জেসমিন সুলতানা’র কবিতা

নগর বাউলের কথা

পাখির পালক ছুঁয়ে সন্ধ‍্যা নামে অরণ‍্যের গায়ে
ধ‍্যানমগ্ন গোধূলিকে; দেখি দিগন্তের শেষে;
বুক খোলা হ্রদে!
অস্তরাগের আভায়; পুলকিত মেঘের বিজরী
ঝর্ণার দুচোখ বেয়ে; শাশ্বতিক জলের প্রবাহ
শরীর সীমান্ত বেয়ে নেমে আসে শ্রাবণের জল
ফেরারী বসন্তে লাল পলাশের নেশা!
ষোড়শী সন্ধ‍‍্যার জাগরুক চোখ নৈঃশব্দের কোলে
তবুও একাকী হাঁটে শৈল চারুলতা
বিষণ্নতার চাদরে ঢেকে রাখে চোখ,
আঁচলের ভাঁজে ভাঁজে গান, আর গল্পে,
সেথা তাঁর জড়ানো আছে নগর বাউলের কথা।

মাতাল হাওয়া

কোন এক খোয়াবী রাতের নিষুপ্ত বৃষ্টির মুঠোজলে
চাঁদের অমবশ‍্যায়, একদিন তরল জোৎস্না হবে।
বৈরাগী আকাশ যদিবা হাসে শুকতারা রাতে,
নেশায় উড়িয়ে দিও তোমার বিশ্বাস।
সবটুকু ভালবাসা শুষে নেব
সেদিন নেশাতুর ডাহুকের মত।
পৌষের ঘুঘুর মত বসে
তুমিও না হয় কাটিয়ে দিও
কোন এক চন্দ্রঝরা আশ্বিনের রাত।
জলকাঁপা ঢেউ বেসামাল সুখে
নোঙর ফেলে দিয়ে ঘাটে।
সে কথা শুনে বুকজল স্রোতে
হৃদখাঁচা থেকে উড়াল দিল কি?
সেই কাপালিক মেঘ, নতুন কোন দারুদিনি দ্বীপে?
অঝোর বরষনে আমার অর্কেস্ট্রায় তখনো
সে গানের সিম্ফনী!
যে গান শুনে মুগ্ধ হয়েছিল কোন মাতাল হাওয়া।

নিঃশব্দে হেঁটেছিল কেউ

একদিন সমুদ্র স্নান শেষে শিরিষের উদোম ডালে মৌটুসির গান শুনে চন্দ্রঝরা রাতের
বুকে, প্রনয়ের ঝড় আসে!
পাখির পালকে খসে পড়া নক্ষত্র স্হির চোখে ছুঁয়ছিল অরণ‍্য।
কোন এক পথহারা রুপালি
জোছনাকে, ক্ষয়ে যেতে দেখে, শিশুর মত কেঁদেছিল অমাবশ‍্যার চাঁদ।
তখনো নিঃশব্দে হেঁটেছিল কেউ, অগণন তারার ভেতর।
খুব নিশ্চুপে নিঃশ্বাস নিয়েছিল কেউ, ভারী পাথরের নীচ থেকে।
ভীষণ অবাক চোখে চেয়ে দেখেছে, সে এক বদলে যাওয়া পৃথিবী, বদলে যাওয়া চারপাশ।
সদ‍্য নেমে আসা সন্ধ‍্যায়, জলের খুব গভীরে, তখনো মোমবাতি ধরে আছে কেউ! সে মৃদু আলোয় পুড়ে গেছে মন।
সমুদ্রতটে ঢেউয়ের স্রোতে, বেওয়ারিশ জোছনায় কার ছায়া!
ইশারায় ডেকে যায় কেন, কোনো কুয়াকাটা ভোর?
জলের শব্দের তোড়ে, কার ভালবাসার সুর ,ঝংকার তোলে কার বেসুরো বীণায়?
কার নূপুর নিক্কনে প্রেম জাগে, কোন পৌরাণিক পৌরুষে?
কার শাড়ির আঁচল উড়ে গিয়ে ঢেকে দেয়, দেবতার খোলা চোখ!
তখনো কি কেউ? হেঁটে যায়, খুব নিঃশব্দে সমুদ্রতটের চোরাবালু পথে, দেবদারু খোলা চুলে।

লোলিত অধরে

তপ্ত খড় দুপুর , সোনালি রোদে মেঘেদের অনুপম কারুকাজ!
আকাশ মেঘের ধ্রুপদ সঙ্গীত শোনা যায় অন‍্য আকাশের নীচে
রোদপোড়া অনুরাগী বাঁশি; বেজে যায় উদাসী দুপুর হাওয়ায়।
ঝাপালী গাছের ছায়ে,ঘুঘুর বিষাদ সুরে,
নদীর দুপাড় ভাঙে।
বন মহুয়ায় কেঁওড়া ফুলের সুবাসিত ঘ্রাণে
মৌমাছির গুঞ্জরণে পুলকিত মৌয়ালের প্রাণ!
লোলিত অধরে কৃষাণীর হাসি আমন ধানের ক্ষেতে
আশ্বীনের রোদ শেষে, কিছু পরে
গোধূলি আলোয় সন্ধ‍্যা নামিবে
ললিত মাধুরী সুরে।

কথা ছিল

শাওন ভাদোর মিলন মোহনায় ঠাঁয় বসে আছি
আমি এক প্রাচীন প্রস্তরখন্ড।
কত যুগ, কতকাল!
বুকের উপর সশব্দে
আচড়ে পড়া ঢেউ নিয়ে
মহাকালের দিকে তাকিয়ে আছি
সেই কবে থেকে!
টলটলে স্বচ্ছ জলের ভেতরে জল কুমারী ফুলগুলো!
ওদের নরম ছোঁয়ায় কখনো কখনো ভুলে যাই অপেক্ষায় আছি।
হেমন্তের দূর্বা শিশিরে
ভেজা ভেজা পায়ে
তবে কি কারুর আসার কথা ছিল?
কথা কি ছিল? অন্ধকার রাতে
আকাশের রুপালি চাঁদোয়ার নীচে
অগণণ তারার স্পন্দন, আর জোনাকির ঝাড় লন্ঠন
হাতে নিয়ে আমাকে দেখতে আসার?
কথা কি ছিল?
প্রভাত সূর্যের নরম রোদ্দুরে বসে
গহীন জলের গান শুনতে শুনতে নদীর ঢেউজলে হারিয়ে যাবার?
কথা কি ছিল?
আরণ‍্য আকাশে মাটিতে মেঘ হয়ে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াবার?
প্রজাপতি আর ঘাস ফড়িং হয়ে সুগন্ধি কোনো গোলাপ পাপড়িতে
অথবা সবুজ ঘাসের উদ্দ‍্যানে মন হারাবার?
কথা কি ছিল?
ঘন কুয়াশায় স্বচ্ছ শিশির জল ছুঁয়ে প্রতিশ্রুতি দেবার?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *