প্রণব মজুমদার-এর কবিতা

বৈপরীত্য

আয়নায় মুখ দেখি না বহুদিন, প্রসাধনে অভক্তি
কালো মুখ অনিচ্ছায় আড়াল থাকে প্রতিবিম্বে
ওপরের রূপ যাই থাক, ভেতরের রূপ তো অভিন্ন,
অভিনয়ের কী বা প্রয়োজন? নাটক করি তবুও!
গৃহকোন পরিস্কার করতে গিয়ে ধমকে যাই
ভালোবাসার মতো মন কীভাবে স্বচ্ছ করি?
বেড়াজালে আটকে গেছি ভেজাল খাদ্যের মতো
দিনপঞ্জির সময় সংখ্যাগুলো দেখে আঁতকে যাই!
বেলার গোধূলি লগ্নে এসে মনে হয়
বৈপরীত্যের এ জীবন না থাকাই বুঝি ভালো!

ফেরিওয়ালা

নেবে কষ্ট, কষ্ট নেবে, আমার কষ্ট?
আকাশ জোড়া দুঃখ আমার
হৃদয়ের কানায় কানায় জমা থাকা
কষ্টগুলোর মিত্র হয় দিবারাত্রি
শহর গ্রাম সবখানে প্রণয় বিপনন
স্বার্থের টানে মন জড় হয় লালসায়

আজ আমি দুঃখের ফেরিওয়ালা
দীর্ঘ পথের কষ্টের ক্লান্তিহীন ঘোড়া
সুখের দেখা না পেয়ে হয়তো থেমে যাবে
তখন সুখ হাহাকারে কী লাভ বলো?

সুখের চাঁদ আলো দেখি না কতকাল
কায়ার বারান্দার পরতে পরতে
জমে থাকা জলকণার নিদ্রাহীন রজনী
জলের প্রবাহ নেই, নেই নিংড়ানো বারি আঁধার
বিন্দু বিন্দু জলফোঁটায় সুখ আবেশে ধুঁয়ে যাক
এসো সখী আর নয় দেরি
ভিজাবো তোমায় মমতার জলে
আদরের বৈভবে কষ্ট সমুদ্র বিলীন হোক
সুখের তীব্র অবগাহনে।
কষ্ট নাও হও কষ্টের অংশীদার
দাও সুখ,দাও সুখ!

শব্দ বিরহ

নিঃশব্দের করুণ শব্দ মস্তিষ্কে খেলা করে
অতি ছোট প্রচ- নীরব উচ্চারণের মতো
ক্লান্ত সময় পাহারা দেয় দুরন্ত ভাবনাকে
বিষন্ন উজানে বাস করে স্মৃতিময় অতীত
নিঝুম শব্দগুলো বিরহে দূরে সরে যায়
বর্ষা রাত্রির কোলে শুয়ে দিবস হানা দেয়
বৃষ্টির শব্দ উত্তাল বেদনাকে জড়িয়ে ধরে
হেঁটে আসা পথে পা রাখি ফের শূন্যতায়।

স্বপ্নময় কুহক

ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, রোগ মহামারি
হয়তো নিয়ে যাবে সব প্রাণ, হবে মুক্ত জঞ্জাল
নতুনভাবে জন্ম নেবে আগামী বিশ্ব
আবার আসবো এ বাংলায়
প্রাণীর বেশে কন্যা শিশু হয়ে
বালিকা হবো, চপলা কিশোরী হবো
হবো ঋতুমতী তরুণী
গাঁয়ের মেঠো পথে হেঁটে যাবো কুঁড়েঘরে
বধু সজ্জায় লাল টুকটুকে বসনে
জননী হবো, স্বশিক্ষায় আলো জড়াবো
দেশমাতাকে সাজাবো বাংলা বর্ণমালার অক্ষরে
মমতা ভালোবাসায় গড়ে তুলবো সুন্দর পৃথিবী
লোকালয়, প্রকৃতি, বাতাবরণ বিম্ময়কর এক কুহক!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *