ঈদসংখ্যার কবিতা।। রায়হান উল্লাহ

১. লাল রঙের কথা

লাল রঙা কথাগুলো এগিয়ে যায়। বিশ্ব সংসারে। নিউরনে আলো ছড়ে। কথাগুলো পড়া হয়। লজ্জিত চরাচর। কেমনে তোমারে বলি— হে জীবন। মায়াবাদীর ভাঙচুর।

মন ভেঙে ফেলি। ভেঙেই গড়াগড়ি। দুঃখ-সুখ কথামালা। চুপকথা কথকতা; এপিটাফ নীরবতা।

আমরা এমনই, জীবনের ঢঙ। যতসব তন্ত্র, মন্ত্র বলে— একা, একা, শুধু একা। এভাবেই দ্রোহের রাউ। একার গোধূলি। লাল আভা; লাল অক্ষর, নির্ঘণ্ট। তপ্ত পিঠে আড়মোড়া। এক একটি দীর্ঘশ্বাস। এগিয়ে যাও; একার রোজনামচা। সময়-সভ্যতা সব গাঁথা হয়।

মাটির সংসার। বন্দি সব হিসাব। ওপারে বাজে আহ, ওহ। জীবন দিয়েছে তারে একার সত্তা। যতই বাজাবাজি, কানাকানি, ফিসফাস। কে কখন কার তরে গিয়েছে?

পদগুলো কেঁদে ফিরে। সে আর আসবে না। একা দোকা হয় না। তবু লাল। কী যেন বলা হয়। লাভ নেই, ক্ষরণ নেই। কী যেন কী নেই। তবু আছে কিছু। তিনি এই ভ্রহ্মাণ্ডের, সময়ের।

এটুকু ধরতেই গাওয়া গান। নীরব সুনসান ঢঙালাপ। তবু থাকা। আর কিছু লাগে কি? কিছুতেই কিছু নেই। কিছুই হারাবার নেই। কিছুই পাওয়ার নেই। গুমোট লাল অক্ষর।

বৃষ্টিকাব্য ২

অসীম শূন্য থেকে জল গড়ায়। আমরা তাকে বিশেষায়িত করি— বৃষ্টি, ভাষাভেদে আরও কত কি। বৃষ্টিকে কী বলা যায়— মাটির উপশম, আকাশের কান্না, প্রকৃতির করুণা, পরিবেশের নিয়মরক্ষা? বলাবলির হল্লায়, জলের পাল্লায়, সৃষ্টির মাথা বিগড়ায়। নদীর মাঝি গান ধরে, গ্রাম্যবধূ সখিনা গুনগুন করে, কিশোর করিম অতীত-ভবিষ্যত সব ভুলে যায়। তার বর্তমান বলে— আকাশ ফুটো হয়ে গেছে, আহ কী আনন্দ! নাগরিক ঘরহীন বাতেন বৃষ্টির তাল-লয় ধরে গুমরে কাঁদে। তার কাছে বৃষ্টি মানেই উলটপালট। বৃষ্টির তাতে কী এসে যায়? বৃষ্টি সুদূর কোনো নগরে অ্যান্ডারসনের মন উতলা করে। তার কাছে বৃষ্টি মানেই লং ড্রাইভ। গাড়ির দৃষ্টি ঠিক রেখে বাকি সব ভেসে যাক। মাঝে-সাঝে দু-চার পেগ, চুমুক, এলোমেলো ভাবালুতা। বৃষ্টি বয়েই যায়। ঢাকার বৃদ্ধ রিকশাচালক হিসাব কষে, আজকের কামাইয়ে দু’কেজি চাল কেনা হবে তো। আগামীকাল না আবার জ্বর এসে যায়। ঘর মানে বস্তির ছাপরাতে চারটি বুভুক্ষু প্রাণ, তার ফেরার আশায়। বৃষ্টির এসব দেখলে চলে। আগল ভেঙে তাকেও নির্ভার হতে হয়। প্রহসন হতে পারে— বৃষ্টির দিনে রাউ ভাবে, আজ দু’লাইন লেখা যাবে? প্রহসন বাকি থাকে— পাঠক ভাবে, এসব লেখা হলে, লেখার নিকুচি করি! তবুও বৃষ্টি রিমঝিম সুর তোলে, মাঠ-ঘাট-বন-বাদাড় পেরিয়ে!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *