মোহাম্মদ নূরুল হুদা’র বিজয়ের কবিতা
যদি তুমি স্বয়ং স্বাধীন
যেমন স্বাধীন এই
স্বতঃশ্চল মহাবিশ্ব
তেমন স্বাধীন তার
ঘূর্ণ্যমান অণুপরমাণু;
কেবল স্বাধীন নয়
নিজে যে ভেবেছে নিঃস্ব
নির্জীব পাথুরে শিব,
অবিচল স্থাণু।
স্বাধীনতা নিজ পায়ে নিজেই দাঁড়ানো,
ইচ্ছেমতো সুখে-দুখে দুবাহু বাড়ানো;
অন্যকে পেষণ করে শোষণে তোষণে
স্বাধীনতা নয় নিজ সম্ভ্রম হারানো।
আত্মরক্ষা সুনিশ্চিত যদি,
তাহলে অন্যকে
রক্ষা করো; রক্ষা করো
ভদ্র বা বন্যকে;
মানুষ, তুমিও তবে
স্ব-নির্ভর হও;
পরনির্ভর যদি হে,
তুমি তবে
কখনো স্বাধীন নও;
কখনো স্বাধীন নয়
পরগাছা-লতা,
বিশাল বৃক্ষের বুকে
নিয়েছে যে আশ্রয় অযথা।
ফুটেছো নিজেই যদি
লতাপাতাঘাস
আপন মাটির মূলে,
নও তুমি
কারো ক্রীতদাস।
স্বাধীনতা
নিজের নিয়ম;
স্বাধীন উত্তম জন;
অধীন অধম।
মুহূর্তের এ জীবনে
যদি তুমি মুহূর্তে স্বাধীন –
তাহলে স্বাধীন তুমি
দিনরাত্রিদিন;
স্বয়ংস্বাধীন তুমি
অনন্তেরও নও পরাধীন।
বাঙালির জন্মতিথি
তোমাদের হাড়গুলো জোসনারাতে উড়ে যাওয়া সবুজ কবুতর,
সুদূর ঝরনার জলে স্বপ্ন-ছাওয়া ঘাসের সবুজ;
তোমাদের হাড়গুলো অন্তহীন স্রোতস্বিনী, সুরের নির্ঝর
একতারা হাতে এক বাউলের মনোজ গম্বুজ;
তোমাদের হাড়গুলো বাংলার সীমানা-ডিঙানো
ক্রমশ বর্ধিষ্ণু এক হরিৎ বাগান
কারবাইন তাক-করা বেপরোয়া সৈনিকের গান;
তোমাদের হাড়গুলো বাংলার হৃৎপিন্ডে অবিনাশী ঝড়;
বাঙালির জন্মতিথি, রক্তে লেখা ষোল ডিসেম্বর ।
আমরা তামাটে জাতি
রোদ্দুরে নিয়েছি আর বৃষ্টিতে বেড়েছি
সহস্র শতাব্দী দিয়ে নিজেকে গড়েছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।
আগমনী স্মৃতি হয়ে লেগে আছে আঠালো জীবন
আমাদের জন্মলগ্ন জাতিস্বর পায়
যৌবন-ঘুঙুর হয়ে যায় বেজে যায়
ব্রহ্মাণ্ডের মতো এক স্বয়ম্ভু স্বপন-
সব স্মৃতি সব ধ্বনি একাঙ্গে পুষেছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।
কেউ কেউ তূণধারী, কেউ কেউ বেহালাবাদক
কারো হাতে একতারা কারো হাতে ধারালো ফলক
অনন্ত সময় জুড়ে জমিজমা জুড়ে
আমরা তো উৎসবে মেতেছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।
সমুদ্রের তলরূপী, গুহারূপী, মাতৃগর্ভরূপী
হৃদয়ের স্বপ্নশয্যা ছেড়ে
সঙ্গিন-সদৃশ সকল লাঙল উঁচিয়ে
মার্চ পাস্ট করতে করতে আমরা এসেছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।
এই আসা এই গতিভাষা
এ পথে রচিত হলো আমাদের সব ভালোবাসা।
ভালোবাসা জোসনা রাতে অশ্রান্ত বর্ষণ
ভালোবাসা তীব্র তাপে ভুবন-কর্ষণ
ভালোবেসে জীবনকে আনগ্ন চেয়েছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।
রাজধর্ম পিছে ফেলে, পিছে ফেলে গোত্রের আরতি
লোকধর্মে লোকসঙ্ঘে সুদীক্ষা নিয়েছি
আমরা তামাটে জাতি, আমরা এসেছি।