বেনসন বা জংলীফুলের গন্ধ ইসরাত জাহান

বড় রাস্তাটার ডান পাশ দিয়ে যে ছোট গলিটা শুরু হয়েছে, সেই গলির মুখে ‘খাই খাই’ রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টের শিক কাবাবের মাংসগুলো যখন ঝলসানোর অপেক্ষায়, তখনই এক গাঢ় দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বীথি এসে কলিংবেলে আঙুলটা রাখে। আজও দশ মিনিট দেরি। আসার পথে ঢাউস সাইজের কেটলিতে জ্বাল করা চাপাতার ঘ্রাণটা চায়ের তেষ্টা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। দীর্ঘশ্বাসের সাথে তেষ্টা; দুটোই মনকে বিষিয়ে তোলার জন্য পরিপূরক। তাজমহল রোডের এই গলিটায় একটু পরেই ভাতঘুমের রোদটা ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসবে। মুখরিত হবে গোটা পাড়াটা। শিশুদের হৈ-হুল্লোড়, ঘরে ফেরা মাইনে পাওয়া ভদ্রলোকদের গাড়ীর হর্ন বা
রিকশার টুংটাং শব্দের সাথে ডেভলপারদের সারাদিন নতুন দিগন্তে কেতন তৈরির শব্দমালা। এ পাড়ায় প্রতি সপ্তাহে দুইদিন আসে বীথি। দরজাটা খোলে অনির্বাণ। ঘরে ঢুকে কাঁধের ব্যাগটা ছোট টুলের উপর রেখে সোজা বাথরুমে চলে যায়, অনির্বাণের চোখের উষ্ণতাকে এড়িয়ে যাবার জন্য। আজও কথা শুনতে হবে, তারচেয়ে কিছু সময় পানি নিয়ে জলকেলি করাটা মন্দ না। দশ মিনিট পরে বের হয়ে ব্যাগ থেকে খাবারের বাটি দুটো আলাদা করে রাখে, যার দুই বাটির একটিতে খিচুড়ি অন্যটিতে ঝালঝাল ডিমভুনা।
–আজও দেরি তোমার ?
–কি করবো, রাস্তায় জ্যাম। ভালোমন্দ আনার কারণে একটু দেরি হয়ে গেলো।
–এরপরে দেরি করলে আমাকে অন্যচিন্তা করতে হবে।
এই কথা শুনতে শুনতে বীথি বড় বসার ঘর থেকে পা মাড়িয়ে ছোট ঘরটায় ঢুকে পড়ে। প্রতিদিন একই কথা, পুরোটা মুখস্থ। ছোট ঘরটা স্টুডিও। দুইপাশে দুটো ফোকাসিং লাইট, মাঝে হ্যালোজেন বাতি জ্বলছে। হ্যালোজেন বাতি বরাবর ছোট টুলটায় বসে পড়ে। আজ একটু দুর্বলও লাগছে। এতো ছোটাছুটি শরীর আর নিতে পারে না ইদানীং। সাথে অনির্বাণের কর্কশ ভাষায় আলাপন। যা কানে জ্বালা ধরায় বীথির। কিন্তু শুনতে মন চায়।
–বসে পড়লে কেন? তোমাকে সময় ধরে পে করা হয়। আমার লস করে কী লাভ তোমার?
–একটু জিরিয়ে নিই। আজ অফিসে খুবই চাপ গেল। সময়টা একেবারে পুশিয়ে দেবো সময় ধরে ধরে।
–তোমার সময় দিলে হবে না, আমারও তো সময় থাকতে হবে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও।
–আজও কি পুরোটা?
–এটা কেমন কথা? অর্ধেকটা করে রেখেছি, আজ পুরোটা তুলবো। যাও সব খুলে আসো। অনেকটা হতাশ হয়ে শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট, ঘামে ভেজা ব্রা, প্যান্টি একে একে খুলতে খুলতে অনির্বাণের দিকে আড়চোখে তাকায় বীথি। লোকটা কাপড় খোলার সময় কখন ফিরেও তাকায় না। ওইসময়টায় লাইটগুলোতে আলোর মায়জাল তৈরিতে ব্যস্ত থাকে, নারীর শরীরের মায়াজাল থেকে দৃষ্টি সরিয়ে। বীথির লোকটাকে অদ্ভুত লাগে। প্রায় তিনমাস ধরে এখানে আসে, কখনো চাউনিতে কামুকতা দেখেনি। অথচ রাস্তায় বের হলে কতশত কামুক চোখ প্রতিদিন গিলে খায় ওকে। বাসে উঠার সময় হেল্পারের তাড়াহুড়োর নোংরা ছোঁয়া। পাশের সিটের যাত্রীর আনমনে ভদ্র লেবাসযুক্ত ছোঁয়া। আগে প্রতিটি ক্ষণে এই ছোঁয়াছুঁয়ির কারণে অস্বস্তিতে কাটতো ওর পথঘাটের চলার সময়গুলো। একটা সময় সবকিছু পায়ে মাড়িয়ে চলতে শুরু করে। কারন ততদিনে বীথি বুঝে গেছে এতো অশুচিতা নিয়ে সমাজে চলা যাবে না। বেঁচে থাকতে হলে লজ্জা, অস্বস্তি, ভয়কে কাটিয়ে চলতে হবে। এই উপলব্ধিটা হয় স্বামীর বাস এক্সিডেন্টে পা দুটো কাটা পরার পরে। চার বছরের পুত্র আর বৃদ্ধ বাবার কাছে পঙ্গু স্বামীকে রেখে যখন কাজের সন্ধানে বিভিন্নজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় ওর। একটা সময় কাজ পায়, সিকিউরিটি গার্ডের। সারাজীবন শাড়ি, সেলোয়ার কামিজ আর বুকটাওড়না দিয়ে ঢেকে রাখা বিথীর পুরুষে পোশাক প্যান্ট, শার্ট আর বেল্ট পরতে অস্বস্তি লাগতো। বারবার মনে হতো ওর ৩৬” সাইজের বুকের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে। একটা সময় সেই লজ্জা কাটিয়ে সুন্দর করে সালাম দিয়ে অর্ভ্যথনা শিখে ফেলে চারটি পেটের আহারের তাগিদে। চাকরি বাঁচাতে হলে ওর এই ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। একদিন বীথির ডাক পরে সুপারভাইজারের ছোট রুমে। কাজের আলাপের সুত্রে শরীরিক আলাপ সেরে ফেলে সেই লম্পট মজিদ। তারপর থেকে নিজের শরীরের তাগিদে বা কিছুটা সুবিধার কারণে মজিদের সাথে সখ্য বাড়ে ওর। কারণ পা হারানো অক্ষম স্বামীর কাছে প্রাপ্তির ঝুড়ি দিনে দিনে শূন্য হচ্ছিলো। একদিন অনির্বাণ এসেছিলো বীথিদের অফিসে, কোনোএক কাজের প্রয়োজনে। ফেরার পথে কার্ড দিয়ে বলেছিলো দেখা করার জন্য। নতুন কাজের আশায় একদিন ফোন করে বীথি সেই অপরিচিত নম্বরে। বাসার ঠিকানা দিয়ে দেখা করতে বলে। কিছুটা সংকোচ নিয়ে দেখা করতে আসে তাজমহল রোডের এ বাড়িতে। সেখানেই এই প্রস্তাব পায় বীথি। সপ্তাহে দুদিন ন্যুড মডেল হয়ে বসতে হবে হ্যালোজেন বাতির নিচে। দুই ঘণ্টা করে। বিনিময় হাজার টাকা পাবে। দুইমাস হয়ে গেছে, হয়তো আরো একমাস আসতে হবে এখানে। তারপর এই বাড়তি ইনকামের পথটা বন্ধ হবে।
–আজ আপনার জন্য একটু খাবার এনেছি?
–কেন?–
একা একা থাকেন, একটু ভালো মন্দ খেতে তো মন চায় আপনার।
–সেটা আমি দোকান থেকে কিনে খেতে পারি, তোমার কষ্টের টাকা আমার জন্য খরচ না করলেও চলবে।
–ভাবলাম…
–বেশি ভেবো না, মন দিয়ে কাজ করো।
রেডি?
–একটু
… এবারে ঠিক আছে? পিয়ানোর সুর ভেসে বেড়ায় পুরো ঘরময়; সেই মুর্চ্ছনায় অনির্বাণ আঁকতে শুরু করে ওর বহুদিনে কাঙ্ক্ষিত পেইন্টিং ‘নিমগ্নতায় সুখ’।এই ছবিটি আঁকতে শুরু করেছিল বহুদিন আগে। ওর জন্য ন্যুড মডেল হতে রাজি হয়েছিল ওর তখকার প্রেমিকা কুমকুম। হঠাৎ একদিন বলা নেই কওয়া নেই কুমকুম হারিয়ে যায় ওর জীবন থেকে। কুমকুমের অনুরোধে অর্ধেক আঁকা ছবির পুরোটাই পুড়িয়ে ফেলে প্রেমিকার সামনে দাঁড়িয়ে। সেইরাত থেকেই অনির্বাণের ঘুমুতে কষ্ট হয়। বহুদিন একাএকা রাতের শহরে ঘুরেছে কুমকুমের সাদৃশ্যমাখা মুখের সন্ধানে। মাঝেমাঝে একটু মেলানো যায় এমন যাদের পেয়েছে, কেউ রাজি হয়নি। কত গালাগাল খেয়েছে এই ছবির মডেল খুঁজে বের করার জন্য। অবশেষে একদিন মতিঝিলের ব্যস্ত কর্পোরেট ব্যাংকের হেড অফিসে ঢোকার মুখে পেয়ে যায় সেই কাঙ্ক্ষিত মুখখানি। পুরোপুরি কুমকুমের মতো না হলেও মুখখানি তার থেকেও বেশ কমনীয়। লোভ সামলাতে পারে না। যেচেই কার্ডখানি এগিয়ে দেয় বীথির দিকে। সিকিউরিটি গার্ডের পোশাকে সৌন্দর্য প্রকাশ পাচ্ছিলো না তেমন। কিন্তু চোখ, থুতনীর আদরমাখা ভাঁজ,গালের টোল পুরোটাই অনির্বাণকে আকৃষ্ট করে।
–স্যার, একটু…
–কী দরকার?
–একটু ছোট কাজে যাবো।
–উফ, বলেছি না দুই ঘণ্টার ভেতরে একেবারে নড়বে না।
–স্যার, তা কি সম্ভব?
–যাও, তাড়াতাড়ি এসো। বীথি আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়। অনেকক্ষণ বসে থাকার কারণে পা দুটো অসাড় হয়ে যায়। তাইতো পায়ে কোনো সায় পায় না অনেকটা সময়। বাথরুম কাম টয়লেট থেকে বের হবার সময় আয়নায় নিজেকে দেখে বীথি। সুউচ্চ স্তন, লম্বা গ্রীবা, টানটান চিবুক। বেরিয়ে যাওয়া কণ্ঠহাড়। নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই কিছুটা সময় মুগ্ধ হয়ে যায়। রক্তমাংসে গড়া নারীর প্রতি কেন জানি এই পেইন্টার কোনো আর্কষণ অনুভব করে না। ব্যাপারটা ওকে বেশ ভাবায়। বেরিয়ে এসে দেখে অনির্বাণ সবকিছু গুটিয়ে ফেলেছে।
–আজ আর বসবেন না?
— না, ভালো লাগছে না।
–কেন, শরীর খারাপ?
–একটু জ্বর জ্বর লাগছে।কথাটা শুনেই বীথি কিছু না ভেবে কপালে হাত রাখে উষ্ণতা যাচাই করার জন্য। হঠাৎ কপালে হাত রাখায় অনির্বাণ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। বীথিও হাত সরিয়ে নিয়ে দ্রুততম সময়ে কাপড়টা পরে ফেলে।
— খাবারটা দেবো?
— কেন আনো এইসব। অভ্যাস খারাপ করছো…। দাও।
–চা চুলায় দেবো? আমিও একটু খাবো,
তাই…– দাও। চিনি ছাড়া।এই রান্নাঘরের সবকিছু এখন ওর নখদর্পণে। মাঝেমধ্যে নিজের হাতে গোছায়। ভালোলাগে ওর এই রান্না ঘরটা, সাথে পাগলাটে আঁকিয়েকেও। তার ভেতরটাকে জানতে মন চায়। কিন্তু ও জানে, তা ঠিক না। ও হলো ন্যাংটো মডেল। টাকার বিনিময় কাজ করে। এসব কাজে এসে মনের খোঁজখবর নেয়াটা বেমানান।দূরে দাঁড়িয়ে বীথিকে দেখে অনির্বাণ। মেয়েটা আস্তে আস্তে ঘরটায় দখল বসাচ্ছে। কাজ শেষে ফেরার পথে ঘরটা একটুআধটু গোছায় নিজের আগ্রহেই। বহুবার নিষেধ করেছে। শোনে না। মায়া লাগে মেয়েটাকে।
–স্যার, চা। কাল কি আসবো?
–কেন, কোনো সমস্যা?
–না, যদি বলেন, আসবো।
–ঠিক আছে, এসো। টাকাটা টেবিলের ম্যাটের নিচে চাপা দেয়া।টাকাটা নিয়ে বীথি বেরিয়ে পড়ে ব্যস্ত নগরে। ঘরে ফেরার তাড়ায়। অনির্বাণ বারান্দায় এসে অন্ধকারে বসে সিগারেটের ধোঁয়ায় আশ্রয় খোঁজে। নিজেকে নিয়ে ভাবে। ইদানিং বীথির উপর মনটা কেন যেন অধিকার দেখাতে চায়। অকারণেই বকতে মন চায়। মুখখানি মলিন করে অভিমানী চোখে তাকালে আদর করতে ইচ্ছে হয়। নিজেকে মনেমনে শাসায়- একজন ন্যুড মডেলের জন্য এতটা মমত্ববোধ থাকা তো ঠিক না! আগামীকাল এলে তাড়াতাড়ি কিছু স্ক্যাচ করে ছেড়ে দিতে হবে।মেয়েদের প্রতি তীব্র রাগ, বিদ্বেষ অনির্বাণকে সামনে এগুতে নিষেধ করে; সাথে বীথির পিছুটান। কিন্তু মন নামক বায়বীয় বস্তুটি সেই কোমল মুখের মায়ায় হারাতে চায়।আজ একটু তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বের হয় বীথি। মজিদকে চোখে ইশারায় বোঝায় বিশেষ সময়। তাই তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে। বিশেষ মানুষের জন্য বিশেষ সুবিধা সব জায়গায় সবসময়ই চলমান।অনেকক্ষণ ধরে কলিংবেল টিপে টিপে অনেকবার বিরক্ত করার পর অনির্বাণ ঘুম ঘুম লাল চোখ নিয়ে দরজা খোলে ।
–কী ব্যাপার আজ এতো তাড়াতাড়ি এসেছো?
–অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বের হলাম। তাই একেবারে সোজা এখানে চলে এলাম।
–তাহলে একটু বসো। আমার গোছাতে সময় লাগবে।
–চা বানাই, চা খাবেন?
–তা দিতে পারো।রান্নাঘরটা পুরোটাই এলোমেলো।আজ বুয়া আসেনি এ বাড়িতে। চায়ের ডেকচিতে চাপাতা, লেবুর খোসা, অর্ধেক খাওয়া কলা…। অনেকটা সময় নিয়ে আলোচনা চলেছে, তা ঘরের এই পরিবেশ দেখেই বোঝা যায়।চায়ের পানি চুলায় দিয়ে একটু উঁকিঝুঁকি দেয় পাশের ঘরে। দেখে পেইন্টার বিরক্ত হয়ে কার সাথে যেন কথা বলছে। বীথি তাকিয়ে থাকে নিঃসঙ্গ, পাগলাটে, অহংকারি কিন্তু শিশুমনের মানুষটার দিকে। চোখ পড়ার আগেই আবার চলে আসে রান্নাঘরে। একটু পরে দুই কাপ চা নিয়ে টেবিলে এসে অপেক্ষা করে। কিছুসময় পরে অনির্বাণ এসে বসে বীথির পাশের চেয়ারে।
–আজ একটু বেশি সময় থাকবে। তোমার কিছু স্ক্যাচ করে রেখে দেবো। তারপর আর আসতে হবে না।
–কেন? আপনার আঁকা শেষ?
–না–
তাহলে?
–বলেছি আসতে হবে না, মানে আসতে হবে না। আর আমার কাছে টাকা নেই। তোমাকে টাকা দিতে পারবো না। ছবিও বিক্রি হয় না অনেক দিন।
–টাকা দিতে হবে না। আমি আসবো।আমার ভালো লাগে এখানে আসতে।
–আমি চাই না, তুমি আর আসো।নিঃশব্দে চা টা শেষ করে বীথি ওঠে দাঁড়ায়। দুটো কাপ নিয়ে ধীরে ধীরে রান্নাঘরে চলে যায়। আজ এই ঘরটা সুন্দর করে গোছাতে হবে, আজই শেষদিন। এইসব ভাবতে ভাবতে, অনেকদিন পরে চোখ দুটো আর্দ্র হয় ওর। কতটা দিন শুষ্ক ছিলো এই চোখ দুটো। তাড়াতাড়ি চোখ মুছে। হঠাৎ অনুভব করে পেছনে একজন দাঁড়িয়ে আছে। তার গাঢ় নিঃশ্বাস ও ঘাড়ে একটু একটু লাগছে।এটা কি কল্পনা? না সত্যি?মাঝেমাঝে কল্পনাও সত্যি হয়ে যায়। বীথি অনির্বাণের উপস্থিতি অনুভব করে। কিন্তু পেছন ফিরে তাকায় না। কিছুসময় পরে কিছু না বলেই চলে যায়। সবকিছু গুছিয়ে বীথি বের হয়ে আসে রান্নাঘর থেকে। কিন্তু চোখ তুলে তাকিয়ে কথা বলতে পারে না। মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করে,
–এখন কি আঁকা শুরু করবেন?
–আজ আর আঁকবো না। তুমি চলে যাও। ফোন করলে এসো।
–ঠিক আছে।
–কিছু কি বলবে? মাথা নাড়িয়ে ‘না’ উত্তরকে বেছে নেয় বীথি। দরজার দিকে এগিয়ে মনেমনে নিজেকে বোঝাতে থাকে–‘কী বলব, আর কিছু বললেই বা শুনবে কেন লোকটা? কোনো দায় তো নেই দুজনের দুজনার প্রতি। টাকার বিনিময় কাজ করি। এখানে মনকে টেনে আনা উচিৎ না। আর বলতেই বা হবে কেন? বুঝেও তো নিতে পারে। শিল্পী মানুষ, নারীর শরীরের ভাঁজ আঁকতে পারে, মন বুঝতে পারে না?”
–বীথি…ডাকটা কেমন যেন লাগে, এতোটা মায়াভরা ডাক! দরজায় হাত রেখে হাতটা উঠিয়ে নেয় আনমনে। পেছনে তাকাতে ইচ্ছে করে না, তারপরও তাকায়। খোঁচাখোঁচা দাড়ি আর এলোমেলো লম্বা চুলের লোকটাকে দেখতে ইচ্ছে করে আরো একটিবার।
— বীথি, ভুল করলে পরে কিন্তু শুধরাতে পারবে না।
–ভুল না করলে, শুধরাবো কি করে।
–তাহলে এসো, ভুল করা শুরু করি দুজনে। আমার তুলি আজ তোমায় নিয়ে খেলবে…গলার কাছে দলাপাকানো কষ্টের দানাগুলো আস্তে আস্তে খুলতে শুরু করে অনির্বাণের। এতদিনের জমানো সব যন্ত্রণার অবসান ঘটাতে আশ্রয় নেয় বীথির শরীরের প্রতিটি লোমকূপের ভেতরে। আর বিথী অনেকদিন পর খুঁজে পায় ভালোবাসাময় স্পর্শ। সময় গড়িয়ে যায়। সন্ধ্যা নেমে আসে হাজার পঞ্চাশ স্কয়ার ফিটের এই বাড়িতে। অনির্বাণ আজ মনের আনন্দে তুলির আঁচড় দিয়ে এঁকে চলে ওর ‘নিমগ্নতার সুখ’। বীথির ধ্যান ভাঙে। নরম সুতির শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে বিদায় নেবার প্রস্তুতি নেয়। বিদায় নেবার আগে দুজন দুজনের পাশে থাকার অঙ্গীকার করে।একটু বেমানান হলেও, মাঝেমাঝে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা জ্বলন্ত বেনসন সিগারেটের সাথে জংলী ফুলের প্রেম হয়। পোড়খাওয়া সিগারেটের উষ্ণতাকে শুষে নিয়ে পাশে থেকে যায় অনেকটা সময়। ব্যস্ত নগরবাসী কখনো খোঁজও রাখে না। কেননা, এতোটা সময় কোথায় তাদের?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *