কবিতা ।। ইকবাল হাসান।। ফেব্রুয়ারী কবিতা উৎসব সংখ্যা

বিড়াল

আমার শয্যাপাশে যে ঘুমাতো একদা
মা তাকে বৌমা বলে ডাকতেন।
ডাকের ভেতর তুলতুলে একটি বিড়াল
বসে থাকতো। সকালে বৌমা, দুপুরে বৌমা,
কারণে অকারণে রাত দুপুরেও বৌমা…
এখন আমার মা-ও নেই, তাঁর বৌমাও নেই
অদৃশ্য ছায়ার মতো বহুদূরে তাঁরা
তুলতুলে বিড়ালের মতো এখন আমার
শয্যাপাশে শুয়ে থাকে নির্লিপ্ত স্মৃতিরা।

ক্ষয়

চোখ বুঝলেই প্রেতের নৃত্য
চোখ বুঝলেই ভয়
চোখ বুঝলেই দহনজ্বালা
চোখ বুঝলেই ক্ষয়
ক্ষয় হতে হতে মানুষটা এখন
মৃত কঙ্কাল বেশে
যৌবনটুকু শুষে নিয়েছিল
মানুষেরা অবশেষে
অবশেষে তার রইলো না আর
নিজস্ব বলে কোনও কিছু
মরিচিকা হয়ে স্মৃতিরা এখন
ধাওয়া করে পিছুপিছু
পিছু ধাওয়া করে ভুত ও প্রেতেরা
পিছু ধাওয়া করে জঞ্জাল
পিছু ধাওয়া করে অশুভ অসুর
মননের কঙ্কাল ।

জ্বর

এমন মরার জ্বর- ধারে কাছে কেউ আর আসে না এখন
জলপট্টি কে দেবে? কার এমন ঠ্যাকা? কে দেখবে
আমার জ্বর থার্মোমিটারে? বাইরে বৃষ্টি খুব, যেন কেউ
শ্রাবণ দিনের কথা বাজাচ্ছে গিটারে, ভেতরে গরমে
পুড়ে যায় দেহ! বৃষ্টিতে বাড়ি ভিজে একাকার, বিদ্যুতের
তারে কাক নিঃসঙ্গ একাকী, কাকে ডাকি আমি,
কে এসে দাঁড়াবে পাশে? কাকে পাবো অসময়ে ঘুম-টেলিফোনে?
চার্জ শেষ! লোডশেডিং সহসাই গিলে খেলো পাড়া
আমার কোথাও কেউ নেই, অনন্তের অন্ধকার ছাড়া।

বিষাদের গাঙচিল

১.
আকাশের দিকে যদি কভু হাত রাখো
উড়ে যাবে দূরে বিষাদের গাঙচিল
একটি হৃদয় আরেক হৃদয়ে মিশে
ভালোবাসা হবে বেদনায় ঘননীল।
২.
চোখের পলকে তিমির আলোকে যদি
ডাহুকের ডাকে জেগে ওঠে কোনো ভোর
তোমার ছায়ার গভীরে প্রথিত নদী
উথাল পাতাল বিষাদের করিডোর।
৩.
স্বাগত জানাবে বোধের দরোজা থেকে
ধরণীর বুকে জেগে থাকা মহাকাল
তুমি কি তখনো গভীর নিশীথে একা
উড়ে যাবে দূরে বিষাদের গাঙচিল।


গ্লুকোমা

একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখি শুধুই কুয়াশা
জানি- বাংলাদেশে এখন হেমন্ত, এরপর শীত
সেই কবে থেকে এখানে বাঘের মতো বরফের থাবা
মাঝখানে মাধবীর হাত ধরে সামার এসেই বলে যাই।
শেষ অঘ্রাণে চলে গিয়েছিল বুঝি চোখের পলকে
কিছুই হ’ল না দ্যাখা, কোথায় হারালো! এখন সহসা
কুয়াশা নেমেছে চোখে, সাথে কিছু অনিবার্য মেঘ
বয়স ষাটের কাছে এসে আজ যেন থমকে দাঁড়ালো।
কিছুই হ’ল না দ্যাখা এই রুপ রস গন্ধ ভরা পৃথিবীর-
এরই মধ্যে দৃষ্টিটুকু কেড়ে নিল মেঘ আর হেমন্ত-কুয়াশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *