মহসিনা সরকারের একগুচ্ছ কবিতা

বিচিত্র বিলাস

এভাবেই দৃষ্টিকে বোবা বানিয়ে
মৃতপ্রেম রাত পার করে দেয়
মরচে পরা যত্নে মুছে ফেলি
তারে নিয়ে লিখা কবিতা।
একরাশ অতীত কিভাবে খুব যত্নে
ঘোলাটে হয়ে যায়,
বিচিত্র বিলাসে হাহাকারগুলো
মুচকি হেসে পালিয়ে যায়
নতুন মুখোশের খোঁজে।

বোধের স্মৃতিচারণ

পালকের মতো খসে যাচ্ছে সময়
আমি ভর করে আছি শূন্যতায়
আড়ষ্টতায় ছিঁড়ে যাচ্ছে ব্যবধান বোধ
বিধ্বস্ত স্মৃতিচারণ ঝরাচ্ছে বিষাদ
হারানো সৌভাগ্যের মুঠোয় খুঁজে যাচ্ছি আমাকেই।

দুপুররাত পেরিয়েছে অনেক আগেই
আমি জানালা গলিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি
হাল্কা বাতাসে নড়ে যাচ্ছে স্যাটেলাইটের তার,
এবং আমি শুয়ে শুয়ে ভাবছি
এই অবকাশ শেষের তোমাকে।

সভ্যতার চোরাবালি

আমি গাছ দেখতে ভালোবাসি
সে আমায় প্রেম শিখিয়ে দেয়,
শেখায় বন্ধুত্ব ,
আর সব শিখেও
আমি হয়ে উঠি স্বর্থপর,
এই স্বর্থপরতা এতটা বেড়ে ওঠে যে
এর চোরাবালিতে ধীরে ধীরে তলিয়ে যাই,
কেউ শোনেনা এই বিলীন এর সুর।

সভ্যতা সবাইকে সভ্য করে
কিন্তু,
এইযে আমায় মূর্খ করে গেলো,
যেদিন সভ্য হবো মৃত্যুর আগে
ঐ দিন প্রান ভরে গাছের সাথে কথা বলবো,
শেষে জিজ্ঞেস করবো –
কই,
কবি মরে গেলে সভ্যতা কাঁদে না কেনো?

কাঠের পুতুল

একটা মাটির ভালোবাসা চাই
লোকদেখানোর দলের না,
একটা জং না ধরা তালা বিহীন
কাঠের পুতুল চাই।

একটা জ্বলন্ত মানুষ চাই
অহংকারের শোভন শরীর না,
ঘুনে খাওয়া হৃদয় নিয়েও
যে ভালোবাসবে দিগন্ত জুড়ে।

অসুস্থ সময়ে একটা
সুস্থ সম্ভাবনার মন চাই
যে কিনা বিশ্বাসের বিস্ফোরণে
এনে দেবে এক নতুন মহাকাল।

বিকলাঙ্গ ছোবল

পৃষ্ঠ হওয়া ঘাসের ডগায়
কিশোরী ঘৃণা করা শিখে যায়
চোখ দিয়ে গেলা বোঝে
রাস্তার ছেড়া কনডমের ফসলদের
লালা পরা জিহ্বার ধারে।

ভাংগা ছাদে ভিজে বেড়ালদের হাতের ছোয়ায়
প্রিয়জনদের মুখোশ পাল্টাতে দেখে বাড়ন্ত শরীরগুলো
যাদের কান আর্তনাদে ফূর্তিতে মেতে ওঠে
হারকিউলিস এসে থেতলে দিক ওদের লিঙ্গগুলো।

যেখানে,
অবহেলায় বেড়ে ওঠা অসভ্যরাই
সভ্যতার মুখে লাথি দেওয়া শেখায়,
নষ্ট ভ্রূণে ভরে থাকা ডাস্টবিন
দাঁতে ছিড়ে খাওয়া যোনীর হিসেব দেখায়।

রাষ্ট্র ভরে গেছে বিকলাঙ্গ ছোবলে
রেলের ধারের মৃত্যু উৎসব তাও সহ্য করে নেই
তাই বলে বৃদ্ধ বাবার গলার ফাঁস
বার বার দেখার সাহস কোত্থেকে পাই?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *