ঈদসংখ্যার।। নোনা ইলিশ।। সাঈদ আজাদ

মাটিতে তিন দিকে তিনটা ইট। সেগুলোর উপর উপর আরো তিনটা। তাতে ইটগুলো চুলার আকার পেয়েছে। ইটগুলোকে আরো কাছাকাছি এনে চুলার মুখটা ছোট করে রাহেলা। পাশে রাখা পানি ভর্তি গ্যালনটা এক সময় বোধহয় সাদা ছিল, এখন রং প্রায় কালচে সবুজ। গ্যালন থেকে রঙ চটা টিনের একটা মগে একটু পানি ঢালে সে। মগটা চুলায় বসায়। চা করবে।
যদিও এখন মাঘ মাস, তবে গতরাতে এক পসলা বৃষ্টি হয়েছে। তাতে আশেপাশের ধুলা সব মরেছে ঠিকই, কিন্তু জাড়টা পড়েছে জবর। একেবারে হাড়ে গিয়ে কাঁপন ধরায়। কুটাকাটা কী খুচরা কাঠ যা কুড়িয়ে ছিল গতকাল, সব গেছে ভিজে। আগুনটা ধরতেই চাইছে না। দেশলাইয়ের কাঠি জ্বেলে কাগজের নিচে ধরে রাহেলা। কাগজও তো ন্যাতানো, ধোয়াই বের হয় শুধু। আর মাত্র দু‘টা কাঠি আছে। আগুনটা না ধরলে হবে কী করে! আগুনে শীত তো যাবেই, চা-টাও খাওয়া হবে । চা টা দরকার, সকাল থেকে গলাটা কেমন খুসখুস করছে।
বিড়ালটা বোধহয় গিয়েছিল কোথাও। এখন এসে লেজ উঁচু করে রাহেলা গায়ে গা ঘষে। নিচু স্বরে মিউ মিউ করে বার দুই ডাকে। ক্ষুধা লেগেছে বোধহয়। তা ক্ষুধা তো পেয়েছে রাহেলারও। কিন্তু পেলেই বা কী। খাবার খেতে খেতে সেই এগারোটা বারোটা। চা-টা পেটে গেলে ক্ষুধাটা তবু একটু মরে মরে থাকবে।
কপাল ভাল, আরেকটা কাঠি জ্বালাতেই আগুনটা ধরে। রাহেলা কিছু কাঠের টুকরা আর কুটাকাটা ঠেসে দেয় আগুনে। দেখতে দেখতে আগুন গনগনিয়ে উঠে, পানি ফুটতে থাকে। দুটো টি ব্যাগ পানিতে ছাড়ে সে। টি ব্যাগগুলো চায়ের দোকান থেকে কুড়িয়ে আনা। চা খাওয়ার পর লোকজনের ফেলে দেওয়া। পানিতে একটু দেরীতে রং ধরে। আর রঙটা ঠিক মনোলোভাও হয় না। তা হোক, ভিক্ষার চাল কাঁড়া আর আকাঁড়া। চায়ের স্বাদটা অন্তত পাওয়া যায়।
চা টা ফুটেছে ভালমত, কেমন চনমনে গন্ধ বের হয়। অনেক বলার পর ছেলেটা একটু গুড় এনে দিয়েছিল, তা কবেই শেষ। খালি চা-ই খেতে হবে। রাহেলা কাগজে ধরে সাবধানে মগটা নামায়। একটা ইট পিঁড়ির মত নিয়ে জুৎ করে বসে। ছোট করে চায়ে চুমুক দেয়। কেমন ধোয়া ধোয়া গন্ধ! স্বাদটাও তিতকুটে। হোক গে, গাটা তো গরম হবে। বিড়ালটা বোধহয় গন্ধ পেয়েছে। বুঝেছে কিছু খাচ্ছে রাহেলা। রাহেলা কিছু খেলে ঠিক বুঝে । কেমন রাহেলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আহা, কুকুর হলে না হয় ডাস্টবিন থেকে ময়লা খুঁজে খেতে পারত। কুকুরগুলোতো দেখলেই তাড়া করে বেচারাকে। একটা কাক রাহেলার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। বিড়ালটা একবার কাকটার দিকে তাকায়, ডাকে। কাকটা পাত্তা দেয় না । কাছাকাছি হাঁটাহাঁটি করতে থাকে। বিড়ালটা গিয়ে কাকটাকে দৌড়ানি দিয়ে আসে। ফের এসে রাহেলার গায়ে গা ঘষে।
আগুনটা এখনো নিভেনি। কাঠকুটা ধিকিধিকি জ্বলছে। রাহেলা মগটা আগুনের কাছে রেখে পলিথিনের ঝুপড়ি থেকে আইলাটা নিয়ে আসে। রাতের বেলা আইলার আগুনে হাত পা সেঁকে রাহেলা। তা রাতে জ্বালানো আগুন এখন ঠান্ডা ছাই। ছাইটুকু ফেলে কাঠের ছোট ছোট টুকরা টাকরা দিয়ে আইলাটা ভরে। জ্বলন্ত একটা ছোট কয়লা রাখে তার মধ্যে। তারপর ফু দিতে থাকে। ধীরে ধীরে ধোয়া উঠতে থাকে। …বউটা বোধহয় খিচুড়ি বসিয়েছে। কেমন চনমনে গন্ধ বের হয়েছে। পেটের ভেতর ক্ষুধাটা মোচড় দিয়ে উঠে রাহেলার।

    খানিক আগে হাঁড়িভর্তি পানিতে চাল ডাল লবণ কাঁচামরিচ হলুদ গুড়া দিয়ে বসিয়েছে আমিনা। এখন বলক উঠেছে। কেমন শোঁ শোঁ শব্দ হয়। আগুনটাও হয়েছে গনগনে। তেজটা একটু কমানো দরকার, না হলে হাঁড়ির মুখ ঠেলে উথলে পড়বে চাল ডাল পানি। আমিনা কাঠের জ্বলন্ত টুকরাটা একটু বের করে নেয় চুলা থেকে। আঁচটা খানিক কমে তাতে। চামচ দিয়ে একবার ঘুঁটা দেয় হাঁড়িতে। ঢাকনাটা একটু ফাঁক রেখে হাঁড়ির মুখে বসিয়ে দ্রুত হাতে আনাজ কুটতে থাকে । ফুলকপি লাউ আলু বেগুন আর খানিকটা বাঁধাকপি। আনাজ সব বাজার শেষে কেনা, সবগুলোই খানিক দাগি। তা হোক, দামে তো কম পড়েছে।... কাটা হয়ে গেলে একপাশে তরকারির ঝুড়িটা সরিয়ে রাখে। খিচুড়িটা একটু হয়ে এলে পরে তাতে ঢেলে দেবে কাটা তরকারিগুলো। তা দেওয়া যায় এখনও। কিন্তু তাতে খিচুড়ি পুরোপুরি হতে হতে তরকারি সব যাবে গলে। খিচুড়ির বরকত হবে না। তরকারি গলে গেলে পেটেও থাকবে না বেশিক্ষণ। তাই সময় বুঝে তরকারিগুলো দিতে হবে। যাতে সিদ্ধ হয়, তবে গলে না যায়।
     খিচুড়ি হয়ে এসেছে প্রায়। হাঁড়ি নামিয়ে কড়াই চুলায় বসায় আমিনা। তাতে একটু তেল দিয়ে গরম হলে কুচানো পেয়াজ ছাড়ে। ছ্যাঁৎ করে একটা শব্দ হয়। তেলে কয়েকটা শুকনা মরিচ ছাড়ে। দেখতে দেখতে পেয়াজ মরিচ ভাজার একটা গন্ধ ছড়ায়। কড়াইয়ে একটা ডিম ছেড়ে ঘুটা দিয়ে কিছুক্ষণ ভাজে। যখন ডিমভাজার সুন্দর গন্ধটা নাকে ঠেকে তখন তাতে খানিকটা খিচুড়ি ঢেলে ভালমত মিশায়। পরে মিশ্রণটা হাঁড়িতে সব খিচুড়ির উপর ঢেলে দেয়। কুচানো ধনে পাতা দিয়ে চামচে সবটা খিচুড়ি ভালমত ঘুঁটা দিয়ে ঢাকনা চেপে রাখে। ফোড়ন দেওয়া হল। খিচুড়ি রান্নাও শেষ।
   চনমনে গন্ধটা বেশ জোরালো হয়েছে। বউও হাঁড়িটা নামিয়ে রেখেছে। বোধহয় খিচুড়িটা হয়েছে। পেটের ভেতর ক্ষুধাটা আবার মোচড় দেয় রাহেলার। তা বেলা কী কম হল নাকি। প্রায় দুপুর হতে চলল। অবশ্য বউ না বললে খেতে বসার উপায় নেই। দু‘বেলা খাবার হয়। বেশ বেলা হলে একবার, সন্ধ্যার পরে একবার। ঘুম থেকে উঠার পর যেন ক্ষুধাটা লেগেই থাকে ।
   আগুনটার তেজ কমে এসেছে, তবে এখনো জ্বলছে। তাতে তাওয়া বসায় আমিনা। তাওয়া গরম হতে হতে ঝুপড়ি থেকে শুঁটকির মাথাগুলো নিয়ে আসে। তাওয়ার একটু উপরে হাত রেখে পরখ করে কেমন গরম হল। আঁচ টের পাওয়া যায়। শুঁটকির দোকান থেকে কমদামে কিনে আনা মাথাগুলো যত্ন করে বিছিয়ে দেয় তাওয়াতে। দশ বারোটার মত। ধিমা আঁচে শুঁটকিগুলো টালতে থাকে। এক পিঠ পুড়ে সুন্দর গন্ধ ছড়ায় শুঁটকির। আমিনা শুঁটকিগুলো একবার উল্টে দেয়।
   বসে বসে আইলায় হাত পা সেঁকে আর দেখে রাহেলা। শুঁটকি টালা হয়ে গেলে আমিনা ভর্তা বানাতে বসবে। কয়েক পদের ভর্তা বানাবে। শুঁটকির মাথা কাঁচামরিচ শুকনা মরিচ লবণ পেয়াজ আর ধনে পাতা একসাথে মিহি করে বাটবে। গেলো এক পদের। পুদিনা পাতা ধনেপাতা কাঁচামরিচ ত্তেুল আর লবণ দিয়ে বেটে আরেক পদের করবে। আর আছে সরিষা লবণ মরিচ বাটা। মাঝে মাঝে কালিজিরা মরিচের ভর্তাও বানায়। বউটা সব ভর্তাই ভারী ভাল বানায়। অবশ্য ভাল হওয়ারই কথা। সারা জীবনতো ভর্তা বানিয়েছে কী শাক পাতাই রেধেছে। 
   শুঁটকি হয়ে গেলে তাওয়া চুলা থেকে নামায় আমিনা। আগুনে খানিকটা পানি ছিটায়। আগুন নিভে ধোয়া উঠে। ঝুপড়ি থেকে ছোট পাটাটা বের করে পানি দিয়ে একবার ধুয়ে নেয়। পুতাটাও ধোয়। একপাশে ছোট একটা বাটিতে একটু পানি নিয়ে বাটতে বসে। সবার আগে সরিষা মরিচের ভর্তাটা বানায় । শেষ হলে বাটিতে রাখে। তারপর পুদিনা আর ধনে পাতার ভর্তা করে। সবশেষে শুঁটকির। শুঁটকির মাথা একটু পিষে, একটু পানি দিয়ে পেয়াজ মরিচ লবণ দিয়ে ভালমত বাটে। খুব যত্ন করে ভর্তা বানায় অমিনা। সরিষার পাতার ভর্তা থেকে যেন শুঁটকির  গন্ধ না আসে সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়। তাই শুঁটকির ভর্তা বানায় শেষে। কেউ কেউ শুঁটকির ভর্তা মজা করে খায়, আবার অনেকেই আছে, শুঁটকির গন্ধ সহ্য করতে পারে না। বলতে কী ভর্তার গুণেই আমিনার পিঠা চলে। একটু উনিশ বিশ হলেই খদ্দের চলে যাবে আরেকজনের কাছে।... সব ভর্তা হলে আমিনা ঝুপড়িতে  রেখে আসে। ভর্তা বিকালে পিঠার সাথে বেচার জন্য। 
   আম্মা খেতে আসেন। খিচুড়ি বাড়লাম।...পরীটা আবার কোথায় গেল!
   যাইব আর কই! আছে, আশেপাশে কোনখানে। খিচুড়ি বাড়, গন্ধেই চইল্লা আসব।
   এত না করি দূরে যাইস না, যদি শুনত! আসুক একবার ওর ঠ্যাং যদি না ভাঙ্গছি!
   সারাক্ষণ মাইয়্যাটার পিছনে লাইগ্যাই আছ। ছোট মানুষ, সারাক্ষণ এক জায়গায় বইস্যা থাকব ক্যামনে। যাক না একটু এদিক ওদিক, আমিত দোষ দেখি না। শহরটা একটু চিনুক।
   শহর চিন্যা কাম নাই। সারাজীবন থাকতে আইছি নাকি! কিছু টাকা জমলেই ফিরা যামু।
   তা মাঝে মাঝে বলে অবশ্য ছেলে না হয় বউ, টাকা জমলে বাড়ি ফিরে যাবে। বাড়িতে কী মধু কে জানে! সেইতো না খেয়ে থাকা। নিজের ভিটেটা পর্যন্ত নেই। পরের জায়গায় ছাপরা ঘর তুলে থাকা। তা মাগনা কী থাকতে দেয়। উঠতে বসতে কথা শোনায়, আমিনাকে দিয়ে নিজেদের সংসারে কাজ করায়। ...তেমন কোন কাজকামও নেই গ্রামে। রশিদকে কাজ করতে হয় মাটি কাটার। পানিতে ডুব দিয়ে দিয়ে মাটি কাটা। কত কষ্ট। কত কষ্ট! দু‘দিন কাজ করলে দু‘দিন বসে থাকতে হয়। শরীরতো আর যন্ত্র না। এখানে এসে যেমনই হোক, ছেলেটা কাজ তো করে। আর আমিনাও বসে থাকে না। বিকাল হলে, পিঠা বানিয়ে বিক্রি করে। এখনো হয়তো স্থায়ী আশ্রয় হয়নি। টাকার সরবরাহ নিয়মিত হলে একটা বাসা ভাড়া নেওয়া যায়।...তবে টাকা কি জমছে না? রশিদ বা আমিনা একটা টাকাও তো বাড়তি খরচ করে না। তাহলে কি গ্রামে ফিরে যাওয়ার জন্যই টাকা জমাচ্ছে ওরা!
   পরী আসে। মায়ের দিকে ভয়ে ভয়ে একবার তাকায়। আমিনা পরীকে দেখে কিছু বলতে গিয়েও বলে না। রাহেলা বলে, শিগ্গির খাইতে ব। খিচুড়ি ঠান্ডা হয়। 
   খালি খিচুড়িই দিয়েছে আমিনা। খিচুড়ি থেকে ধোয়া উঠছে। কত পদের ভর্তা বানাইলা, একটু খামু না! রাহেলা বলে।
   আম্মা আপনে জানেন না, ভর্তা পিঠার লগে বেচার লাইগ্যা। খিচুড়িতে ডিমের ফোড়ন দিলাম না! বললেও, ঝুপড়িতে গিয়ে হাতে করে একটু ভর্তা নিয়ে আসে আমিনা। নেন, শুঁটকির ভর্তা। তাড়াতাড়ি খাইয়্যা উঠেন। আমার আবার গুঁড়ি নিয়া বসতে হইব। বিকাল হইতে দেরী নাই। 
   রাহেলা খানিকটা ভর্তা নাতনিকে দেয়। মাইখ্যা খা, সোয়াদ বেশি লাগব।... নোনার বড়া হইত যদি! মশলা দিয়া চালকুমড়ার পাতায় জড়ানো নোনা ইলিশ। আমিনা, রশিদরে কইওতো একটু নোনা ইলিশ আনতে। আহা কতদিন খাই না!
   নোনা ইলিশ কত কইরা কেজি জানা আছে আপনের? সাতশ আটশ টাকার কম না। দিনমুজুরি কাজে পায় কত। বেহুদা খরচ করার উপায় আছে। 
   বিড়ালটা কখন এসে গা ঘষছে রাহেলার গায়ে। একবার করুণ স্বরে মিউমিউ করে। রাহেলা এক খাবলা খিচুড়ি দেয় বিড়ালটাকে। আমিনা তাকায়। 
   আহা, খিদেতো পায় বিলাইটারও। রাহেলা যেন কৈফিয়ত দেয়। আমার ভাগ থাইক্কাইতো দিছি। 
   নিজে পান না খাইতে আবার  জুটাইছেন একটা। বলতে বলতে রাহেলা আরেক চামচ খিচুরি দেয় শাশুড়ির পাতে।
   আমিনার বরাবরই দয়ার শরীর। খালি মনের কথা মনে রাখে না, মুখে বলে ফেলে। বুঝে না, সব কথা বলতে নেই।

    আমিনা একটু আগে চলে গেছে, পিঠা বেচতে। পরীও বোধহয় কোথাও বের হয়েছে। রাহেলা নিভন্ত চুলার পাশে বসে হাত পা সেঁকছে। কেমন কাঁচা গুয়ের গন্ধ আসছে। পাশের ড্রেনটা থেকে বোধহয়। এখানে যারা থাকে, সবারই পলিথিনের ঝুপড়ি। মশারির মত করে টানানো। শীত বলে বৃষ্টিটা নেই। গোছল পায়খানার কোন জায়গা তো নেই। বড়রা না হয় একটু আড়াল-আবডাল খোঁজে, ছোটদের ওসব চিন্তা নেই। খোলা ড্রেনেই বসে যায়। বাতাস বদগন্ধটা নিয়ে আসছে। তা শোনা যাচ্ছে, এখান থেকেও নাকি ওদের চলে যেতে হবে। জায়গাটা নাকি সরকারের। লোকজন বলে, নাকি র‌্যাবের অফিস হবে। র‌্যাব কী কে জানে!...বিড়ালটা আছেই। আরাম প্রিয় প্রাণী। পায়ের কাছে বসে আছে। আমিনা ঠিকই বলে, কাজের না কোন। খালি খায় আর ঘুমায়!
   মদিনা আসে এমন সময় । খালি পা, কাঁধে ঝোলা। আসছে কদিন ধরেই। ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করে। ভালই নাকি রোজগার। রাহেলার মতই হবে বয়স। এখানেই একদিন আলাপ হয়েছে। সেদিনও রাহেলা বসে আগুনে হাত পা সেঁকছিল। শীতটা  ছিল বলার মত। বউ ছেলে তখন বাইরে, কাজে গেছে। পরী ঘুমাচ্ছে ঝুপড়িতে। মদিনা কোত্থেকে এসে আগুনের পাশে বসে। শীতে কাঁপছিল। তখনই কথা হয়েছে। ছেলে মেয়ে নেই তা না। তিন ছেলে আছে, তবে কেউ ভাত-কাপড় দেয় না। খোঁজ নেয় না। যে যার মত আছে। উপায় না দেখে ভিক্ষায় নেমেছে মদিনা। 
   আছ কেমন?
   আছি আল্লার রহমতে। বাইর হইছিলা বুঝি?
   না বাইর হইয়া উপায় আছে। খাওন লাগব না! ...দুইদিন ধইরা শীতটা কী পড়ছে দেখছ! সূর্যেরও দেখা নাই। শীতে হাত পা য্যান বেঁকা হইয়া আসে। পা চলতে চায় না।
   আগুনটার কাছে আগাইয়া বস। খুঁচিয়ে আগুনটা একটু উসকে দেয় রাহেলা। বলে, তোমার ছেলেগ কাছে যাও টাও না?
   গিয়া আর কী হইব। মদিনা কাঁধের ঝোলাটা রেখে রাহেলার পাশে বসে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, গেলে কুত্তা বিলাইয়ের মত দূর দূর করে। না তাগ লাইগ্যা আর মায়া নাই। খালি নাতি নাতনীগ লাইগ্যা মনটা পুড়ে। তা কী করমু, নাতি নাতনিগ সোহাগ করার নসিব নাই ।... তোমার বউ কই, বাইর হইছে বুঝি?
   হ। পিঠা বেচতে।
   একটা আপেল আনছিলাম তোমার লাইগ্যা, বলে ঝোলা থেকে আপেলটা বের করে মদিনা। এক কোণায় খানিক দাগি, বাকীটা ভালই। খাইয়ো।
   আপেলটা নেয় রাহেলা। তুমি কত কিছু দেও! কোনদিন কিছু দিতে পারি না। আসলে নিজের তো রোজগার নাই। ছেলে আর বউ দুই বেলা খাওয়ার বাইরে কোন খরচ করতে চায় না। বাড়তি রোজগার হইলে জমায়। 
   তুমি কিন্তু ইচ্ছা করলে কিছু রোজগার করতে পার।
   আমি বুড়ি-ধাড়ি মানুষ, কী রোজগার করমু!
   কইতে ভয় লাগে। অভয় দিলে কই।
   কও না, ভয় কী। রাহেলার গলায় আগ্রহ।  
   না, তুমি আবার কী মনে কর। কইতেছিলাম... আমার সাথে তুমি মাঝে মইধ্যে বাইর হইলে পার। কে দেখব। এত বড় শহর ঢাকা। গিজগিজ করছে মানুষ। বয়স্ক দেখলে টাকা পয়সা দেয়।
   ভিক্ষা করতে কও!
   ভিক্ষা ভাবলে ভিক্ষা। দোষ দেখি না কিছু। আশেপাশে গেলেই হয়।
   তাই বইল্যা ভিক্ষা!
   তা পরথম পরথম খারাপ লাগে অবশ্য। বাদ দেও তাইলে। মনে হইল তাই কইলাম। ...যাই আমি। গিয়া রান্না বসাইতে হইব। বাজারেও যাইতে হইব, কিছু তরকারি কিনতে।

   খানিক আগে রান্না হয়েছে। খাওয়া দাওয়াও শেষ। পরী বের হতে চাচ্ছিল, বের হতে দেয়নি আমিনা। মেয়ে বাচ্চা, হুটহাট এখানে সেখানে গেলেই হল। কত রকম বিপদ চারপাশে! পাশের ঝুপড়ির মেয়েটা পরীর চেয়ে ক‘বছরেরই বা বড় হবে। কী কপাল মেয়েটার। কত বড় বিপদটা হল!
   আমিনা নারিকেল কোরাতে বসে। আর ভাবে। কত আর রাত হবে তখন। কোত্থেকে চার পাঁচজন ছেলে এল, কেউ আন্দাজ করতে পেরেছিল কী উদ্দেশ্য ছেলেগুলোর। সাথে অস্ত্র ছিল। সবার চোখের উপরেই কিশোরী মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গেল। লেংড়া বাপটা বাধা দিতে গিয়ে কী মারটাই খেল! তবুও যদি মেয়েটাকে ছাড়ত ওরা। কোথায় নিয়ে গেল কে জানে। দু‘দিন পর মেয়েটা ফিরে এল। আহা, তাকানো যায় না মেয়েটার দিকে। এমন জায়গায় মানুষ থাকে।... রশিদ আর আমিনা প্রাণপণ টাকা জমাচ্ছে। কিছু জমলেই ফিরে যাবে গ্রামে। যেমনই হোক নিজের গ্রাম। পরিচিত জনরা আছে চারপাশে। দুঃখ সুখে আগায়। এখানে কে কাকে চেনে। মরলেও দেখার কেউ নেই।
 নারিকেল কোরাানো হলে, গুড় কাটে আমিনা। গুড়ের সাথে চিনি মিশায়। গুড়ের দাম বেশি, একটু চিনি মিশালে মিষ্টিটা ভাল হয়। পড়তাও পড়ে বেশি। আগে আগে গুড়ই দিতো, এখন অন্যদের কাছে চিনি মিশানো শিখেছে। নারিকেল আর গুড় সামলে রেখে, বড় একটা পাতিলে পানি নিয়ে আতপ চালের গুঁড়ি গুলে। থকথকে গোলাটা হাত উঁচু করে করে বার বার পরীক্ষা করে। আবার বেশি পাতলা না হয়ে যায়। পাতলা হলে চিতইটা ভাল হবে না। ছড়িয়ে ছড়িয়ে যাবে। গোলাটাকে বড় একটা চামচ দিয়ে অনেকক্ষণ ফেটায়। ফের পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হয়। সামান্য সোডা মিশায়। মিশায় সামান্য লবণ। এখন কিছু সময় রেখে দিতে হবে। যত বেশি থাকবে, পিঠা তত ভাল হবে। গরম খোলায় দিলে ফুলে ফুলে উঠবে।...ভাপা পিঠার জন্য গুঁড়ি অন্যরকম করে তৈরি করতে হয়। গুঁড়িতে সামান্য পানি ছিটিয়ে বাঁশের চালনিতে চালে আমিনা। ভিজে ভিজে গুঁড়ি বড় বড় কণা হয়ে নিচে গামলায় পড়ে। আলতো হাতে কণাগুলো নেড়ে দেয় আমিনা, আবার না দলা বেঁধে যায়। তাহলে পরিশ্রম বৃথা যাবে। ভাপা পিঠা ঝরঝরে হবে না। ভেতরেও দলা পাকিয়ে যাবে।
   সব কাজ শেষে বিকালের মুখে বের হয় আমিনা। 

   রশিদ এখন দৈনিক মজুরিতে কাজ করে। তাও পায় না প্রতিদিন। সকাল হলেই যাত্রাবাড়ী মোড়ে গিয়ে বসে। সেখানে তার মত কত যে লোক! প্রথম দিনতো বসতেই দিচ্ছিল না কেউ। যার পাশে বসে সে-ই খেঁকিয়ে উঠে। অন্য জায়গায় গিয়ে বসতে বলে। পরে অবশ্য একজন তাকে পথ দেখিয়েছে। আসলে চাইলেই যে কেউ এসে ওড়া কোদাল নিয়ে বসে যাবে তা পারে না। সর্দার আছে, তার সাথে চুক্তি করতে হয়। তাকে মাসে মাসে দিতে হবে কিছু। তা সেসব ভেজাল এখন মিটেছে। ওড়া আর কোদাল নিয়ে বসলে, চাহিদামত কেউ নিয়ে যায়। কোন দিন আধাবেলা কোনদিন দিনচুক্তি কাজ করে। কোন কোন দিন পায়ওনা কাজ। নতুন বলে সারাদিনে তিনশ টাকার বেশি দিতে চায় না। আধা বেলা হলে একশ কী দেড়শ। রশিদ গ্রামে কাজ করত মাটি কাটার। তা কাজ ছিল শুধু বর্ষাকালে। পানিতে ডুব দিয়ে দিয়ে মাটি কেটে নৌকায় তোলা। কষ্টেরই কাজ। পানিতে থাকতে থাকতে পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে হাজা হয়ে যায়। 
    ছেলের সাথে রাতে খেতে বসে রাহেলা। রাস্তার আলো আছে। তা হলেও আমিনা কুপি জ্বালিয়েছে। কুপির মোটা শিখা দাউ দাউ জ্বলে। সরপুঁটি মাছ কড়া ভাজি করে নতুন আলু আর ফুলকপি দিয়ে রেঁধেছে আমিনা। মাছ একটু যেন নরম ছিল। তবে কড়া ভাজি বলে ঠিক টের পাওয়া যাচ্ছে। কত দিন পরে মাছ রান্না হয়েছে! আমিনার রান্নার হাত ভাল। গরম গরম ভাতে যেন অমৃতই লাগছে।  
   কতদিন মশলা দিয়ে চালকুমড়ায় জড়ানো নোনা ইলিশ খাই না। একবার আনিসত রশিদ। খেতে খেতে বলে রাহেলা।
   নোনার দাম বহুৎ। তার উপর এখন শীতকাল, দাম আরো বাড়তি। বেহুদা খরচের টাকা কই। দুইবেলা ভাত জুটানোই কষ্ট! বউয়ের সুরে যেন কথা কয় ছেলে।...এক বেলায় একশ টাকার নোনায়ও হইব না। ঐ টাকায় না হোক তিন কেজি চাইল পাওয়া যায়। তিন দিনের খোরাকি।  

   শীত যাই যাই করছে, দুপুর বেলাটা এখন যেন গরম গরমই লাগে। রাহেলা বসে ছিল ঝুপড়ির কাছে। বিড়ালটা গায়ে গা ঘষছে। মদিনা আসে।
   অনেকদিন আসো না, রাহেলা বলে।
   দূরে দূরে যাই। কাছাকাছি লোকজন সব মুখ চিনে, গেলে আর কিছু দিতে চায় না। দিব আর কত! ভিক্ষুকের কী অভাব। ...তা তোমগ খবর কী? শুনছিলাম, তোমার পোলা আর বউ গেরামে যাওয়ার টাকা জমাইতেছে। 
   গেরামে যে কী মধু! দুইবেলা পেটা ভইরা ভাতটাও জুটে না। বর্ষায় প্যাচপ্যাচে কাদা, শীতে বেড়ার ভিতর দিয়া বাতাস ঢুইক্যা হাড় কাঁপাইয়্যা দেয়। কথায় আছে না, সুখে থাকতে ভূতে কিলায়! ঢাকা শহরে চলতে ফিরতে কত আরাম। চাইরদিকে কত আলো। কতকিছু দেখার আছে, খালি তাকাইয়্যা থাকলেই দিন কাইট্যা যায়।...তা তুমিত এর মাঝে আর আইলা না। ভাবছিলাম তোমার সাথে বাইর হইমু। সারাদিনত বইসাই থাকি।
   আমিও তাই কই। দুইটা পয়সা হইলে নিজের সাধ আহ্লাদটাও মিটাইতে পারবা। এইখানে সেইখানে ঘুরলে নতুন কত কী দেখা যায়। কত নতুন নতুন মানুষ। উঁচা উঁচা দালান। সুন্দর সুন্দর বাস-গাড়ি! তা কাইলকা লও আমার লগে। 
   পরীরে লইয়্যা বউ বাইর হইলে আইস। 
   রোদের তেজ কমলে রাহেলা মদিনার সাথে বের হয়। মদিনা ঠিকই বলেছিল। এত কিছুও দেখার আছে! দোকান ভর্তি কত কত খাবার দেখো! কারা কিনে এত খাবার! রাস্তায় গিজগিজ করছে মানুষ। এক একটা দালান কত উঁচা! এত উঁচা দালানে মানুষ উঠে কী কইরা মদিনা?
   শোন কথা! সিঁড়ি আছে না।
   সিঁড়ি কী?
   সে আছে। মইয়ের মত উপরে উঠা যায়। 
   এত এত মানুষ যায় কই?
   কই আর যাইব, যার যার কাজে যায়।
   আমারত ভয় লাগতাছে মদিনা, যদি হারাইয়া যাই। বলতে বলতে রাহেলা মদিনার গা ঘেষে আসে।
   ভয় কী, আমার সাথে সাথে থাক। আমি পুরা ঢাকা শহরই চিনি।
   টাকা কামাই করা এত সোজা! সব মিলে রাহেলা একশ তিন টাকা পায়। মুখে কিছু বলতে হয়নি, আসলে পারেনি বলতে। অভ্যাসতো নেই। শুধু হাত পেতেছে। যার দেওয়ার সে দিয়েছে। আমিনা ফেরার আগে মদিনা ওকে পৌঁছে দিয়ে চলে গেলে, রাহেলা ঝুপড়ির ভেতর গিয়ে টাকাগুলো গুনে।...রশিদ বলেছিল, একশ টাকায় নোনা পাওয়া যাবে। ...আমিনা এসেছে বোধহয়। পরীর কন্ঠ শোনা যায়। রাহেলা আমিনাকে একটু এদিক ওদিক ঘুরবে বলে, বের হয়। আসলে বাজারে যাবে।
   বেশি দূরে যাইয়েন না কিস্তু আম্মা, পরে পথ ভুইল্লা যাইবেন। 
   না, এই মোড়ের কাছে যামু। আমিনা যদি জানত, আজ রাহেলা কোথায় কোথায় ঘুরেছে!
   এইতো শুঁটকির দোকান। রাহেলা বাজারে ঘুরতে ঘুরতে দোকানটা খুঁজে পায়। তা সাথে টাকা থাকলে মনে হয় মানুষের মনের বলও বাড়ে। না হলে কতদিন ধরে রাহেলা ঢাকায় আছে, একা বের হওয়ার সাহস পেয়েছে কখনো। রাহেলার চোখ নোনা ইলিশও খুঁজে পায়। এক টুকরা হাতে নিয়ে শুঁকে। কেমন যেন গন্ধটা, মাটি মাটি লাগে। ভাল নোনা নাই? দোকানিকে জিজ্ঞেস করে ।
   দোকানি তাকায় রাহেলার দিকে। যেন বোঝার চেষ্টা করে রাহেলার সামর্থ্য আছে কিনা। আছে। ছয়শ টাকা কেজি পড়ব। একদাম।
   ছয়শ! ছোট একটুকরা কি নিতে পারবে না রাহেলা? দেখান না, গন্ধটা দেখি।
   দোকানী যেন অনিচ্ছাসত্ত্বেও ছোট একটা টুকরা বের করে। রাহেলা হাতে নিয়ে নাকের সামনে ধরে। আহা, কী গন্ধ! গন্ধেই এক গামলা ভাত খাওয়া যায়।...পেয়াজ শুকনা মরিচ আদা রসুন জিরা বাটা নোনায় মাখিয়ে চালকুমড়ার পাতায় মুড়ে অল্প তেলে ঢিমা আচেঁ ভাজা বড়া। ভাবতেই যেন জিভে পানি আসে! রশিদের বাপের কথা মনে পড়ে যায়। মানুষটা বেঁচে থাকতে এমন নোনা আনত। তারও পছন্দ ছিল নোনা ইলিশ।
   টুকরাটার দাম আসে বিরানব্বই টাকা। দাম মিটিয়ে রাহেলা কাপড়ের তলে লুকিয়ে নোনা ইলিশের টুকরাটা এনে নিজের ঝুপড়ির ভিতর লুকিয়ে রাখে। আমিনা রাতের রান্না চড়িয়েছে, ধোয়ার গন্ধের সাথে ভাতের চনমনে গন্ধ পাওয়া যায়। রাহেলা হাতটা নাকের কাছে এনে শুঁকে। নোনার গন্ধে পেটের ভিতর খিদেটা যেন চাগাড় দেয়। 
   আমিনার কাছে গিয়ে বসে রাহেলা। আমিনা বোধহয় বেগুন পুড়িয়েছে, হাতে চটকাচ্ছে। খিদে পেটে পোড়া বেগুনের গন্ধটাও বেশ লাগে। ফাঁকে একবার ভাতটা নেড়ে নেয় আমিনা। শুকনা মরিচ চুলার আগুনে পুড়িয়ে মেশায় বেগুনের সাথে।
   নাকের কাছে হাত এনে শুঁকে রাহেলা। আছে, গন্ধটা এখনো আছে। ...সরিষার তেল থাকলে কয়েক ফোটা দিও। বেগুনের ভর্তার সাথে ভাল লাগে।
   আমিনা কিছু বলে না। রাহেলার দিকে একবার তাকিয়ে চুলার আগুনে লাকড়িটা আরেকটু ঠেলে দেয়। বিড়ালটা এসে লেজ উঁচু করে রাহেলার পিঠে গা ঘষে। আমিনা দিকে তাকিয়ে মৃদুস্বরে একবার মিউমিউ ডাকে। 
   ঘরে কি আদা রসুন আছে, আমিনা?
   আদা রসুন দিয়া কী করমু আমরা। এইসব লাগে বড়লোকি খানায়। আমিনার ভর্তা বানানো শেষ। দুই হাতে ন্যাকড়া নিয়ে ভাতের হাঁড়ি নামায়। 
   দুরো মরার বিলাই, রাহেলা বিড়ালটাকে ঝট্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। সারাদিন খালি শইল ঘষে!

   আজকে রাহেলা একটু আগেই মদিনার সাথে বের হয়েছিল। বিকালের মুখেই ফিরে। 
    নোনাটা যেমন ছিল আছে। মশলা যোগাড় করা হয়নি। তা মশলা যোগাড় করা যায় যখন তখন, বড় সমস্যা চালকুমড়ার পাতা। শীতকালে চালকুমড়া হয় না। আমিনা ফেরার আগে একবার বাজারটা ঘুরে আসবে, ভাবে রাহেলা। শীততো প্রায় শেষ হয়ে এল, যদি পাতা পাওয়া যায় । রাহেলার গন্ধ পেয়েই বোধহয়, বিড়ালটা ঝুপড়ি থেকে বের হয়ে আসে। মুখে কী বিড়ালটার? গন্ধে জায়গাটাও কেমন ম‘ ম‘ করছে না!
  পায়ে যেন কিশোরীর জোর, বিড়ালটাকে লাত্থি মারে রাহেলা। মুখের পুঁটলিটা পড়ে যায়, বিড়ালটা উড়ে গিয়ে ভাঙ্গা টিনের ড্রামটার উপর পড়ে। থপ করে একটা শব্দ হয়। রাহেলা পুঁটলিটা তুলে দেখে, না বিড়ালটা খুলেওনি। হয়তো রাহেলা সময়মত না এলে বিড়ালটার পেটেই যেত নোনার টুকরাটা। বিড়ালটার তেমন লাগেনি বোধহয়! ফের এসে রাহেলার পায়ে গা ঘষে আর উঁচু করে লেজাটা নাড়ায়। 
  মশলা কিছু জোগাড় হয়েছে, এখন চালকুমড়ার পাতা হলে হয়। আমিনার চোখ বাঁচিয়ে তাহলে নোনা ইলিশের টুকরাটা খেতে পারবে রাহেলা। অন্য শুঁটকির মত নোনা ইলিশ রোদে দেওয়া যায় না। গন্ধ মরে যায় রোদের তাপে। মাঝে মাঝে নোনা ইলিশের টুকরাটা বের করে শুঁকে দেখে রাহেলা, গন্ধটা ঠিক আছে কি-না। না, আছে। কী গন্ধ! আহা, এই না হলে নোনা। গন্ধেই গামলা গামলা ভাত খাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *