বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে নিবেদিত কবিতা সংখ্যা

বিশেষ সংখ্যাটির দায়িত্বে ছিলেন কবি ফারুক মাহমুদ

রক্তের পতাকা
আবুবকর সিদ্দিক

মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠত্ব আমার কবিতায়, উপমায়
অলঙ্কার পরিমণ্ডিত চেতনা অধিকার খাদ্য বস্ত্র
শিক্ষা বসবাসের সঠিক আহ্বান
দলমত নির্বিশেষে মানুষের অধিকার আদায়ে;
শােষণের বিরুদ্ধে তুলি হাতিয়ার
কামানের শব্দে জেগে উঠি;
চেতনাকে পুঁজি করে আমি ছুটে যাই
রণাঙ্গনে এ মাটিকে বুকে ধরে সহসা শপথে
আমি দীপ্ত, স্বাধীনতার জন্য নতজানু।

দস্যুরা এখনাে সােচ্চার
রুখে তাদের উদ্ধত খণ্ডর
‘জয় বাংলা জয় বাংলা’ বলে
শক্ত হাতে ধরাে রক্তের পতাকা।

টুঙ্গিপাড়া থেকে ফিরে
মোহাম্মদ রফিক

আদিস্বর, কষ্ঠের নির্ঘোষ;
থরহরি কম্পন আবর্তে
আসমুদ্রহিমাচল;

খসে পড়ে মাটি থেকে মাটি
জং ধরা পাথরের খাঁজ উপড়ে দীর্ঘ প্রতীক্ষায়
বিরস চাউড়

চতুর্দিকে আগুন আগুন
কে দেখেছে এমন বিস্ময়ে
পুস্পরথ

ধ্বংসপ্রায় জন্ম জন্মান্তর
অভ্রভেদী মৃত্যু উদযাপন,

একটি কষ্ট আদিম অব্যয়
একটি দেশ বাহুতে
ঢেউয়ে ভাসমান।

নীরব নিস্তব্ধ নিরাকার
বজ্ৰহিম অস্থির গােঙায়
মাটিচাপা পড়ে,

সে কাঁদনে অশ্রু বয়ে নামে
হিজলের পাতায় পাতায়
ধৈর্য যার নাম, যুদ্ধে যুদ্ধে
ফের বালুমাটির গভীরে
কে ডাকে প্রলয়,

এবারের সংগ্রাম মুক্তির
আলােতে-হাওয়ার ক্ষয়ে ক্ষয়ে
হবে যে অক্ষয়!

সেই কণ্ঠ
মহাদেব সাহা

বঙ্গদেশ রঙ ভাসছে দেখি তার রক্তমাখা বুক
যেখানে গােলাপ ফোটে সেখানেই মুজিবের মুখ;
নদীর কল্লোলে শুনি অবিরাম সেই কণ্ঠস্বর
দশদিক সে আছে ছন্দময় দশটি অক্ষর,
অন্ধকারে তার হতে ঘরে ঘরে জ্বলে সন্ধ্যাদীপ
যেখানে মুক্তিযুদ্ধ সেখানেই আছেন মুজিব
এই বাংলা রক্তে ভাসে, রক্তময় ভােরের আকাশ
বাংলার হৃদয় জুড়ে তরে সেই দীপ্ত ইতিহাস
যেখানে শিশুর হাসি, যেখানে শিশুর পদতলে
সেখানেই তার ছায়া, সেখানে মুজিব কথা বলে
যখনই বাংলায় নামে অমানিশা, ছিন্ন বস্তি মানুষের ঘর
তখনই দাঁড়ান এসে সেইখানে শেখ মুজিবুর।

সাতই মার্চ একাত্তর: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য
সানাউল হক খান

রমনার মাঠ: ইতস্তত গরু, পথচারী হাঁটাহাঁটি
শর্টকাট এপারে-ওপারে, রবিবারে ঘােড়দৌড় আহামরি!
এরই মধ্যে সাহেব সুবারা খোঁজে সকাল বিকেলে এসে
দূরে ছোঁড়া অন্বিষ্ট সুগােল বস্তু-সবুজ শেষের ঘাঁটি
শহরের ফুসফুস, আয়ুব উদ্যান যেখানে অঘরী
ঘরের উঠোন নিকানাে সবুজ রুমাল-ওড়ানাে কেশে
বিদেশিনী আনন্দ ফড়িং যেন, দুর্বাঘাস মাটি
মাতৃক বিভূতি, যেখানে সায়াহ্ন হীনস্বাস্থ্য হাতছড়ি।
সেই মাঠে শুনি বজ্রকণ্ঠ, কী ঘােষণা, বীজ হলাে বােনা
অকাল বৈশাখী সেকি, হাতে-হাতে উচু যষ্টি সমস্বর,
বাংলার গৃহ হলাে দুর্গের প্রতীক, বাংলার মন
হলাে সিঁন্দুর ঈশান, হারানাে সময়ে সূর্য মেঘসোনা,
সন্ত্রাসের প্রান্তিক প্রহরে জ্যোতির্ময় তুমি শক্তিধর;
তারপর দৃশ্যান্তর মুখের সমগ্র জনগণ।

বিপ্লবের ঘণ্টাধ্বনি অবিস্মরণীয় ঝড়-পূর্বাভাষ
কে সে বন্ধুজন শব্দের সম্ভার যিনি বঙ্গোপসাগর,
অতঃপর একাত্ম সঙ্গীত, যৌথশ্রম, ফিরে-পাওয়া দেশ
ওষ্ঠলগ্ন চুমুগুলাে স্বদেশের ইচ্ছামূর্তি মধুমাস
কোথায় মৌচাক─ধড়িবাজ হলাহলে ক্ষুব্ধ চরাচর,
বস্তু কি শবের মুখবন্ধ, কাফন কি কৌপন বিশেষ,
আয় মৃত্যু জোয়ারভাটার দোলা, সপ্তডিঙা মধুকর
বর্বর মার্কিনী ধোকা বাঁচি-কি বাঁচি না দ্বন্দ্ব অবশেষে।
মরণার্থী কালােত্তর, হে ঈশ্বর আল্লা, জীবন প্রহরী
খড়ের আগুন হলাে পৌষের আগ্রহ, নক্ষত্রের আলাে
মুক্তিসেনা চিতার শরীর, বাংলার ন’মাসী উন্মেষ
কখনাে কাতর; অকাতর রক্তক্ষরা ধাবমান তরী,
অশৌচ আতুরঘরে সর্ষেঝাঁক, রুদ্ধদ্বার ছায়াকালাে
সেখানে আমার জন্ম-কী আনন্দ স্বাধীন বাংলাদেশ।

পিতার উদ্দেশে
নাসির আহমেদ

যতই মােছাও, এই রক্তচিহ্ন কিন্তু মুছবে না!
পিতৃহত্যা ঘাতক-জাতক ঘৃণ্য ছেলের কলঙ্ক তাের
কোনােদিন ঘুচবে না।
এই রক্তের প্রতীক যেন অনাদি অনন্তকাল
কৃষ্ণচূড়া কিংবা জবাফুল
নদীর জোয়ার কিংবা শিশিরে মুছবে তুমি
এখন খুনের চিহ্ন! এ ধারণা ভুল!

হিংস ঘাতক! তােকে ঘৃণা দিচ্ছে শ্রাবণের অশ্রুময়ী আকাশ এবং
অভিশাপ তােকে দেবে চিরকাল
একাত্তরে জ্বলে ওঠা বিদ্রোহী বাংলার মতাে
এদেশ ঘৃণায়-শােকে জ্বলবে মহাকাল।
এমন ঘৃণার পরও মন থেকে মুছবে না মহান পিতার শােক
আর কোনােদিন
একটি জাতির জন্ম এবং যে স্বাধীনতা
সবকিছুতেই তার জনকের ঋণ।

ক্ষমায় কাতর তিনি, তাঁকেই করুণ স্বরে ডেকে বলি: পিতা!
কই সে জাতি আজ! তুমি দিয়েছিলে, ধরে রাখতে পারিনি
ঘাতকেরা পােড়াচ্ছে তােমার প্রিয় সংবিধান, এই দেশ
যেন এক অগ্নিদদ্ধ ভয়াবহ চিতা!
পিতা আবার ফিরিয়ে দাও সেই সে চেতনা
একাত্তরের সেই বজ্রকণ্ঠের তাপে এই দুঃসময়ে
গৌরবের সে জাতি হয়ে উঠি
একাত্তরের সেই বজ্রকণ্ঠের তাপে এই দুঃসময়ে
বাঙালির ঐক্যে যেন আবার খইয়ের মতাে ফুটি।

বঙ্গবন্ধু তুমি তো আছোই
ফারুক নওয়াজ

নিশিতে প্রভাতে দুপুরে বিকেলে ধূসর গোধূলি-সাঁঝে…
তুমি আছো এই জাতির হৃদয়ে, বুকের প্রতিটি ভাঁজে।
তুমি আছো মায়া-মমতা জড়ানো ভোরের বাতাসে মিশে…
বঙ্গবন্ধু… তুমি আছো রোজ দোয়েলের মধুশিসে।

প্রতি প্রত্যুষে যখন সূর্য আঁধার তাড়িয়ে হাসে…
যখন দূরের ডাহুক-মেয়ের মায়াডাক ভেসে আসে…
যখন সবুজ ঘাসের চাদরে শিশিরের ঝিকিমিকি…
বঙ্গবন্ধু… তখন তোমাকে খুঁজে পায় দেশ ঠিকই!

শারদনিশীথে যখন গোপনে শুভ্র শেফালি ফোটে…
খোঁপাটিতে গেঁথে দোপাটি যখন চাষির বালিকা ছোটে…
তিন্তিড়ি বনে যখন দুপুরে হাওয়া নাচে ঝিনিঝিনি…
বঙ্গবন্ধু… তখন তোমাকে নতুন অহমে চিনি।

এই পতাকাতে সবুজে ও লালে, পাহাড়ের নির্ঝরে…
ওই দূরবনে ছায়া-নির্জনে, নদীর কলস্বরে…
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া হয়ে গোটা দেশজুড়ে তুমি…
বঙ্গবন্ধু… তুমি স্বাধীনতা, তুমিই স্বদেশভূমি!

রাতে ফোটা ফুল মাধবীলতার মেদুর গন্ধে তুমি…
দেশের কবিতা, লোকজ ছড়ার ছন্দে-ছন্দে তুমি…
শিল্পির ছবি, কাহিনিকারের গল্পকথাতে তুমি…
শোক-সঙ্গীতে, লোকের মুখেতে কল্পকথাতে তুমি…

নিশি-ঝিল্লির ঝিনিকে-ঝিনিকে, জোনাকি-আলোতে তুমি…
বীর বাঙালির শুভ-অন্তরে … সকল ভালোতে তুমি!
বঙ্গবন্ধু… তুমি তো আছোই আমাদের কাছাকাছি…
তুমি আছো বলে জগতে আমরা মাথা তুলে বেঁচে আছি


অবিস্মরণ
অঞ্জনা সাহা

একটি উদাত্ত কণ্ঠের নির্ঘোষ আহ্বানে
সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের মতাে জেগেছিল
বাংলার কাদা-মাটি-জলে সিক্ত জনতার উদ্বিগ্ন প্রাণ;
তারপর বারুদের গন্ধ, অজস্র রক্তের বন্যা,
শকুনের উড়াউড়ি, আর সেই বীভৎস দৃশ্য-ভুলিনি কিছুই;
আমরা জানি সেই রক্ত-লেখা সূর্যের কথা।

একদিন রাতের আঁধারে ঘৃণিত পশুর মতাে
সন্তর্পণে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলাে ঘাতকের দল,
ক্লীব-কুটিল কিছু তস্করের ছুড়ে দেয়া একঝাক কঠিন বুলেটে
ঝাঝরা হয়ে গেল দুর্বিনীত বঙ্গের কৃষকের সুবিশাল বুক।
পশুদের কুৎসিত অট্টহাসি শুনে যুথবদ্ধ পাখিরাও স্তব্ধ হয়ে গেল।
কাকদের ভয়ার্ত চিকারও থেমে গেল শূন্যে অকস্মাৎ
বিষন্ন বাতাসে মিশে গেল মানুষের হাহাকার, নিঃশব্দ ক্রন্দন।
শুধু আমাদের পতাকার রক্তিম সূর্যের বুকে
চিরস্থায়ী হয়ে রইলাে পবিত্র রক্তের সবটুকু ধারা।

আজ অতি সন্তর্পণে অস্পৃশ্য বস্তুর মতাে তার নাম
চেপে যায় কতিপয় অতৃপ্ত মানুষ। ওরা কি জানে না
অদৃশ্য বাঁধনে একসূত্রে যে নাম রয়েছে গাঁথা।
একাত্ম মানুষের বুকের পাঁজরে,
সেই নাম মুছে যেতে পারে না কখনও ইতিহাস কখনও;
ইতিহাস কখনও কি ধুয়ে মুছে মিথ্যে হয়ে যায় একেবারে?
সমুদ্রের গর্জমান ঢেউয়ে ঢেউয়ে স্বপ্ন তার ফিরে ফিরে আসে,
ফেনার মুকুট প’রে ফিরে আসে, কথা বলে;
সুবৰ্ণ বৃক্ষের কানে কানে বলে যায় ঋজু সেই স্বপ্নের কথা।

তিনি
গোলাম কিবরিয়া পিনু

বিশাল বিশাল অমসৃণ পাথরের চাঁইয়ের মধ্যে পড়ে গিয়ে
আমরা যখন হাঁসফাঁস করছিলাম──আর তখনই
তিনি হাতে তুলে নিলেন
পাথরকাটার হাতিয়ার,
পাথর কাটতে কাটতে
কী-এক অন্ধকারময় প্রস্তরযুগের অবসান ঘটিয়ে
আমাদের অতীতের ভূগোল পুনর্গঠন করে──
আমাদের পুননির্মিত করলেন,
আমাদের নিজস্ব সভ্যতায়!
বাতাস থাকার পরও──
সেই বাতাসে আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না,
তিনি যখন আপন শক্তিতে নিঃশ্বাস নিলেন
আর তখনই বহমান বাতাস আমাদের হয়ে গেল।
জল থাকার পরও──
সেই জলে আমরা সাঁতার কাটতে পারছিলাম না,
তিনি যখন আপন শক্তিতে সাঁতার কাটলেন
আর তখনই উথালপাথাল জল আমাদের হয়ে গেল।
কালো গহ্বর ও কালো সমুদ্রে যে জমি হারিয়ে যাচ্ছিল
তা শক্ত হাতে টেনে তুলে নিয়ে
আমাদের ফিরিয়ে দিলেন।
শূন্য ও নিরাকারের ভেতর──
পলিমাটিতে বপন করলেন
অস্তিত্বের বীজ──স্বপ্নের বীজ,
আর তখন থেকেই আমাদের
ফল ও ফসল উৎপাদন শুরু হলো!
তিনি তাঁর পুরো জীবন উৎসর্গ করে──চূড়ান্ত করলেন
বাংলাদেশের জন্ম ও সম্ভাবনা,
তার পর থেকে আমাদের জীবন প্রসারিত হলো──পরিব্যাপ্ত হলো!

আঠারো মিনিটের মহাকাব্য
মোজাম্মেল হক নিয়োগী

ধূমকেতুর মতোন কবি এলেন মঞ্চে
অকস্মাৎ কেঁপে ওঠে মাটি; উন্মত্ত তরঙ্গ সৃষ্টি হয় ইথারে
কেঁপে ওঠে মেঘহীন মুক্ত নীলাকাশ
মহাকাব্যের স্তবক ক্রমে উচ্চারিত হতে থাকে
বজ্রের মতো গুরুগম্ভীর নিনাদে
লৌহ-মানব স্বাধীনতার মহাকবির কণ্ঠে। 

স্তম্ভিত হয়ে যায় পৃথিবী—কবির কণ্ঠস্বর শুনে।
পৃথিবীর মানুষ এমন কণ্ঠস্বর কি শুনেছে কখনো?
এমন অজেয় বাণীর মহাকাব্য
পাঠ কি করেছে কোনো কবি?
যে কাব্যকথায় জনসমুদ্র উত্তাল কল্লোলের ছোটে
বক্ষ ফুলিয়ে উন্নত শিরে নির্ভীক উচ্ছলতায়
লাল-সবুজের ধ্বজা উত্থিত হাতে নিয়ে ছোটে
মৃত্যু-ভয়কে অগ্রাহ্য করে
স্বাধীনতার স্বপ্নে আত্মদানের উন্মুক্ত মাঠে।

সাত কোটি মানুষের শোণিত-প্রবাহ টগবগ করে ফুটে
রক্তমাংসের প্রতিটি শরীর পরিণত হয় বারুদে
মুখে মুখে উচ্চারিত হতে থাকে স্বাধীনতা
আমাদের স্বাধীনতা।

তিনি আবৃত্তি করেন মহাকাব্যের বাণী—
বাতলে দেন রণকৌশল‒‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো’
উন্নত বক্ষে পরিয়ে দেন সাহসিকতার বর্ম
‘… কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না
এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’
কণ্ঠে জড়িয়ে দেন অবিনশ^র অগ্নিধ্বনি ‘জয় বাংলা’
পৃথিবীর বুকে অঙ্কন করেন একটি নতুন মানচিত্র
তখন…
পতপত করে ওড়ে লাল-সবুজের পতাকা
উদ্বেলিত জনতার হাতে। 

মহাসাগরের প্রমত্ত তরঙ্গের মতো দীপ্র-ক্ষিপ্র পদবিক্ষেপে
বাঁধভাঙা প্রমত্ত জোয়ার হয়ে ছন্দে ছন্দে এগিয়ে যায় জনতা
প্রান্তর থেকে প্রান্তর কাঁপিয়ে স্বাধীনতার অদম্য নেশায়
মহাকবির স্বাধীনতার ডাকে।

তারপর…
‘আমার সোনার বাংলা’আবহ সংগীতের মূর্ছনায়
জেগে ওঠে একটি জাতি, একটি দেশ—বাংলাদেশ। 

আঠারো মিনিটে দরাজ কণ্ঠে মহাকবি পাঠ করলেন
একটি মহাকাব্য‒বাংলাদেশের জন্মের ইশতেহার।

শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি পিতা
নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর

এক অজাত দিনের কথা খুব করে মনে পড়ে আমার।
আরও মনে পড়ে, কত কত বার সুতীব্র চিৎকারে
আমার জন্মের ঘোষণা দিতে চেয়েছি আমি!
কিন্তু তখনও আমার জন্ম হয় নি।
তখনও আমার পিতা ছিল না, কেবল ছিল এক দুখিনী মা─ রাক্ষসের খাঁচায় বন্দী─ আমাদের মাতৃভূমি।
আমি মাকে বলেছিলাম, আমাকে তুমি শীঘ্রই জন্ম দাও;
আমি মুক্ত করব তোমায়, তোমার সকল দুঃখ ঘুঁচিয়ে দেব, জননী আমার!
মা আমার, মলিন মুখে হেসে বলেছিল, আমি তোর পিতার প্রতীক্ষায় আছি।
আমি তখনও জানতাম না, একটি জাতির জন্মের জন্য একজন পিতা থাকতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *