কাজী আনারকলি’র গুচ্ছকবিতা

ভাঙন

হে মহানায়ক —–
তুমি কি শুনছো,তোমার মাতৃ জঠরে ধরেছে ভাঙন ?
টেকনাফ থেকে—-
তাজিনডং, তেঁতুলিয়া, শিবগঞ্জ, থানচি, পদ্মার চর, সুন্দর বন-
প্রতিদিন কাঁদে আষাঢ়- শ্রাবণ !

হে মহানায়ক-
এখানে নিক্তি বারবার ঢলে পড়ে বামে আর ডানে ,
স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের হৃদয়ে কুঠার হানে !
শুদ্ধতা নেই , মানবতা নেই , নেই নীতির আধার,
এ কেমন ছবি, দেশের তোমার ?
গণতন্ত্র আর স্বাধীনতা বারংবার
হোঁচট খায় যে রাজাকার আর লোপাটের হাতে ?
নেশা ও লোভের মাতাল হাওয়ার উন্মাদনায় ওরা উঠে তেতে।
বাকি নেই ললনারা ! তারাও উড়ছে যেনো।
সময়ের পাখি তারকা কোকিল পিছিয়ে থাকবে কেনো ?

হে মহানায়ক-
ভাঙন ধরেছে পাহাড়ে-নদীতে
বাঙলার সব আনাচে-কানাচে
কোথাও শান্তি নেই, অবিরাম চলে ভাঙনের খেলা !
কে কারে কখন,কেমনে রোধবে?
একফালি চাঁদ উঠবে আকাশে ?
জানা নেই কারো , আবার কখন জমবে গড়ার মেলা ?

অবরুদ্ধ মন

আঘাতে আঘাতে ছিন্নভিন্ন আমার নিষ্পেষিত জীবনের ভাগীদার হতেই যে চেয়েছিলে তুমি,
বলেছিলে প্রেম দেবে ; রৌদ্র মাখা স্বর্নাভ
দ্যুতি ছড়ানো প্রকম্পিত ঠোঁটে চুমি।

বলেছিলে, শরীর নয় ; বক্ষ পিঞ্জরে অবরুদ্ধ থাকা মনটাকে – চাও যে ছুঁতে ,
তোমার বুকে খোলা নীল অন্তরীক্ষের নীচে সবুজ ঘাসের পদতলে দেবে শুতে।

তুমি বলেছিলে ,আমি নাকি অমাবস্যা রাতের তিমিরে আচ্ছাদিত কৃষ্ণ কালো আকাশে ভাসা পূর্ণিমারই চাঁদ,
গলে পড়া ফুটন্ত লাভার জ্বালামুখ ; সাহারা মরুর বুকে পাতা মরীচিকার ফাঁদ।

তুমি বলেছিলে, আমি নাকি গহীন অরণ্যে বাস করা রক্ত রাঙা লাল টকটকে পলাশ ফুল,
মধুমক্ষিকার হুল ; পৃথিবীর সব কষ্ট-যন্ত্রণার মূল !

তুমি বলেছিলে, আমি নাকি মৃত সাগরে সুশীতল জলে নব প্রাণের সুর স্পন্দন,
এন্টার্কটিকার বরফ কঠিন অবগুণ্ঠন ভেদ করে ফোঁটে উঠা নলিনীর সুখ ক্রন্দন।

আমার স্পর্শে কৃষ্ণ অম্বরে নক্ষত্রপুঞ্জ হেসে উঠে করে যে ঝিকিমিকি,
মৌন পাহাড়ের বুকে ইচ্ছের প্রমত্ত উত্তাল অনিল জ্বলে উঠে ধিকিধিকি।

আমার হৃদয়ের অনন্ত ঘুম ভেঙ্গে যায় এক নিমিষে তোমার কথার ঝলকে,
নিঃসঙ্গতার দ্বার খুলে একছটা আলো যেনো পাশেতে বসে পলকে।

অবরুদ্ধ পোড়া মন যে আমার দাঁড়িয়ে থাকে রুদ্ধ কপাট খুলে
তোমার অঞ্জলী মাখবো গায়ে, হরষে ব্যথাতুর প্রাণ যে উঠে দোলে।

সহসা কোথা থেকে কালো দুটো নগ্ন হাত এসে লাফিয়ে ঝাপটে ধরে,
‘হারামজাদি ! তোরে পয়সা দিয়ে কিনেছি ; অনেক অনেক কষ্ট করে’ !

হতাশা ক্লিষ্ট একজোড়া চোখের করুণ আর্তি স্পষ্ট প্রতিবাদ হয়ে যেনো ঝরে,
হাতে থাকা মসি দিয়ে খোঁচা মেরে দিলে যে অন্ধ করে জন্মের তরে।

আদালত ! কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে সত্য সাক্ষ্য দিলাম , আমার যা হবার তাই হোক ;
ভালো থেকো – কয়েদীর বেশে ; আমার অবরুদ্ধ মন না হয় অবরুদ্ধই থাকুক।

ভেজা মুখ

ক্ষু্ধায় কাতর লজ্জাহীন দিগম্বর লক্ষ লক্ষ ভেজা মুখ !
এক গলা পানি ভেঙ্গে ধীর লয়ে আসে যেনো জলাতঙ্ক সুখ।

ক্ষীণ জোনাকির আলো,বড়ো আশা আকাশের চাঁদ,
স্বপ্নময় হয়ে উঠে কতো রঙে কতো ঢঙে বাড়ানো সে হাত !

ফুলের পাঁপড়ি মেলা অথৈ জল রোষে উঠে ফুঁসে ফুঁসে ধায়,
ভেজা মুখ গুলো বেদনার নীল রঙে ভিজে এক হয়ে যায়।

নিঃসঙ্গ আকাশ শুধু জননীর কোল ঘেঁষে কেঁদে হয় সাড়া,
ভেজা মুখ জল মুছে চলে যায় দ্রুত লয়ে যেনো কতো তাড়া !

এভাবেই সময়ের পথ ধরে চলে ভেজা মুখ সেই আদি কাল থেকে,
ভেজা মুখ আর জল, জল আর ভেজা মুখ সশব্দে পাশাপাশি বেঁকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *