উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। ষষ্ঠ পর্ব

ষষ্ঠ পর্ব

  একদিন ক্লাস শেষে হাসান এপ্রোন খুলতে খুলতে বলল, ‘ক্যামেরাটা বেকার পড়ে আছে। কিছু শুটিংটুটিং করতে পারছি না।’
  ‘কি শুটিং করবি? আগে সাবজেক্ট বের কর।’
  ‘ভাবছি আমাদের লাশকাটার দৃশ্য শুটিং করলে কেমন হয়?’
  ‘তুই কি ভৌতিক কিছু বানানোর কথা চিন্তা করছিস?’
  ‘কিছু করে তো হাত পাকানো উচিত। তাছাড়া তুইও ভেবে দেখ। শুধু লাশকাটার দৃশ্য ধারণ করতে পারলে একটা নতুন কিছু করা হবে।’
  ‘কিন্তু স্যারেরা লাশ কাটা ঘরে শুটিং করতে দেবে বলে মনে হয় না।’
  ‘আমিও সেটাই ভাবছি। কি করা যায়? একটা আস্ত তাজা লাশ যদি কোনভাবে ম্যানেজ করা যেত!’
  ‘লাশ এতো সোজা জিনিস ভেবেছিস নাকি! বেওয়ারিশগুলোও আঞ্জুমানে মফিদুলে চলে যায়।’
  হাসান হঠাৎ উজ্জ্বল চোখে বলল, ‘আচ্ছা, হামিদ ভাই কি একটা ব্যবস্থা করতে পারে না? লাশ-কাটা ঘরে কাজ করে। অনেক লাশ নিয়েই তো কারবার।’
 ‘ওইসব লাশের হিসেবপত্র আছে সে তুই ভাল করেই জানিস।’
 ‘কোন একটা বেওয়ারিশ লাশে নাম্বার-টাম্বার না দিয়ে হাপিস করে দিল।’
 ‘ওর চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে।’ 
 ‘আরে না। তুই যা ভাবছিস অত কঠিন কিছু না। হামিদ ভাই করিৎকর্মা লোক। বললে কোন না কোন ভাবে ম্যানেজ করে ফেলবে।’ 
 ‘তুই-ই বলে দেখ তাহলে।’
 ‘আমার চেয়ে তোর কথায় কাজ হবে বেশি। হামিদ ভাই তোর জন্য জান পেহেচান। তোর মুখের কথা ওর কাছে ঈশ্বরের আদেশ।
 আমি কৌতুহলের সুরে বললাম ‘কিন্তু লাশ এনে ডিসেকশান করবি কোথায়?’
  ‘সেটা কোন সমস্য না। আমাদের রুমেই করব। আর করবি তুই।’
  ‘আমি মানে? ওসবের মধ্যে আমি নেই। তোর প্ল্যান তুই যা পারিস কর। আমি হামিদ ভাইকে বলে দেখতে পারি। আমি ডিসেকশান করলে তুই নিজে করবিটা কি শুনি?
  ‘বোকার মত কথা বলিসনে। আমি তো থাকবো ক্যামেরার পিছনে।’
  ‘আমার মেধা তো তুই জানিস। প্র্যাকটিক্যালে কোনদিন ডিসেকশানে ভালমত হাত লাগাইনি। কাটাকুটি ভালমত পারিই না।’ 
  ‘আরে গাধা আমরা তো আর মেডিকেলের সিডি বানাচ্ছি না যে ডিসেকশান শেখাব। আমার প্ল্যানটা আগে শোন। তারপর কথা বল। শোন, কোরবানীর ঈদের সময় গরু-ছাগল ছেলা দেখেছিস?’
  ‘তো?’
  ‘তুই লাশটার চামড়া ঠিক ওই ভাবে ধীরে ধীরে ছিলবি। পা থেকে মাথা পর্যন্ত। গোটা লাশটার চামড়া ছাড়িয়ে ফেলবি। ওই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করব আমি। চামড়া ছেলা হয়ে গেলে শুরু করব মাংস ছাড়ানো। ঠিক কোরবানীর গরুর মাংস পিচ পিচ করার মত করে পিচ পিচ করব টোটাল বডি। চোখ, কান, নাক, গলা, মাথা, হাত-পা, আঙুল সব আলাদা আলাদা করবি। আর সেই আলাদা করার দৃশ্য উঠে আসবে ক্যামেরায়।’
 ‘মাথা খারাপ হয়েছে তোর। ধর, সবকিছুই তোর কথা মত করলাম। কিন্তু কোথায় চালাতে পারবি না ও জিনিস। ওই দৃশ্য দেখে কেউ রাতে স্বাভাবিকভাবে ঘুমাতে পারবে ভেবেছিস! আর সেন্সর বোর্ড বলে একটা জিনিস আছে। সেখান থেকে কখনোই অনুমুতি পাবি না তুই।’
 ‘সেন্সর বোর্ড অনুমতি দেবে না বলে হাত পা কোলে করে বসে থাকব? কিছু করব না? এমন মহৎ পরিকল্পনা মাঠে মারা যাবে?’
 ‘কি মহৎ পরিকল্পনা তোমার! লাশ কাটার দৃশ্য ধারণ! আমি ওসবের মধ্যে নেই।’
  হাসান শীতল গলায় বলল, ‘ঠিক আছে। তোকে লাশ কাটতে হবে না। আমি অন্য কাউকে নেব। তুই শুধু দেখ লাশের ব্যবস্থাটা করে দিতে পারিস কিনা?’
 ‘দেখি।’
Series Navigation<< উপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। পঞ্চম পর্বউপন্যাস ।। অন্য মানুষ ।। প্রিন্স আশরাফ ।। সপ্তম পর্ব >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *