সাফিকা জহুরা জেসী’র কবিতা

মুক্ত কারাগার!

আমি এখন মুক্ত কারাগারে থাকি!
হ্যাঁ, মুক্ত কারাগার!
আমার হাত-পা খোলা, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সমুদ্রতুল্য!
মন চাইলেও হাত বাড়িয়ে ছুঁয়ে দেখতে পারবো না মরুর উষ্ণতা!
পা বাড়িয়ে পাড়ি দিতে পারবো না শীতল হিমালয়!
আমার চোখ, নাক, কান, সব খোলা; কিন্তু!
দেখতে বারণ ডানা মেলা স্বাধীন পাখীদের মুক্ত আকাশে বিচরণ!
আত্মার উপলব্ধিতে অনুধাবন করতে পারি
খাঁচায় বন্দী তাদের জীবন!
শোনা যাবে না ক্লান্তি শেষে স্বস্তির রসে রাখাল বাঁশীর সুর!
নিস্তব্ধ আঁধারে অনুভূত হয়, ছুটছে হৃদস্পন্দন দূর, বহুদূর!
আমার বাগানে, হরেক রঙের বৈচিত্রময় ফুলের মেলা;
সে রং ডানায় মেখে হরহামেশা প্রজাপতিরা করে খেলা!
তাদের স্পর্শ করে ঘ্রান নেবো, সেই সাধ্য যে নেই আমার;
মধু শুষে পেট পুরে ভোমড়ার, আমার রক্তে রক্তচোষার!
মন! সে তো অলীক! অদৃশ্য! অনুভূতি মাত্র!
অস্তিত্ব নেই, প্রমান নেই, নির্দয়ের কাছে কোন ওজন নেই!
মনটারে হত্যা করে নিঃশেষ করে দেবো, তারও উপায় নেই!
অনুভূতির অভাবে সে যে কেবলই অবহেলার পাত্র!
পুজোর ঘরের ফুল চুরি করে মালা গেথেছিলাম একবার!
আমারও যে সাধ হয়,”গলায়-মাথায়-খোপায়” ফুল বাধবার!
সেই অপরাধের সাজাপ্রাপ্ত আমি;
অধিকার নেই, দুনিয়াটাকে নিজের মতো করে দেখবার!

যদি ভালবাসা রয়!

দাদীকে দেখতাম, আমাদের নিয়ে উনি
বেশ হাসিখুশী দিন কাটাতেন!
খুব ইচ্ছে হতো দাদীকে জিজ্ঞেস করি,
দাদাকে ছাড়া তোমার খারাপ লাগে না দাদী মা?
হঠাৎ নিজের মনের কাছেই উত্তর টা পেয়ে গেলাম!
দাদী আমাদের সাথে দাদার গল্প বলে বলেই
আনন্দে দিন কাটাতেন।
নিজ থেকে দাদাকে দূরে যেতে দেননি কখনো!
সত্যিই তো, কারও অস্তিত্ব কেবল উপস্থিতিতেই নয়,
কারও অনুভূতি কেবল স্পর্শে নয়!
কেবল স্মৃতি, কল্পনা আর অতীতকে ঘিরেও
যুগ যুগান্তর হাসিখুশী থেকে, ভালো থেকে, পার করা সম্ভব;
যদি তা সুখকর ও সুমধুর হয়!
ভালবাসায় অপরাধী ক্ষমা পেয়ে যায়
ভালো ব্যবহারে খারাপ আচরণ সয়ে নেয়া যায়
ভালবাসার মিষ্টি মধুর ক্ষন; গভীর দুঃখ ভোলায়
ভালবাসা স্মৃতির সিন্দুকে পুরে
জনম জনম কাটিয়ে দেয়া যায়!
ভালো কে মমী বানিয়ে আজীবন জীবিত রাখা যায়!
কেও মারা যায়; দূরে চলে যায়!
কেও জীবিত থেকেও দূরে দূরে রয়।
ভালবাসার কাছে এই দূরত্বে কি আসে যায়?
অনুভূতি, উপলব্ধি, অভিব্যক্তি, আর কি চায়;
যদি ভালবাসা রয়! যদি ভালবাসা রয়! যদি ভালবাসা রয়!

এক্টুখানি দিবি আমায়

না না বেশী চাই না, অল্প এক্টু চাই!
এক্টুখানি দিবি আমায়?
তোর লেপ্টে যাওয়া কাজল থেকে এক চিলতে কালি
দিবি? বল, দিবি আমায়?
আমি তোর কানের পেছনে
নজরবন্দী কালো টিপ আঁকতে চাই!
তোর আশকারাকে আড়াল করে রাখে
চোখের পাতার যে মাশকারা,
আমি তোর সেই মাশকারা হতে চাই!
তোর মায়াবী চাহুনিকে আড়াল করে রাখবো তাই!
তোর ওষ্ঠ্য জোড়া ঘিরে আছে যে তিল জোড়া,
দিবি? এক্টু স্পর্শ করতে দিবি আমায়?
জানি ওগুলো আমার হবে না কখনো ;
আমি তাদের পাহারাদার হতে চাই!
তোর সর্বাঙ্গের সুধা মাখতে চাইবো
সে দুঃসাহস তো আমার নাই!
আমি তোর কেশের গন্ধে তিনটি প্রহর
তোর আমেশ মেখে থাকতে চাই!
বল না, এক্টুখানি দিবি আমায়!
সূর্যের প্রথম কিরণের মতো
তোর ঝলমলে প্রাণোচ্ছল হাসি
যে হাসিতে জগতময় সকল দুঃখ ভোলায়
আমি তোর সে হাসির একটি কারন হতে চাই!
দিবি কি আমায়?
আমি তোর লজ্জার কারন হতে চাই না;
তোর লজ্জা ঢাকার, ভালো লাগার শাড়ীর আঁচল হতে চাই!
শুরু টা তার যেখানেই হোক,
শেষ টা হবে আমায় ঘিরে; ভালবাসার আদলে জড়িয়ে!
মন চাইলে, কখনো নিবি মাথায় তুলে!
আমি আঁচল হয়ে তোর লজ্জা মাখতে চাই!
কখনো আকাশ হতে নীল চেয়ে নিয়ে,
মেঘ হতে আঁধার কালো আর
গোধূলি হতে রক্তিম লাল;
আমি তোর সুখ কপালে চাঁদের টিপ হয়ে জ্বলতে চাই!
আমি তোকে দুঃখ দিতে চাই না!
তোকে আপন করে, তোর ব্যাথার কারন হতেও রাজি না!
তোর ভাবনার রাজ্যে যতন করে
ভালবাসার নামে আপন করে
আজীবন তোর মায়ায় জড়িয়ে
হৃদয় কোটরে রাখবি আমায়!
কি রাখবি না?
বল না, এইটুকু তুই দিবি না আমায়!
বেশী কিছু তো চাইনি আমি, অল্প এক্টু চাই!
এক্টুখানি দিবি আমায়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *