মিলু শামস এর কবিতা

নির্জন সুগন্ধি

আজ আমি জ্যোৎস্নায়
স্নান করবাে সারারাত—
চাদের সিঁড়ি বেয়ে পৌছবাে
একটি উন্মীলিত
দরজার ওপাশে;
কেউ একজন জ্বেলেছে ধূপ
তার নিজস্ব নির্জন কক্ষে,
আমি কড়া নেড়ে পাড়াময়
রটিয়ে দেবাে ওই গােপন সুগন্ধির সৌরভ
আর একরাশ কিংশুক
বুকে নিয়ে বলবাে
দোর খােলাে হে নির্জনবাসী,
দেখাে আজ দেবালয় এ পৃথিবী।

প্রিয় দুরভাষ!

এক মায়াবী দূরভাষে
বিরহী চিবুক থেকে
বিষন্নতা ঝরে পড়ে;

কোনকালে উড়েছিল
ব্যথার শঙ্খচিল
কার প্রাসাদচূড়ায়—
তুলসীমন্ডপে জ্বলেছিল
কী নিবিড় রক্তিম প্রদীপ!
কারা যেন দেখেছিল
নিজেদের মুখ
তারা ভরা রাতে
সান্ধ্য শাঁখের মতাে
হয়ে তাদের।

উড়ে উড়ে দূরভাষ
জানালে সে কথা
আজও—
চাঁপারঙ দেয়ালে জাগে
সলাজ সম্মােহন।

আহা দুরভাষ! প্রিয় দুরভাষ!
মৌনতা ভেঙে দেয় ঝুর- ঝুর- ঝুর
আলাের ঝাপটা ভরায়
জলভরা চোখ, এক আকাশ সুর।

হেসে ওঠো জীবনের রােদে

কামিনী ফুলের মতাে শুভ্র দুপুর
ঝরিয়েছ দু’চোখে তাই, বুভুক্ষু প্রান্তর হাসে
নােনা রােদে। কুহক দ্বীপে হারিয়েছিলে পথ।
ময়ূরপঙ্খী বাঁধা ছিল উজান স্রোতে;
কার জীবন যাপন করে এতকাল ছিলে শাপগ্রস্ত,
ভালবাসা সন্ন্যাস নিয়ে পড়েছিল অবেলায়।
আজ সম্বিৎ ফিরে পেলে যদি, কাকে তুমি দেখাে
রাজকুমার? জাদুকরি আয়না ফেলে দাও
তুলে নাও আতশি কাচ; আঁজলা ভরেছে
সোঁদা সোঁদা রাঙা ফুল, চোরাবালি টান
উবে গেছে, চন্দন সুবাস ওঠে দেহের কপাটে।
সাতমহলায় চাঁদের আঁচলে ঢাকা মুখ
বিরহের প্রস্তর ঠেলে জেগে আছে
কতকাল, শীর্ণ শরীরে তার সজল প্রেমের স্রোত;
ভালবাসা হেঁটে এলাে এই ভৈরবী ভােরে
সাত সমুদ্র তেরাে নদী পাড়—
এখানে নােঙর ফেলো , করাে জীবনের চাষাবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *