গুচ্ছ কবিতা নাসিমা হক মুক্তা

পৃথিবীর প্রান্তরে সীমাহীন ঝড়

রাতের গায়ের এক ফোঁটা বিজন সুখ
জীবন কে চিরচেনা সয়লাব থেকে
অনেকদূরে ধুলোয় মেখে হেঁটে যাচ্ছে কিছুটা গজ
পৃথিবীর প্রান্তরে সীমাহীন ঝড় বয়ে ছেনে নিচ্ছে
আরও কিছু মানুষের কোলাহল
উজান ভাঁটার ত্রিশূলে মিশে গেছে চুরমার শোক।

তৃষ্ণার মুক্তি মেলার কেশরগুলি দুচোখে
বড় স্বাদে নক্ষত্র ডাকে
মানুষ নামক জীবিত পুরোহিত বারবার
উষ্ণ আলিঙ্গনে কেতন ওড়ায় বাঁচার ও স্বপ্নের
কৈফিয়তে
অথচ ডানে-বামে ফসলের মুখরতাগুলো
জাগে ধোঁয়াটে জীবনের অমাবস্যার কুলে

কতবার করে ছেদিয়া ডাকি চাঁদ ফোয়ারায়
উল্কার মত অঘ্রানে হুঁচোট খেয়ে
মৃত্তিকার থামে পা ঘষি
ছেঁড়া কবরীর গাই বিয়োবার ফলন্ত দেহে।

ছিটকে পড়া চরবাউল

বৃষ্টি ছুঁয়ে গেছে
কাপ্তানের চিতা মহলের শূন্যতায়
মলাট বদ্ধ জীবনের ঢেঁকি গিলে
বেপথুরা পথের জল শ্যাওলাগুলো
জমাট বেঁধে ছিল – ঋণগ্রস্ত থালায়।

কষ্টের গুচ্ছ জঞ্জালগুলো আজ ধুয়ে দিলো জলদেবী
অবশেষে পোড়া কাব্যের সারেং
দেবদারু কলস ভরে তোয়াজ করে – ভিটেমাটি
থই থই জলে পালক ছড়িয়ে
টাপুরটুপুর খেলে – ছিটকে পড়া চরবাউল

জলের উঠোনে চিবুক ফেঁড়ে গান সেধে
খুঁজে বেড়ায় – খালি পায়ে মহাকালের পৌঁছার পথ।

অন্ত্যমিল

প্রেমই সবার বেঁচে থাকার খোরাক
যখন শরীর থেকে মন ছোঁয়া স্পর্শগুলো
ছন্দের তাল থেকে অন্ত্যমিল ঘটায়
তখন জগত সংসারের ভাবনাগুলো অন্তর্মুখী হয়ে
অস্তিত্বের মোহ মায়ায়
মাটি ও পানি মিলে ভেসে ওঠে আদম চেতনা।

আমরা মানুষ এবং মানুষের প্রতিফলিত মুখ
অনন্তের দরজায় পোঁছতে পারার
প্রতিযোগিতায় যেন
মানুষ থেকে অমানুষ হয়ে উঠি
বারংবার….

জেগে ওঠে মানুষের কুটুম্ব

শতাব্দীর নন্দন নহরের বাঙময়
মুচকি হেসে বলে – আমি মানুষ বুঝি
তবে সুরা বুঝি না
যার ভেতরেই জড়িয়ে আছে রক্তের গঙ্গা
সেটি ভেদ করে জেগে ওঠে মানুষের কুটুম্ব !

জন্মের ঋতু পরিবর্তনে গোলাকার গ্রহ
মাতৃস্তন খেয়ে এগোয় কালান্তরে
অচিন কুঠুরি শুঁকতে শুঁকতে টের পায় – আমাকে ঘিরে থাকে আরও কিছু আশ্চর্য মানুষ
মস্তক আঁকা সয়লাবে – দণ্ডমুণ্ডের বিধাতা
চম্বুকময় গাত্রে ; বিদ্যুৎ চমকায়
কেবলি যা মানুষ বুঝে।

কী এক কুর্নিশ করা রস
বিপ্লবের পথে দুবাহু ঝাড়ে – মাকু মোলায়েমে
জীবন ঝোপে দুই কুল মিলে এক হয় তাও মানুষ বুঝে
গাছপালা বুঝে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *