হানিফ মোহাম্মদ এর কবিতা

সংজ্ঞা

মানুষ এবং কুকুরকে একসাথে খাবার খেতে দেখে অবাক হইনি।
শুধু রূপে-রঙে মানুষ হলেই তাকে মানুষ বলতে নেই।

ওভাবে তাকাচ্ছেন কেনো?
ভাবছেন, মানুষ হতে আর কী কী লাগে?
শুনুন তবে।
এই ধরুন, প্রথমত একটা যুৎসই পকেটতো লাগবেই।
পকেটে কিছু নোট চাই,
নোট মানে টাকা,
টাকা মানে ভদ্রতার সনদ।
টাকা ময়লা হলেও ক্ষতি নেই
রাষ্ট্রীয় ধোপাখানায় ময়লা টাকা ফর্সা করার সুযোগ মেলে।

আরে ভাই, হা করে আছেন কেনো?
অবাক হবেন না।
টাকা থাকলেই আপনার ক্ষমতা আছে
সক্ষমতা আছে মানুষ হয়ে ওঠার,
হোক তা পেশীর অথবা পিষির।

ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে বিধাতার সাথে বসে
সেরে নিতে পারেন তুখোড় ডিনার
সুতরাং আপনিও বিধাতা তখন
আপনার বিধানেই তখন দেশ রাষ্ট্র ও সমাজ
আপনি তখন ভয়াবহ মানুষ
আর সব অমানুষ, পশু
পশুদের সাথে তারা ভাগ করে নেবে
ধনবাদী সমাজের উচ্ছিষ্ট আঁধার।

বারবিকিউ উৎসব

জ্বালানি না থাকলে জনতাকে জ্বালাও
অপেক্ষা করছো কেনো
নিরাপদ দিয়াশলাই হাতে দাঁড়িয়ে আছে রাষ্ট্র!

রাষ্ট্রের কোটরে শিল্পের হৃৎপিণ্ড নেই
আছে অর্থনীতির পচা নাড়িভুঁড়ি
মানুষ সর্বত্রই অপাংক্তেয়,
কাশ্মীর কিংবা আরাকানে অথবা পশ্চিমতীরে
আসামেও মানুষগুলি আসামির কাঠগড়ায়।

মানুষ কি সম্পদ নাকি?
মানুষ নয় মাটি চাই, সম্পত্তির মালিকানা।
পায়ের নিচ থেকে কেড়ে নাও দেশ
রাষ্ট্রহীন মানুষগুলি শকুন আর শিয়ালের
টানাহ্যাঁচড়ায় পশু হয়ে যাবে? যাক।
থাক, মানবতার কথা বলে বাঁধিয়ো না গোল।
কলরোল ভুলে চাষ করো ধর্ম বা রাজনীতির রুদ্ধ আগাছা।

তোমাদের বারবিকিউ উৎসবে
জনতার চেয়ে ভালো কোনো জ্বালানি পাবে না।

রাশিফল

রক্ত বুনেছি ক্ষেতে
আবার বর্ষা এলে ঠিকঠাক গজাবে চারা
ততোদিন অপেক্ষার বই পড়ো অদ্ভুত রমণী।

জৈবসারের অভাবে কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে
তবু ভোর আসবেই রাতের এস্ক্যালেটরে চেপে
আসবেই। কবিরা ভবিষ্যতদ্রষ্টা হয়।

জনৈক ফড়িয়ার ছুঁড়ে দেয়া চ্যালেঞ্জ
আলতো স্পর্শে লুফে নিয়ে স্বপ্নবাদী পুরুষ
নির্দ্বিধায় খুলে ফেললেন অদৃষ্টবাদের কাছা।

অবশেষে রক্তবীজের চারা ফলবতী হলে
স্তনবৃন্তে মুখ নামিও না ঈশ্বরের আশীর্বাদপুষ্ট বন্ধুর দল।

মগ্নতার ভেতর বসবাস

ভাঙা বারান্দায় ঝুলে আছে
প্রথম আশ্বিনের জোছনা।
মা বললেন, জোছনায় ভিজিয়ে
খেয়ে নাও কালের কম্বল
নইলে রাত্রি গভীর হলে
বাপজান ছায়া মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে যাবেন
আর নাকের বাঁশিতে বেজে উঠবে
বেসুরো জাতীয় সঙ্গীত, ‘আমার সোনার বাংলা’।

মায়ের কথা শুনে দখিনের জানালায় খিলখিল হেসে ওঠে
হাড় জিরজিরে পুরাতন বাতাস
আর আমার মনে তখন ভেসে ওঠে
বহুদিন আগে দেহত্যাগি ভাঙাচোরা মায়ের মুখ।

মায়ের কথা বলতেই
ঠিকঠিক করে হেসে উঠলো টিনের বেড়ায়
হেঁটেবেড়ানো বুড়ো একটি টিকটিকি।

বুড়োটার হুপিংকাশির শব্দে মগ্নতা ভাঙতেই
হেলে পড়া দেয়ালের ফাঁকে
ঢলে পড়লো ত্রিশোর্ধ রমণীর মতো গোলগাল চাঁদ।

দাউদ হায়দার: জন্মই যার আজন্ম-পাপ

লোকমুখে শুনেছি তোমার কোনো জন্ম ছিলো না
তোমার কোনো মৃত্যু নেই।
পাপান্ধ রাষ্ট্র তোমাকে কোলে নিতে পারেনি
ব্যভিচারিণী মায়ের মতো আমাদের দেশ
ভ্যান্টিলেটরের ফাঁকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে নিষিদ্ধ জন্ম।

হায় দাউদ হায়দার, তুমি জানোনি
আমাদের কোনো জননী নেই, জন্মভূমি নেই
ভাসমান পানার মতো নিরন্তর ভেসে বেড়ানো জীবন নিয়ে
আমরা এই পৃথিবীর জারিত জারজ
অথচ জন্মের উপর যেমন, বিশ্বাসেও আমাদের হাত নেই।

লাউলতাটি কি জানে পরবর্তী আকর্ষির বিস্তার?
তুমিও জানোনি, আমিও জানি না
বিমাতা রাষ্ট্রের রোষানলে তুমি আঁচলের ছায়া ছিঁড়ে
দূরে আছো, দূরত্বে নও যদিও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *