উপন্যাসটি মধ্যবিত্ত জীবনের চিরাচরিত রূপকে ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস।। মোঃ আমজাদ হোসাইন

বই মুল্যায়ন

বইয়ের নাম- আজ কোথাও বৃষ্টি হবে না

বইয়ের ধরণ- উপন্যাস

ঔপন্যাসিক – ইফতেখার হোছাইন নূর

রিভিউদাতা – মো: আমজাদ হোসাইন

বিষয়াদি- মধ্যবিত্ত জীবনের চিরাচরিত রূপকে ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস।

ভূমিকা- একসাথে একটি উপন্যাসে মধ্যবিত্ত পরিবারের রুপ,সাংসারিক টানাপোড়েন,ছেলেমেয়েদের পরিবারের প্রতি দায়ীত্ব,বাবার সন্তানের প্রতি আস্থা,মায়ের একবুক আশ্বাস সন্তানের প্রতি,ধর্মীয় অনুশাসন,রাজনৈতিক কার্যক্রম,হিন্দুধর্মের ভেদাভেদ ভুলে একসাথে হেসেখেলে জীবনযাপন,যুবকদের উদ্যোগে সমাজকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন এবং সচেতন সমাজ তৈরি করার প্রয়াস,নিখুঁত ভালোবাসার শুদ্ধ অনুভুতি ভাইয়ের প্রতি ভাইয়ের আস্থা,ভাইয়ের প্রতি বোনের ভালোবাসার প্রয়াস,বিদেশ গমণের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য সহ মোটকথা খুবই গোছালো একটি উপন্যাস “আজ কোথাও বৃষ্টি হবে না”।

উপন্যাসের সকল বিষয়াদির উপর ভিত্তি করে ছোটখাটো কিছু বিষয় তুলে ধরছি সকলের পানে-

মধ্যবিত্ত জীবন :- কিভাবে আমাদের জীবনে প্রতিনিয়ত ঘটে যায় ভুত অদ্ভূদ ঘটনাগুলো তারই রূপ বাস্তবসম্মত ভাবে পড়ে অনুভব করেছি বইয়ে।বাবা মা ভাইবোন,সংগ্রামী জীবন,জীবন যুদ্ধে জুতোর তলানী খোয়া মানুষের চিরাচরিত রূপ দেখেছি আমি।ভেবেছি কিভাবে সংগ্রামের সহিত ঠুকে ঠুকে জীবনের গতি বদলাতে হয়!
ধর্মীয় অনুশাসন :- কুরআন ও হাদীসের আলোকে জীবনযাপন এবং নিজেকে পরিশুদ্ধ করার নিয়ম কানুন সহসা উপন্যাসে দেখা যায় না।তবে এখানে বিভিন্ন হাদিস এবং তার ব্যাখ্যা সহ হিন্দু মুসলমান ভেদাভেদ ভুলে কিভাবে জীবনযাপন করতে হয় একসাথে,কিভাবে একে অন্যের বিপদে পাশে থাকতে হয় তারই রূপ দেখেছি উপন্যাসটিতে।
রাজনীতি:- হিন্দি তে রাজনীতির একটা নাম আছে “ঘাটিয়া রাজনীতি” অর্থাৎ নোংরা রাজনীতি।এখানে তার রূপ দেখেছি।আবার সত্যের পথে চলমান মানুষদের প্রতিচ্ছবিও পরিলক্ষিত হয়েছে।মানুষের পক্ষে মানুষ,বিপক্ষে মানুষ সব রূপই চিরায়ত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ :- আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাহসিকতা,বীরত্বগাঁথা,রাজাকারদের ধরপাকড়াও,আত্মসমর্পণ সবই রচিত হয়েছে উপন্যাসে।ছোটবেলায় নানা নানী যেভাবে গল্প শোনাতেন মুক্তিযুদ্ধের সেই স্মৃতিগুলোকে নাড়িয়ে দিয়েছে ভেতরকার লেখাগুলি।
সমাজসংস্কার:- আমাদের এই একবিংশ শতাব্দী এসেও যে যুবকরা টাকার পেছনে নয় বরং সমাজকে পরিশুদ্ধ,ভেজালমুক্ত,অন্যায় অপরাধমুক্ত রাখতে কতটা সোচ্চার তারই প্রয়াস ঘটেছে প্রতিটি পাতায় পাতায়।
ভালোবাসা এবং স্মৃতি:- মানুষ নাকি ভালোবাসার পাগল।কিন্তু ভালোবাসাকে ফুটিয়ে তোলার এত আবেগ,এত অস্ফুট বুলি আমি অন্তত কোথাও পড়েছি বা জেনেছি বলে জানি না
হয়তো সেভাবে জানাও হয় নি।তবে এতটুকু বুঝি ভালোবাসা কেবল হয়ে যায়,হয়ে যায়।এটা বর্ণনা কিংবা চিত্রায়ন অসম্ভব।
পরিবার:- সবাই আমরা কোনো না কোনো পরিবারে বড় হই।যা আমাদের শিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠান।কেউ সকল গুণে গুণান্বিত,কেউবা সকল দোষে।তবে এটুকু বলা যায় বাবামার কাছে সন্তান বরাবরই শ্রেষ্ঠ।আমারও পরিবার আছে ভাইবোন আছে।হাজার রকম খুনসুঁটি হয়।তবে তা যে এতসুন্দর করে ব্যাখ্যার দ্বারা ফুটিয়ে তোলা যায় তা জানতামনাহ।
বন্ধুত্ব:- আমারও বন্ধু আছে।ওই আকাশে থাকে একজন।বাকিরা এই ধরণীতলে।একটা আকাশী শার্ট আছে।যেটাতে একমাত্র তার চোখেই বেশি ভালো লাগতো। দোস্ত তোকে খুব ভালো মানাবে রে।জানি না লেখক কিভাবে নিজেকে ধরে রেখেছেন।কারণ আমার চোখে জল এসেছে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে।বন্ধু তুই ততোটাই ভালো থাক সর্বদা যতোটা ভালো থাকলে ভালোথাকারাও বড্ড বেশি ভালো থাকে।
ভাই:- শুন একশো টাকা হবে? না হলে সমস্যা নেই।তবে দিলে খুব উপকার হতো।এই দ্যাখ না পিয়ানোটা তে ময়লা ধরেছে।আচ্ছা তুই গান শুনবি? শোন আজকে রাতে আসতে একটু দেরি হবে। দয়া করে দরজায় টোকা দেয়ার সাথেসাথে দরজা খুলিস।শোন বাড়ির সমস্যা তো কি হইছে আমরা দুইভাইই সামলাবো। বাবামাকে জানানোর দরকার নেই।কে তোকে ডিস্টার্ব করে রে।বেটাকে এমন মেরেছি আর ডিস্টার্ব করবেনা।মেয়েটা বড্ড ভালো রে তোর সাথে খুব ভালো মানাবে।শোন না বোন যদি এবার ভালো রেজাল্ট করিস তবে তোকে পঞ্চাশটা কোণ আইসক্রিম কিনে দিবো।
আপুর জন্য বড্ড কস্ট হয় রে।বেচারি কত কস্ট করে সারাদিন।
এমনই হাজারো ভালাবাসাময় খুনসুঁটি বন্ধুত্বের বন্ধন,ছোটবোনের ভালোবাসার হাজারো রূপ,বড়বোনের দায়ীত্ব,মানুষের শেষ পরিণতি এবং আফসোস,ভাইয়ের এক আকাশ ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বাবার সন্তানের প্রতি আস্থা এবং আকুলতা,মায়ের হাজারো অপেক্ষার দীর্ঘশ্বাস,প্রতিবেশীর ভালোবাসাময় ব্যাবহার,সমাজকে দূষণমুক্ত রাখার প্রয়াস যুবকদের মধ্যে,ধর্মীয় অণুশাসন,রাজনৈতিক অপপ্রয়োগ,আইনের অপপ্রয়োগ এবং সঠিক প্রয়োগ যাবতীয় কথোপকতন নিয়ে বইটি নিঃসন্দেহে একটি শিক্ষণীয় বই।
ভাই, বন্ধু,ভালোবাসা সব লুকায়িত হয় কেবল চোখের সামনে।মনে তারা সর্বদা প্রকাশিত এক একটি ধ্রুবতারা। তারা জ্বলে, জ্বালায়, ভালোবাসে।
নিজের ইচ্ছা :- একজন “সাজু” হয়ে আছি এই ক্ষুদ্র জীবনে।একজন “মনা” হতে ইচ্ছে।একজন “মনা” হওয়াটা প্রত্যেকটা মানুষের কাম্য হওয়া উচিৎ বলে মনে করি।
উপন্যাসের প্রিয় অংশবিশেষ:-অঙ্গনা ঘোর লাগা সন্ধ্যাকে আড়াল করে গভীর আলিঙ্গনে আমার সকল দহনকে জড়িয়ে নেয়।আমি চোখ বন্ধ করে অনুভব করি,কোকড়া চুলের ভীষণ সুপুরুষ একজন যুবক চোখে মুখে তার ভূবন ভূলানো হাসি নিয়ে দূর থেকে লুকিয়ে চেয়ে আছে আমাদের দিকে।যুবকটি আমার সহোদর।যুবকটি আমার বন্ধু-আমার ভাই।আমার ভাঙ্গা বুক কেঁপে-কেঁপে জানান দেয় গহীনে লুকিয়ে থাকা কারও অস্থিত্ব।গহীন বাওয়া পাগলা-ঢল শত ধারায় ছলকে-ছলকে উঠতে চায় আমার গলায়,আমার আজন্ম শুস্ক চক্ষুযুগলে।চিৎকারে-চিৎকারে আমার অনন্তকালের জমিয়ে রাখা ধ্রুপদী কস্ট,যন্ত্রণা গোঙানির মতো সুর তুলে আছড়ে পড়তে চায় তুরাগের তির-তির করে বয়ে যাওয়া জলে,তেপান্তরের কাশবনে,আরও দূরে।আরও দূরে কোথাও!
চোখ এবং মন দুটো ভিজেছে।আমারও একজন বড় ভাই আছে,বড়বোন আছে, ছোটবোন আছে।আর অধিকাংশ কাহিনী মিলে গেছে।ভবিষ্যৎ এ আরো হয়তো ঘটবে।

পাঠক প্রতিক্রিয়া-আজ এখানে বৃষ্টি হয়েছে।লোনাজলের বৃষ্টি।যে বৃষ্টিতে বুক ভিজে,চোখ ভিজে আর মনে মায়ারা দোলা দিয়ে যায়।
সর্বদা সকলে বই পড়ুন,বইয়ের সাথে থাকুন আর বইকে ভালোবাসুন।

One thought on “উপন্যাসটি মধ্যবিত্ত জীবনের চিরাচরিত রূপকে ফুটিয়ে তোলার প্রয়াস।। মোঃ আমজাদ হোসাইন

  • এপ্রিল ৬, ২০২০ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ
    Permalink

    Really wanted to stress I am just relieved I came onto your site.

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *