কাব্যশীলন উৎসব সংখ্যার কবিতা কবি মোহাম্মদ রফিক

তাৎক্ষণিক

যা-ই বলো, তবে, ওরা মেয়ে,
যত নোংরা, কাপড়ের ডাঁই;
রোদে, বাইরে শুকোতে দাও হে

সাম্রাজ্য- সম্মান, বাঁচুক তো;
সত্য-মিথ্যা, কাগজের টুকরো,
ছিঁড়ে, ফেলো বাতিল ঝুড়িতে;

ঊর্ধ্বে থাক, শাসন-পতাকা,
বইলে হাওয়া, মহাবেগতিক,
হাত- ধুতে,যতটা সময়;

মুখে, মুখোশের, পূত:স্নাত,
কচু আপেলের, সবুজাভ
স্বাদেগন্ধে, বাক উচ্চকিত ;

কে বলেছে, হিটলার মৃত;
খোলা চোখে, শুনুন দু’কানে,
জীবতু, গোয়েবেলসের জয় !

প্রভাতিয়া

শুনি, মাষ্নের কলস্বর,
তুমি বলো, পত্রের জিকির;
বললে, ইহজন্ম ইবাদত,
আমি বলি, মৃত্যুর অর্চণা;

ভূমিবিশ্ব গ্রন্থ,পাঠান্তরে
পাঠ হয়, তোমাতে- আমাতে;
অরূপে- স্বরূপে, প্রতিরূপ,
এই জন্ম, কোন জন্মান্তরে;

ভাবি, আজও স্রোত, উষ্ণহিম,
আলোহাওয়া, ত্রি-তালে বিস্তার,
কুসুমিত, কাদামাটি ঘর,
তোমাতে আমার, সৃষ্দিনাদ;

ওঁয়া, কই, কোথায় পালাল,
আত্ম-সংহরণ, পথে পথ,
পদ্মপাতা পদ্মকুঁড়ি, ঘিরে
ভ্রমর-ভ্রমরা, জাগো দিন!

আমি, তুমি

কোন কাল্পনিক, সৌরসাধ
ক্ষণজন্ম যপে, মৃততৃণবৎ
নিষিক্ত পাথারে, সর্বংসহা
স্বপ্নধোয়া ভোর, মধুরম;

নিহিত অস্তিত্বে, অবান্তর
নিরাস্তিত্ব, কালসিটে, কালো,
ধরণি-আকাশ, ভূ-মণ্ডল;
মাথামুণ্ড, খইয়ে বসে, কবে

বসতির মাটিজল, তল
মাংস খুঁড়ে, তৈরি ঘরবাট,
তোমাতে-আমাতে, গর্ভভুঁয়ে
বজ্রমানিকের, সর্পরাজ;

বিষ নয়, তীব্র হলাহল,
দংশন, কতটা প্রাণঘাতী,
নির্বাস, এমত চরাচর,
সংরাগ, অতীত-আগামির;

কী বলি, হে প্রভু, সে যে কাল,
মহাকাল, রূপ অনশ্বর,
অতিলৌকিকস্য, ধরান্তর;
সংখ্যা, দাগ, দিকচিহ্ন নয়;

নিরাকার নিরালম্ব, নির
মহাশূন্যে, ক্ষণ অধিকার
বসতি, শ্মশান- গোরস্তান;
হায় খোদা, ইয়া ভগবান!

ফুলপাখি

পরিত্যাক্ত, বর্জ্যের গাদায়,
বধ্যভূমি, ভাগাড় উজিয়ে

কঙ্কালের স্তূপে, ফুল ফোটে;
আমিও দেখেছি, ভস্মডাঁইয়ে,
শ্যাওলাজমা, ফাটিয় পাথর,
গুহাগাত্রে. কৈলাস ধামের;
মানসসরোবর, উলটে- পালটে,
পারাবার, তীর-বরাবর,
শুনেছি,বরফ সাম্রাজ্যেও
অজস্র অবাধ, অকুণ্ঠিত

শুধু, অগ্নিপুষ্প কল্পনায়,
কাঁটাতারে, দু:সহ বিমূঢ়
রঙ, প্রতিবাদী গুল্মহেনা;
অন্ধচোখ, সতৃষ্ণ আকুল

ফুলের নেপথ্যে, পাখি ডাকে,
কুয়াশামোড়ানো ধোঁয়া, ভোর;
লাবণী প্রভাতী, ভেজাপাপড়ি,
পাখি ফুল নীলিম অবণী,

তোমার প্রাণের, মানমন্দির,
সে পথ, চিনি নি যে এখনো;

পুষ্পেল শরণং, দরগাহ;
পাখির আজান,দেবালয়ে॥

স্বপ্নমায়া

আকাশ -পৃথিবী,
সহমরণের চিতা;
তখনও আগুন, দাউ-দাউ;
দু’টি ছায়া নেমে এল, ভস্মকায়া;

হাতে-হাত, শক্তমুঠো, পা- বাড়াত,
ঝোপের গহনে; হাওয়ায়- হাওয়ায়,
চুম্বনের শ্বাস, মাটিজল,
খোঁড়ে দেহে, বসতিসময়;

ঝড়েবানে, মহাকাল;
খোঁজ রাখে কি কেউ, না-জানা
চোখে-চোখ, চিহ্নদৃষ্টিময়,
চন্দনের শুকনো ডাল, ঘ্রাণ

পরিতাপী: তৈরি হয়,
চিতার চৌকাঠ, গৃহে-গৃহ,
প্রদোষ আলোয়, হলুদাভ
ছায়ামুখা, নদীর ভাঙন

স্বপ্নধোয়া, তীর জুড়ে,
পৃথিবী-আকাশ, ত্রি-ভুবনে !

অলীক আলেয়া

না, তুমি তো আমাকে দেখো নি,
না, আমি যে তোমাকে চিনি নি;
এই তুচ্ছ, না- দেখা দেখির ,
সারাৎসার, চেনা না চেনার;
মহাগীত, রচিত হয়েছে
ভাঙনের, তটভূমি বেয়ে,
দূর, কোন অলকানন্দায়
তোলে সুর, ভাটিতে জোয়ার;
তুমি-আমি, কেউ কি জেনেছি ;

মল্লিকের বেড় ছেড়ে, সেই
প্রাগৈতিহাসিক ডিঙি, কবে,
পাড়ি ধরে, আলো-আঁধারি
রঙঢঙ, আবর্ত মোহন,
সলিলে সমাধি, হল কি বা,
স্মৃতিসৌধ, চাঁদের মিনারে,
জলকেলি ঢেঊ, কাহিনির
সাধিকা সাধন, অতলের
প্রলয় বিলয়, ইতিকথা;

অবশেষ, তুমি ফেরো, প্রিয়ে,
কে জানে কি, অনন্ত নি: সীম;
দূরকণ্ঠে, ধূপছায়া, ঘ্রাণে,
না-ই হল যাওয়া, সে-ই ভালো !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *