হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় -এর কবিতা

চিরকালীন কুয়াশা

শেষ ট্রেনে রাতের গভীরে যারা স্টেশনে নামলো
সকালের কুয়াশায় যারা আগেই স্টেশনে নেমেছে
আগামীকাল দুপুরে যারা স্টেশনে এসে নামবে
তাদের কারও মাথার ছাদ নেই
শুধু ঘর নেই বলেই তারা গলা খুললেই
তা দিগন্ত পেরিয়ে সমুদ্রে মিশে আন্তর্জাতিক হয়ে যায়

নক্ষত্রের গ্রাম থেকে যারা হেঁটে এসেছিল
তারাই একমাত্র জানে সূর্যের স্বাদ
পৃথিবীর কোনো উপমায় তারা কান দেয় নি
নিজের গর্তকে ভালোবেসে ছিল খুব
আর নিজে হাতে গর্ত খোঁড়ার প্রক্রিয়ায়
শ্রদ্ধা ছিল বলেই খুব তাড়াতাড়ি তা পাঠ্যে এনে তুলেছিল

স্কুল বাড়ির সমস্ত দরজা একমুখী
ঘর আর উঠোন জুড়ে থাকে
সাপের মতো মাটির গভীর সংস্পর্শে থাকা
শাসকের কিছু বাজার চলতি চটুল হাওয়া
একাকী বড় হয় যাবতীয় মাংসের শরীর
কুসুম রোদ্দুরের তুলির গভীর টানে
ধরা দেয় না রামকিঙ্করের হাসি

নদীর খাতায় লেখা থাকে
কিছু জটিল সমীকরণের সহজ সমাধান
হাত দিয়ে যারা জল খুঁটেছিল
নদীর প্রাসাদে ঢুকে কেউ কোনো ঘর খুঁজে পায় নি
বটপাতায় মাটির ইতিহাস লেখকদের কেউ চেনে না
গাছের মাথায় রোদ —– আর কয়েক মিনিটের অপেক্ষা
সন্ধ্যে নামার মতো নিঃশব্দে হেঁটে যাবে লেখকেরা
তারপরই হাতে হাতে নেমে আসবে চিরকালীন কুয়াশা ।

অন্ধকারের ভেতর থেকে

গাছের ফলের মধ্যে ডুবে থাকে একটা গোটা জীবন
পৃথিবীর প্রথম পাতার আচ্ছাদন থেকে
যে জীবন বেরিয়ে এসে সভ্যতার রাস্তায় পা রেখেছিল
তাদের দুপুর শুধু উষ্ণই ছিল না
একটা গোটা সভ্যতাকে আয়নার মতো ধরে রেখেছিল
মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে যাবার পর
গাছের পাতায় পাতায় যেসব সংসার আলো হয়ে ওঠে
নামের জন্যে তারা একটা জানলারও পর্দা সরায় নি
শত সহস্র নদীর অভিমুখ ছিল রান্নাঘরের পথে

দীর্ঘ ঘুমের পরেও চারদেওয়ালের বাসিন্দাদের
নজরে পড়ে নি শরতের রোদে বেজে ওঠা সাদা মেঘ
বাবাদের গাছের ঘর থেকে যে সন্ধির সমীকরণ
আলো জ্বেলে ফুল হয়ে যাবে কথা দিয়েছিল
সে ইঁটের রাস্তা পেরিয়ে বারান্দায় উঠতে পারে নি

এখন গভীর অন্ধকারের ভেতর থেকে ঘুম ভেসে ওঠে
আর মুখের চারপাশে কীটের দংশনে দগ্ধ চোখ।

One thought on “হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় -এর কবিতা

  • নভেম্বর ৮, ২০২০ at ২:৪২ অপরাহ্ণ
    Permalink

    কি অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা হল লাইনগুলো ধরে এগিয়ে! প্রথম কবিতার প্রথম স্তবকেই কি স্ট্রং ইমেজারি! অসাধারণ!

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *