দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে পাতাদের উড়াউড়ি
বাতাবীলেবু ফুলের আঘ্রানে
হারিয়ে যায় সবুজাভ, হলুদ, কমলায় ঝারা পাতাদের গান

পলকহীন দৃষ্টি পাবে একটি অদেখা নতুন ভোরের
এলোমেলো বাতাসে ঝরা পাতাদের উড়াউড়ি সুর তুলবে আগামীর।

তৃষিত হৃদয়

মরে যাওয়া মন বেঁচে থাকে কতটা অবহেলায়
সরে যাওয়া মন চলে যায় দূরে কতটা সন্দেহে
স্মৃতিতে থাকা গল্প ভিজে যায় কতটা কান্নায়
বৃষ্টি ধুয়ে কতটা রোদে শুকোয় নিকানো উঠোন।

আলো আধারিতে কতটা ছুঁয়ে যায় ভালোবাসা
বুকের ভেতর কতটা প্রেম জাগলে প্রেমিক হয়
নীরবে কাছে এলে কতটা কাছে থাকা হয়
একলা দুপুরে কতটা ঘৃনায় কান্নায় চোখ ভিজে
তৃষিত হৃদয় কতটা ছুয়ে দিলে কেঁপে উঠে অজানায়।

কতটা পথ পাশে হাঁটলে কাছে আসা যায়
মনের গভীরে কতটা ক্ষরণ হলে জীবন সুন্দর হয়!!

যে স্মৃতি ধূসর নয়

ধূসর শহরের অলিগলির প্রান্তে কেউ নেই কোথাও
হারিয়ে গিয়েছে ঝিঝি ডাকা শব্দ দূরে
১০২ নম্বর বাসের শেষ স্টপেজে এসেও নামা হলো না।

অর্ধবৃত্ত ঘুরে সেই একই পথ দিয়ে ফেরা
নিজের সাথে নিজের কথা বলা
ভরা জোছনায় পূর্ণ চাঁদ-
কখন সিএন টাওয়ার স্পর্শ করলো-
দূর থেকে তা দেখা গেলো না।

সন্ধ্যা নামার আগেই কোলাহল থেমে যায়
ঝড় বৃষ্টির জলে একা দাঁড়িয়ে,
মেঘ উড়ে যায় পূব-পশ্চিমে-
উওর থেকে দক্ষিনের নীলে।

কিংস্টনে’র রাস্তার শেষ দেখার আগেই
সন্ধ্যা ঘনায়,
প্রিয় কবিতা আওরানোর আগেই-
এক দলছুট মেঘ ভিজিয়ে দিয়ে চলে যায় দূরে।

এখনো ঝড়-বৃষ্টিতে শুনি আগাম বন্যার আগমন
ভাসিয়ে দেয় মাঠের ফসল
ভেসে যায় প্রিয় পুতুল
ঝাপসা হয়ে যায় সেই দুঃসহ দিনগুলো
তবুও, মনে আছে সেই দিনগুলো।

মনে আছে কি তোমার
খবর শোনার আসর জমতো খাংকা ঘরের বারান্দায়,
আর উৎসুক দৃষ্টি যেতো দূরের হাইওয়েতে
অন্ধকারে গুনে চলতে শত্রু পক্ষের গাড়ীর হেডলাইট?

স্বাক্ষী ছিলো দূরের গাছ, সবুজ ধান ক্ষেত
স্বাক্ষী ছিলাম আমিও
কত কত অচেনা মানুষ
আর সেই আশ্চর্য মেঘদল।

মনে আছে সেই নারকীয় দিনগুলোর কথা
শত শত হত্যার কথা শহরের অলি-গলিতে
মাঠে-ঘাটে, পুকুরে, ডোবায়, নদীতে
কত কিছু হারিয়ে পৃথিবীর আলো দেখলো একটা নতুন দেশ
পেলো লাল সবুজে আঁকা একটি নতুন পাতাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *