উপন্যাস// মাটির প্রদীপ ছিল, সে কহিল// নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর// তিন

আমি শশাঙ্ক দাস। রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশনের গণিত শিক্ষক। আপনার আসার বিষয়ে আজই প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়েছিল।
আমার কথা!
কেন, আপনাকে কবির ঢাকা থেকে পাঠায় নি? রথীন্দ্রনাথ ইন্সিটিটিউশনে বাংলা পড়াতে আসতেছেন না?
হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি ঢাকা থেকেই এসেছি।
আমি তো তাহলে ঠিকই আন্দাজ করেছি। আসুন, আমার সংগে আসুন।
ভদ্রলোকের সঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে আসাদ অবাক হয়ে ভাবছিল—সত্যি সত্যি কী করে এমন একজন এসে উপিস্থিত হলো। লোকটিকে ওর অন্ধকার সমুদ্রে একটা বাতিঘর মনে হচ্ছিল। সে নিজেকে আরো পরিচিত করতে আবার প্রসঙ্গটা তুলল।
আমি স্কুলে যোগদান করতেই এসেছি। কিন্তু সেটা তো পতিসর হাই স্কুল…
ওটাই রবীন্দ্রনাথের পতিসর হাই স্কুল, নাম রথীন্দ্রনাথ ইনস্টিটিউশন। আমরা তো কেবল রবীন্দ্রনাথকেই চিনি, কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথকে তো চিনিই না। তিনিও যে কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন, সে কথা আমরা ক’জনই বা জানি?
তিনিও কি জমিদার ছিলেন?
সেটাই তাঁর আসল পরিচয় নয়। তাঁর প্রকৃত পরিচয় আমরা অবহিত নই।
কী পরিচয়?
রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন উপমহাদেশের পথিকৃৎ কৃষিবিজ্ঞানী, প্রথম বাঙালী কৃষিবিদ। সত্যি বলতে কি রবীন্দ্রনাথের যথার্থ পরিচয়ই যখন আমরা জানি না, তখন তাঁর ছেলের পরিচয় কী করে জানব! সে কথা থাক। আপনি আজই এসে পড়বেন আমরা কেউ সেটা ভাবিনি।
আশরাফ ভাই চলে আসতে বললেন। আর আমারও দেরী করবার দরকার ছিল না।
ভালোই করেছেন। আশরাফ ফোনে আপনার খুব প্রশংসা করেছিল। বলছিল, আপনি ওর খুব প্রিয় ছাত্র। খুব ভালো গল্পও লেখেন। আরো অনেক কথাই সে বলছিল। আমাদের বউমা আপনার সঙ্গে পড়ত, ইত্যাদি আরো কত কথা বলছিল।
শশাঙ্ক বাবুর কথায় আসাদ মনের জোর ফিরে পেয়েছিল। হঠাৎ তার সংগে দেখা না হলে কী যে হতো—টর্চের আলোয় তার সঙ্গে পথ চলতে সে কথাই সে ভাবছিল। একবার ভাবছিল, রাতটা নাটোরে কাটিয়ে সকালে আসা উচিত ছিল। আবার ভাবছিল, সান্তাহার জংশনে রাত কাটালেও পারত। এখন মনে হচ্ছে, যা হবার সে তো হয়ে গেছে। রাতটা কাটাবার কোনোরকম একটা ব্যবস্থা যদি ভদ্রলোকের অছিলায় হয়ে যায়!
আপনার রাতের খাবারের ব্যবস্থা করতে একটু সময় দিতে হবে।
আসাদ বুঝতে পেরেছিল, শশাঙ্কবাবু ওর থাকা খাওয়া নিয়ে পথ চলতে চলতে ভাবছিলেন। তাকে বিব্রত না করতে সে বলল,
সে আপনি ভাববেন না। আমি আত্রাই স্টেশনে খেয়ে এসেছি। রাতটা কাটাবার একটা ব্যবস্থা করে দিতে পারলেই হবে। এত রাতকরে এসে আপনাদের বিপদে ফেলা আমার উচিত হয়নি। আমি আসলে বুঝতে পারিনি এত রাত হয়ে যাবে।
না ওরকম কোনো বিপদ নয়। আসলে অজপাড়া বলে কথা। আপনি তো আর পথঘাট চিনতেন না, বা জানতেনও না কখনকার ট্রেন কখন পৌঁছাবে।
আমি তো আগে কখনো এদিকে আসিনি। আর আজ আসবো, এটা আশরাফ ভাইকে জানাতেও পারিনি।
যা করেছেন ভালোই করেছেন। একটা ঘর আপনার জন্য ঠিক করা আছে। কিন্তু তেমন ভালো ব্যবস্থা নয়।
কোনোরকম হলেই চলবে।
আসুন। দেখি ঘরটার কী অবস্থা। পরিষ্কার করার সময় পেলে অবশ্য গুছিয়ে রাখা যেত।
টর্চের আলো জ্বেলে জ্বেলে টানা বারান্দাওয়ালা একটা ঘরের শেষ প্রান্তে এসে শশাঙ্ক বাবু দরোজার তালা খুলে দিলেন। আর ঘরে ঢুকতেই কতগুলো পাখি অন্ধকারে ডানা ঝাপটিয়ে আগন্তুক দেখে প্রতিবাদ করতে শুরু করল।
এটা আমাদের স্কুলের একটা ছাত্রাবাস। চাবি আমার কাছেই থাকে। অনেকদিন ধরে ছাত্র থাকে না। তাই দরোজাও খোলার দরকার হয় না। কেউ থাকে না বলে পুরো ঘরটাকে পাখিগুলো নিজেদের ঘর ভেবে নিয়েছে। আপনি থাকলে ওরাও ওদের জায়গা ঠিক করে নেবে। না হয় থাকবেন মিলে মিশে। কী করবেন? সকলেরই তো একটা আশ্রয় দরকার, তাই না?
কী এগুলো?
এগুলো পায়রা, নিরীহ শান্তিপ্রিয় পাখি।
আমি ভাবছিলাম, বাদুড় হবে হয়তো।
বাদুড়কে ভয় পান? বাদুড় নিশাচর, তাই রাতে ঘরে থাকে না। রাতের আঁধারে ফলের বাগান তছনছ করে।
ও, আচ্ছা।
ঘরটা পরিষ্কার করে রাখার জন্য বলা হয়েছিল। আজ আসবেন আমরা কেউ আন্দাজ করতে পারি নি। আপাতত একটা বিছানার চাদর আর একটা বালিশ আমার বাড়ি থেকে এনে দিচ্ছি। কাছেই আমার বাড়ি; যেতে আর আসতে বেশী সময় লাগবে না।
আমার সঙ্গে একটা চাদর আর একটা হাওয়া-বালিশ আছে। দূরে কোথাও গেলে এগুলো আমি সঙ্গে রাখি। কখনো কখনো জরুরি কাজ চালানো যায়।
আপনি বেশ সচেতন মানুষ। তাহলে আজকের রাতটা কোনো রকমে চালিয়ে নিন। কাল ঘরটা ঠিকঠাক করে দেয়া যাবে।
আপনি ভাববেন না। আমার ঘুমের কোনো ব্যাঘাত হবে না।
সামনে ঘোষের ঘর আছে। সকালে চিড়া-দই-কলা কিংবা মাঠা-মাখন-মোয়া খেতে পারবেন। এসব হলে চলবে তো?
বেশ চালানো যাবে।
কাল দুপুরে আমার বাড়িতে যা কিছু হয় গ্রহণ করবেন।
আমি আপনাকে বিব্রত করতে চাই না।
আপনার কি আমার বাড়িতে আহার করতে আপত্তি আছে?
আপত্তি থাকবে কেন?
আমি হিন্দু মানুষ, তাও আবার জলদাস।
এসব কী কথা বলছেন? এখন আমি আপনার কথায় বিব্রত বোধ করছি।
আচ্ছা, ঠিক আছে। রাত হয়েছে। আজ কোনো রকম শুয়ে পড়–ন।
আসাদ ব্যাগ থেকে বিছানার চাদর আর বেলুনবালিশ বের করে নিল। মেস ছাড়বার আগে এ দুটো বস্তু সে সংগে নিয়েছিল। বিছানায় শুতে যাবার আগেই শশাঙ্ক বাবু আবার ফিরে এলেন।
একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। দেয়ালের বাইরে টয়লেট আছে। দরকার পড়লে বের হয়ে—ওদিক—সামনে টিউব ওয়েল আছে। দরোজার চাবির সংগে টয়লেটের চাবিও আছে।
ঠিক আছে।
শোবার পর পাখিগুলো আবার আকুম-বাকুম করে অন্ধকারে উড়াউড়ি করতে শুরু করলে আসাদের মনে হয়েছিল পায়রাগুলো ওকে ওদের আবাস ছেড়ে চলে যেতে বলছে। আবার ভাবছিল, ওকে আশ্রয় দিতে গিয়ে পায়রাগুলো নিজেরা আশ্রয়হারা হওয়ার আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তবে ধীরে ধীরে পায়রাগুলো শান্ত হয়ে এলে—তারপর সমস্ত চরাচর নিঃস্তব্ধতার অতলে ডুবে গেলে—কখন আসাদও ঘুমের অতলে ডুবে গিয়েছিল বুঝতেই পারে নি।

বাড়িটার সামনের খোলাচত্বর পেরিয়ে আসাদ করিম দেখল ছোটো একটা নদী। হাঁটতে হাঁটতে সে আরো এগিয়ে গেল। ইংরেজি ‘এস’ অক্ষরের মতো সর্পিল বাঁক নিয়ে নদীটার দু’দিক চোখের আড়াল হয়ে গেছে। দেখে মনে হয় এটা কোনো নদী নয়, মরা নদীর একটা কঙ্কাল পড়ে রয়েছে। নদীটাকে নদী না বলে খাল বললে মানানসই হয়। এপারে ওপারে তীরের কোলঘেঁষে গাছপালার ছায়ায় ছোটো ছোটো ঘর। ওপারে কয়েকটা গরু চরছে। আরেকটু দূরে ফসলের অবারিত মাঠ। সবুজ মাঠে চাষিরা কাজ করছে। একজন লোক একটা মটর সাইকেল ঠেলে শুকনো নদী পার করল। একটা আদুল-গা কিশোর একটু দূরে দাঁড়িয়ে একবার আসাদের মুখের দিক একবার নদীর দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে। আগন্তুক দেখে হয়তো মনে কৌতূহল জেগেছে। জলের ধারে মাছের লোভে একটা বক একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে ঐ কিশোর একটা ঢিল ছুঁড়ল। তাড়া খেয়ে বকটা উড়ে গেলে আসাদ ছেলেটাকে ডাকল।
এই খোকা, শোনো। ঘোষের দোকানটা কোথায়?
নিত্যঘোষের ঘর? ছেলেটি আঙুল তুলে দেখাল, ঐ যে মাঠের কোণায়।
মাঠের একপাশে কয়েকটা দোকান আসাদ দেখতে পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেল। সে দেখল, একটা দোকান থেকে দু’জন লোক উঠে চলে যেতে ওর দিকে একবার পেছন ফেরে তাকালও। ওর মনে হলো যেন ওকে দেখেই চলে গেল। একটা রম্বা টুলে বসে দোকানে কী কী আছে আসাদ দেখতে থাকে। ওকে দেখে দোকানি এগিয়ে এলো। তার খালি গাঁ, স্বাস্থ্যখানা বেশ তেল চকচকে। অচেনা লোক দেখেও মুখে হাসি নিয়ে সে কাছে এসে দাঁড়াল।
নাস্তা খাওয়ার মতো কী আছে?
দই, চিড়া, মিষ্টি—খাঁটি গরুর দুধের চা।
খাঁটি গরুর দুধ!
হ্যা একেবারে খাঁটি।
আসাদের হাসি পেলেও চেপে রাখল। গরু খাঁটি সন্দেহ নেই, তবে দুধও কি খাঁটি? গরুতে ভেজাল দেয়া সম্ভব নয়। কত কী ভেজাল প্রতিদিন মানুষ খাচ্ছে! আশরাফ স্যার তাকে বলেছিলেন, গ্রামে তুমি সব খাবার খাঁটি পাবে, খাঁটি দুধ পাবে, দইচিঁড়ামাখন পাবে।
কী খাবেন?
দই-চিঁড়া-মিষ্টি যা আছে দেন।
দই-চিঁড়া খেতে খেতে আসাদ আশেপাশে তাকাচ্ছে। কুঠিবাড়ির ফটকটা এখান থেকে বেশ চোখে পড়ছে। ফটকের মাথার উপর দুটো সিংহমূর্তি। ক্ষমতা ও হিংস্রতার প্রতীক? একটা সিংহের লেজ খসে গেছে। সিংহের মাথায় একটা চিল বসে আছে।
দই-চিঁড়া খেতে আসাদের বেশ ভালো লাগল। দই-চিঁড়া আর মিষ্টি দিয়ে যে নাস্তা সেরে নেয়া যায় সেটা মনে ছিল না। মনে থাকবার কথাও নয়। কতবছর পর খেয়েছে সেও কি মনে আছে!
কুঠিবাড়ি দেখতে এসেছেন?
কুঠিবাড়ি?
আসাদ ভাবছে, ইংরেজ নীলকর এত অজ-পাড়াগাঁয়ে এসে কুঠি স্থাপন করেছিল? কোনো জমিদারবাড়ি সাধারণত এত সাদামাটা হয় না। বাড়িটা সেরকম আলিশান আর প্রাসাদোপমও নয়। জমিদারবাড়ির চারপাশে যে রকম উঁচু দেয়াল বা পরিখা থাকে, তাও নেই। দেখে অবশ্য পরিত্যক্ত মনে হয় না। আবার লোকজন বসবাস করে এমনও মনে হয় না। ফটকটা তালাবদ্ধই দেখা যাচ্ছে। সামনে খোলা জায়গাটায় ছেলেরা যে বলটল খেলে সেটা বোঝা যায়।
কোথা থাকি আসতিছেন?
ঢাকা থেকে।
কুঠিবাড়ি দেখতে বিদেশ থেকেও লোক আসেন।
আসাদ কুঠিবাড়ির দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকাল। সে বুঝতে পারে এটাই রবীন্দ্রনাথের কাছারি।
কত হলো?
দশটাকা।
টাকা দিতে দিতে আসাদ শশাঙ্ক বাবুকে আসতে দেখতে পেল। রাতে তাকে ভালো করে দেখা হয়নি। এখন আলোতে দেখে ওর মনে হচ্ছে ভদ্রলোক ভদ্রলোকই বটে। মাঝবয়সী ভদ্রলোকের হালকাপাতলা শরীর। চোখে ভারি চশমা। কাঁচাপাকা গোঁফ আছে। শিক্ষক বলে সহজেই ভাবা যায়। তিনি আসাদকে লক্ষ্য করেই যে দোকানের দিকে এগিয়ে আসছেন সে বুঝতে পারছে।
শুভ সকাল।
শুভ সকাল। আসুন। বসুন।
নাস্তা খেলেন?
দই-চিড়া-মিষ্টি খেয়েছি।
নিত্যানন্দর দই-মিষ্টি বেশ ভালো, তাই না?
খুব ভালো লাগল। অনেক দিন পর দই-এর আসল স্বাদ পেলাম। শহরের দই তো দই নয়, হয়তো মিষ্টি-দই, অথবা টক-দই। আর কী দিয়ে তৈরী সেটা কে জানে!
আদাব, স্যার। এনাকে তো চিনলাম না।
ইনি আমাদের স্কুলের নতুন মাস্টার। আসাদ করিম। স্যারকে চিনে রাখো। ভালো খাবার-দাবার দিবে, যত্নআত্তি করবে ঠিক মতন। গ্রামের স্কুলে পড়াতে ঢাকা থেকে এসেছেন, ঠিকমতো আদর যত্ন না করলে বদনাম হবে। চলেও যেতে পারেন। কথাটা মনে রাখবা।
স্যারকে আমি ভালো খাবার দিব না? অবশ্যই দিব। আমার দই তো দই, মাঠাতেও ভেজাল নেই। স্যার, আমি আপনাকে চিনতে পারি নাই। আমার বেয়াদবি ক্ষমা করবেন।
আপনার দই-চিড়া খুব ভালো। বহুদিন এমন খাই নি।
রাতে ঘুম ভালো হয়েছিল?
রাতে শশাঙ্ক বাবুর সহযোগিতার কথা আসাদের মনে পড়ল। সত্যি এমন সাহায্যকারী মানুষ পাওয়া দুষ্কর।
কোনো অসুবিধা হয়নি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তারপর আর টেরই পাই নি। আর ঘুম ভাঙল পাখির কলকাকলিতে।
আপনার ঘরটা ঠিকঠাক করে দিতে হবে। ব্যবহার না করলে রাজপ্রাসাদও বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায়। আর এটাতো এখন একটা পরিত্যক্ত ডেরা।
আপনি ভাববেন না। আমি ঠিক করে নিতে পারব। আমার একটা মাথা গুঁজবার ঠাঁই হলেই যথেষ্ট।
চলুন, স্কুলের দিকে যাই।
আপনাদের গ্রামটা বেশ। ছায়াঘেরা, নিরিবিলি।
বাংলাদেশের গ্রাম দেখেই কবিগুরুর মনে এসেছিল, ‘ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড়…।’ আপনি নিশ্চয় আরো ভালো বলতে পারবেন। আপনি সাহিত্যের লোক।
আমি বাংলা পড়েছি। আর কিছু কিছু লিখতেও চেষ্টা করি। কিন্তু গ্রাম সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। আর সেরকম করে গ্রাম সম্পর্কে জানার সুযোগও হয় নি।
এবার জানতে পারবেন। সত্যিই, গ্রামে না এলে আসল গ্রাম চেনা যায় না। আর গ্রামের প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করার জন্য গ্রামের মানুষকে জানা প্রয়োজন। গ্রামে না এলে কবিগুরুও হয়তো গ্রামীণ জীবন আর গ্রামের ছবি তাঁর গল্পে এমন করে তুলে ধরতে পারতেন না। তাঁর কবিতায়ও হয়তো প্রকৃতি এমন করে উঠে আসত না—‘অবারিত মাঠ গগনললাট চুমে তব পদধুলি…’ কী সুন্দর ছবি! আগে কি এমন করে আর কোনো কবি লিখেছেন?
আপনার উপলব্ধি তো চমৎকার!
না না, আমি রবিঠাকুরের লেখা সামান্য পড়েছি মাত্র। আপনার মতো সাহিত্যের মানুষ পেয়ে বলতে কথা কলতে ইচ্ছে করল আর কি! বলতে পারেন, একরকম ব্যর্থ চেষ্টা আর কি!
রবীন্দ্রনাথের সব কবিতা কারো পক্ষেই পড়ে ফেলা সম্ভব নয়। না পড়তে পারলেও অসুবিধা নেই। একটি কবিতাও যদি কারো অনুভূতিকে নাড়া দিয়ে যায় তার মূল্যও অপরিসীম।
কবিতা তো অনুভবেরই বিষয়। গ্রামের আষাঢ়-প্রকৃতি না দেখে শহরে বসে রবীন্দ্রনাথের ‘আষাঢ়’ পাঠ করে কি কেউ বাংলাদেশের আষাঢ় মনে আনতে পারবে?
আপনি যথার্থই বলেছেন। সাহিত্যের আসল স্বাদ পেতে স্থানকালের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
রবীন্দ্রনাথের দেখা জীবন আর প্রকৃতিই তাঁর লেখায় ঘুরেফিরে এসেছে।
আচ্ছা, কবির কী কী স্মৃতি আছে, এখানে?
এই বাড়িটা তো আছেই। পুকুর, দীঘি আর স্কুল আছে।
রবীন্দ্রনাথ প্রথম কখন পতিসর এসেছিলেন?
১৮৯১ সালের জানুয়ারিতে।
এত অল্প বয়সে?

Series Navigation<< উপন্যাস// মাটির প্রদীপ ছিল, সে কহিল// নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর// দুইউপন্যাস।। মাটির প্রদীপ ছিলো, সে কহিল।। নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর।। পর্ব চার >>

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *