মজিদ মাহমুদ এর গুচ্ছ কবিতা


নদী

নদী নিয়ে আমার কারবার
নদীতে গেছি বারবার
মাছ ধরেছি মাছ ধুয়েছি
পানিতে হয়েছে রক্ত লাল
নদীর পানিতে ফেলেছি বড়শি
নদী আমাকে বলেছে কাল-
মা বকলে মোহনায় আসিস
জলেতে দু’জন ভেজাব পা
সাঁতার শেখাব
সাঁতার শিখবি
জানবে না কথা- পাড়া ও গাঁ
একটি নদী শৈশব থেকে
এনেছিল আমায় নদীতে ডেকে
পাল তুলে কেউ বর্ষার দিনে
দূর-দূরান্তে নিয়ে যায় চিনে
নদীর টানে ফিরে আসি ঘরে
নদী চলে বহমান
আমি ফিরে আসি নদীর টানে
এই তটিনী আমার প্রাণ
বলি নদীকে- নৌকাখানি
স্বচ্ছ তোমার বুকে নাও টানি
আমি দাঁড় বায়
সকাল ও রাতে
নদী বলে- তুমি দাঁড়ি নও ভালো
মীন খুঁজে ফের গভীর রাতে
রাগ করে বলি- হয়েছে কি তাতে
ছাই দেইনি কারো বাড়া ভাতে
কার প্ররোচনায় ভেঙেছি ঘর
কে করেছে দিগম্বর
কে নিয়েছে তরল যত
ভেদ করেনি আপন পর
তোর তরলে গরল ফোটা
আমার জীবন নিয়েছিস গোটা
মৃত ভাসানে চাঁদের ব্যাটা
বেহুলার খোঁজ নেই
নদী আর আমি কাছাকছি থাকি
পার করি নদীকেই।

শোকগাঁথা

সূর্যটাকে নিজস্ব আয়নার সাথে যুক্ত করার আগেই
আমাদের রাতগুলো বেরিয়ে আসে দিনের আলোয়
বলি, পাখি ডাকার একটু ফুরসত দাও ভাই
দাও মোরগের গলা ফুলাবার কারুকাজ
সারাদিন সঙ্গীনির কাছে যেন কিছুটা গাঁক অবশিষ্ট থাকে
পুরুষ প্রজাতির আজ পৃথিবীতে বড়ই হ্যাপা
নিষিক্ত ডিম্বকগুলো ল্যাবরেটরিতে দিচ্ছে জানান
জনকের প্রয়োজনীয়তা যদি ফুরিয়ে গেল
তাহলে নেমে আসতে কতক্ষণ প্রকৃতির প্রতিশোধ
ডিম ফোটাতে আজ মোরগের অবদান নেই
মিলন ছাড়াই গাভিগুলো বাচ্চা দিচ্ছে
আর বকনাগুলো হাসছে বলদগুলোর বেহাল অবস্থা দেখে
এমন ত্যাগ আর খাদ্যগ্রহণ- এমন কি মহৎ কাজ
তোমার এই বেঁচে থাকা- বড়জোর মসজিদের
সারিগুলো কিছুটা লম্বমান করা
রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও আজ পুংলিঙ্গের প্রাধান্য গৌণ
রাজা নির্বাচনেও যেহেতু হচ্ছে না লাইনে দাঁড়াতে
তাহলে ট্রিগারের মতো অস্ত্রের বাড়তি অংশ অহেতুক বহন
যারা আজ তোমাকে শেখাচ্ছে বাঙ্কার আর বেয়োনেট এক
তুমি কি এখনো পড়ে আছ তাদের সঙ্গ লিপ্সায়
নাকি ভার্চুয়াল মধ্যমার সাথে করছ খুনসুটি
সকাল হলেই বাতাসে ভেসে আসা একটি মার্জারের মতো
রাবারের মুষিকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছ ব্যর্থ আক্রোশে
যারা তোমায় দেহহীন ভুলিয়ে রেখেছে
তুমি সারাদিন ব্যস্ত তাদের অন্বেষণে
হে আমার সন্তান হে আমার বিভাজিত রেখা
তোমার ক্রুশ তোমাকেই করতে হবে বহন
কবর খোড়ায় উৎসবে যারা গাইছে সঙ্গীত
এমনকি মন্দিরের ঘন্টাগুলো তুমিই বাজিয়ে দিচ্ছ শূন্যে
আর দাঁড়িয়ে থেকো না- রাস্তার পাশে যে মা অপেক্ষায় ছিল
তাকে বলো তোমার অক্ষমতার কথা
যে জন্মের জন্য তোমার ছিল না মূল্য পরিশোধোর দায়
কেন করছ অহেতুক খোয়াবার ভয়!

হাজার সালের প্রতিশোধ

কাল লিখেছি গানের পাখি
বলল, আমার কন্যা ডাকি
বাবা তোমার কিসের কাব্য
কিসের নীতিবান
যখন তোমার কন্যা একা
কাঁদছে ঘরে নারীর অপমান
কিসের জন্য যুদ্ধ তোমার
কিসের জন্য লম্বা কথার ঠান
সত্যি তোমরা লিখতে পার
ঠাকুর ভোলা গান
ঘরের কোণে রইছ একা
কাব্য লেখার ভান
রাস্তাঘাটে দিচ্ছে অসুর
কাপড় ধরে টান
টান মারছে বন্য-শুয়োর
বনের রাজার মায়
তোমার মেয়ের জীবন গেলে
কে-ই-বা নেবে দায়
খুবলে খাবে গৃধ্নু-শকুন
কতকাল আর লিখবে বল
কবিতায় ধুনপুন
রাস্তা ছেড়ে আর কতদিন
থাকবে ঘরের কোন
কন্যাহারা পিতার জন্য
অশ্রুসজল হয় না তোমার মন!
মেয়ের কথায় উধাও হলো
কাব্য লেখার ঘোর
যায় না পারা আত্মজারা
অসহায় বাপ তোর
গড়তে পারিস তোরাই কেবল
এসব প্রতিরোধ
মার-লাগা সব নপুংশকে
হাজার সালের শোধ
এবার পালা বৃহন্নলা
সব চালকের দল
আমরা এবার দখল নেব
ঘরের কোণে চল।

ঈশ্বরের নাম

ঈশ্বরকে যখন আমরা ঈশ্বর নামে ডাকি
তখন ঈশ্বর গুটিয়ে যান নিজের সত্তায়
আমাদের দিকে না তাকিয়ে
তিনি তার ইজেলের দিকে তাকিয়ে থাকেন
শিশুদের হাতের সাথে একটি প্রজাপতি
কিংবা একটি আপেলের রঙ নিয়ে থাকেন ব্যস্ত
একজন কবিকে তুমি যদি কবি নামে ডাকো
প্রাথমিক উদ্দীপনায় হয়তো দেবে সাড়া
কিন্তু যখন সে জানবে তার কবিতাগুলো অনধিত
তখন অবজ্ঞায় ফিরিয়ে নেবে মুখ
বলবে এসব লোকের কাছে কবিতার কি মানে
বরং তার কবিতা থেকে একটি পংক্তি
যদি নির্ভুল করে থাক পাঠ
তাহলে কবির হৃদয় প্লাবনে হবে সিক্ত
ঠিক প্রভুও ফুলের নামে পাখির নামে
নদী ও সমুদ্রের নামে ভাস্বর
তবে মানুষের নাম তার সব থেকে অপছন্দ
কারণ একটি ফুল চিরকাল ফুল
যেমন গোলাপ বেলি চামেলি জুঁই; কিন্তু মানুষ!
গোত্রের বাইরে সে পরিচিত হতে চায়-
রহিম গনেশ বুশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *